কিষান ক্রেডিট কার্ড পাননি জেলার বহু চাষিই
ল্প সুদে ব্যাঙ্ক ঋণ-সহ চাষিদের নানা সরকারি সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রায় এক দশকেরও আগে চালু হয়েছিল কিষান ক্রেডিট কার্ড পরিষেবা। কিন্তু বর্ধমান জেলায় বেশির ভাগ চাষির কাছেই এখনও পৌঁছয়নি এই কার্ড। এমনকি অনেকে এই কার্ডের নামও জানেন না।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫-০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী জেলায় মোট ৪ লক্ষ ৭০ হাজার চাষি পরিবার ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কৃষি দফতরের হিসেব অনুসারে চলতি আর্থিক বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার চাষি পরিবার এই কার্ড পেয়েছে। ২০১১-১২ এবং ২০১২-১৩ এই দুই আর্থিক বছরেই মোট ৭০ হাজার করে নতুন কার্ড দেওয়া হয়েছিল। চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার কার্ড দেওয়া হয়েছে। জেলার এক কৃষি কর্তার কথায়, “গত পাঁচ-ছ’বছরে জেলার জনসংখ্যা প্রচুর বেড়েছে। বহু যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী চাষিদের কাছে কিষান ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দেওয়া যায়নি।”
—নিজস্ব চিত্র।
কিষান ক্রেডিট কার্ডের বিষয়ে জেলার অনেক চাষিই ওয়াকিবহাল নন। কালনা ১ ব্লকের চাষি দুবরাজ টুডু বলেন, “চাষের প্রয়োজনে টাকা লাগলে আমি স্থানীয় মহাজনের কাছে চড়া সুদে টাকা ধার নিই। কিষান ক্রেডিট কার্ডের কথা শুনিনি।” মেমারির বোহার ২ পঞ্চায়েত এলাকার চাষি রবীন ঘোষ বলেন, “যে কোনও ফসলের মরসুমে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেখিয়ে যে সহজ সুদে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায় সেটা জানতাম না।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কার্ড পেতে গেলে ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার দফতরে গিয়ে নাম, ঠিকানা-সহ নানা তথ্য জানিয়ে চাষিকে একটি ফর্ম ভরতে হয়। সঙ্গে জমা দিতে হয় আবেদনকারীর ছবি, পরিচয়পত্র এবং জমির মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণপত্র। পঞ্চায়েত এলাকায় শিবির করেও চাষিদের থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। পরে ওই আবেদনপত্রগুলি আবেদনকারীর কাছাকাছি ব্যাঙ্কে জমা পড়ে। সব শেষে, নথিপত্র খতিয়ে দেখে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীকে ক্রেডিট কার্ড দেয়।
গোটা জেলায় প্রায় সাড়ে চারশো ব্যাঙ্কের মাধ্যমে চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়। জেলার কৃষি কর্তারা জানান, কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে কোনও চাষি ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ পেতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে ঋণের উপরে বার্ষিক ৭ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। তবে ঠিক সময়ে ঋণের টাকা শোধ করলে বার্ষিক সুদের উপর ৩ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায়। ফলে সঠিক সময়ে টাকা শোধ করলে পারলে যে সুদ দিতে হয় গ্রামীণ মহাজনদের সুদের থেকে তার পরিমাণ অনেক কম। এ ছাড়া, যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে এই কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে বিমার সুবিধাও মেলে এই কার্ডের মাধ্যমে। এই কার্ড থাকলে ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রাংশ কেনার জন্যও আবেদন করা যায়।
চাষিদের সুবিধার জন্য এই প্রকল্প তৈরি করা হলেও বেশির ভাগ চাষির কাছেই কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের বিষয়টি স্পষ্ট নয় কেন? কালনার এক কৃষি কর্তার অভিযোগ, মহকুমার নানা ব্যাঙ্কে কিছু অসাধু চক্র মাথা গড়ে উঠেছে। ওই চক্র জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে কিষান ক্রেডিট কার্ড বের করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি, কালনার সুলতানপুর এলাকার একটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জাল আবেদনপত্র চিহ্নিতও করেছিল। তবে, শুধুই জালিয়াতি নয়, সমস্যা রয়েছে আরও। কৃষি কর্তারা জানান, জেলার বহু চাষিরই নিজস্ব জমি নেই। তাঁদের জমির রেকর্ড রয়েছে বাবা-ঠাকুরদার নামে। কর্মী কম থাকায় পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য সচেতন করা যাচ্ছে না। কৃষি প্রযুক্তি সহায়কের সংখ্যা কম থাকায় কারণে কোন এলাকায় কত জন চাষি কিষান ক্রেডিট কার্ড পায়নি, সেই তথ্য পেতেও অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া অনেক ব্যাঙ্কেরই এই কার্ড বিলি করতে অনীহা রয়েছে বলে দাবি কৃষি কর্তাদের। ব্যাঙ্কগুলির দাবি, আগে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে ঋণ নিয়ে শোধ না করার ঘটনা ঘটার কারণে তারা কার্ড বিলিতে ধীরে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেলা মুখ্য কৃষি আধিকারিক তথা উপ কৃষি অধিকর্তা শ্যামল দত্ত ব্যাঙ্কগুলির থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা না পাওয়া ও কর্মী কম থাকার কথা জানিয়ে বলেন, “বর্তমানে জেলার মোট চাষি পরিবারের সংখ্যা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে পুরনো তালিকা অনুযায়ী কিষাণ ক্রেডিট কার্ড অনেকটাই বিলি করা হয়েছে। যত দু্রত সম্ভব কার্ড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.