মানুষের পরিচয় তার কর্মে। স্বপন অধিকারী এই রকমই এক জন মানুষ। শিক্ষা সংস্কারক বললেও অত্যুক্তি হবে না । স্বপনবাবু পেশায় রিকশাচালক। রোজ যা রোজগার করেন তার থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা সরিয়ে রাখেন। সেই টাকা দিয়েই তিনি ছাত্রছাত্রীদের পেন, খাতা, জামা কিনে দেন। প্রায় আঠারো বছর ধরে তিনি নীরবে এই কাজ করে চলেছেন। নিজেরই দু’বেলা উদরপূর্তি ঠিকমতো হয় না, অথচ কী মানসিক শক্তি সমাজসেবা করার। ভাবতেই অবাক লাগে। পাগলিগঞ্জের বাসিন্দা স্বপনবাবু ঘাড়ে গামছা দিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার আনাচে-কানাচে রিকশায় ভাড়া নিয়ে চলছেন আর সোনালি স্বপ্ন বুনছেন যে আরও কত দুঃস্থ ছেলে মেয়েকে তিনি সাহায্য করতে পারেন। কেমন করে এত বছর ধরে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের পঠন সামগ্রী প্রদান করে আসছেন এ প্রশ্নের উত্তরে স্বপনবাবু জানাচ্ছেন, কাজের প্রতি ভালবাসা থাকলে সব করা যায়। |
তার মহৎ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি টেলিগ্রাফ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। কখনও রামকৃষ্ণ মিশন, অন্য এনজিওর সহযোগিতা পেয়েছেন। স্বপন পড়াশুনা খুব ভালবাসেন। তিনি বলেন, “নিজে তো বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারিনি, সংসারে বড়ই অভাব অনটন ছিল।” তার ক্ষুদ্র দান যদি কোনও শিক্ষার্থীকে নতুন জীবন দান করতে পারে তিনি স্বপ্ন দেখেন যে ভবিষ্যতে সেই শিক্ষার্থী এক জন ভাল ‘মানুষ’ হয়ে জনসেবায় উদ্যোগী হয়েছেন। এ বছর, আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার সময় তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরের বনহাট আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তার পরে বেলা ২টো নাগাদ আটইর প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ৩০০ জনকে কাগজ, ৩০০ জনকে কলম ও মাধ্যমিক ছাত্রছাত্রীদের ৩০০ জনকে কাগজ এবং ১০ দরিদ্রকে জামা বিলি করবেন। স্বপনবাবুর এই মহৎ উদ্যোগ আগামী দিনের নতুন মেধাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করবে ও প্রকৃত মানুষ তৈরি করবে। লেখা ও ছবি: সমিত ঘোষ।
|
১৮ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের সম্মান এবং সুরক্ষা দেবার লক্ষ্যে ২৪ জানুয়ারি পালিত হল জাতীয় শিশু কন্যা দিবস। চাইল্ড ইন নিড ইন্সটিটিউট শিলিগুড়ি শাখা দিনটিতে একগুচ্ছ কর্মসূচি পালন করল। সংস্থার তরফে আয়োজিত একটি র্যালি শিলিগুড়ির পানিট্যাঙ্কি মোড় থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গা পরিক্রমার পর বাগরাকোটের রেলওয়ে চিলড্রেন পার্কে শেষ হয়। কন্যাদিবসের থিম ছিল বাল্যবিবাহ আর নয় মেয়েদের শিক্ষা চাই। এই থিম সম্বলিত একটি নাটকও অভিনীত হল বাগরাকোটে। র্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক। পুরসভার কমিশনার-সহ প্রায় শ’দুয়েক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। ছিল অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে একান্ন শিশুকন্যার হাতে পুরস্কার দেওয়ার পাশাপাশি ছিল স্বাস্থ্য শিবির এবং আলোচনাচক্র।
|
ওরা সোনা খোঁজে নিঃশব্দে। শহর জলপাইগুড়ির ঘুম তখনও ভাল করে ভাঙে না। সেই সময় শুরু হয় জনা কুড়ি মানুষের স্বর্ণসন্ধান। সেই সন্ধান বড় বিচিত্র। সোনার দোকানের বন্ধ শাটারের সামনে ব্রাশ দিয়ে ঝাঁট দেয় ওরা। জমা হওয়া ধুলোবালি বস্তাবন্দি করে বাড়ি ফেরার পালা। তার পর তা ঢেলে দেওয়া হয় বালতি ভর্তি জলে। সেখানেই আলাদা হয়ে যায় সোনার কুচি। তার পর সংগ্রহের পালা। এ ভাবে সপ্তাহে কখনও এক গ্রাম কখনও বা পাঁচশো মিলিগ্রাম সোনা মেলে। তা বিক্রি করেই ওদের দিন গুজরান। এ কাজ চলে বংশানুক্রমে। আগে দিন চললেও এখন আর চলে না। ওদের সামনে না থাকে মিডিয়া না থাকে ক্যামেরার লেন্স।ওরা সযত্নে বহন করে একটা স্বপ্ন। আর না। ছেলেমেয়েরা এই কাজ করবে না। তারা স্কুলে পড়াশোনা করবে। শহরের ঘুম ভাঙা চোখে সেই স্বপ্ন ধরা থাকে না।
|
উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সাহিত্যের অন্যতম সারথি নরেশ রায়। নিয়মিত লিখে থাকেন গল্প ও নাটক। তাঁর অতি বিখ্যাত নাটক মুন্সি প্রেমচাঁদের কফন। আশির দশকে মঞ্চায়িত এই নাটকটি (দানসাগর) তাঁকে সাফল্যের স্বাদ এনে দেয়। তাঁর জনপ্রিয় গল্পগুলির মধ্যে একটি নিতাই চুন্নি দাদা (তার্কিক দাদা)। অনুবাদকর্মের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র, দীনেশ দাশ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ। বাংলাভাষায় লেখা তাঁর প্রবন্ধ স্বসংস্কৃতি বিষয়কতাওয়াইয়া সঙ্গীত ওটো, বাথান সংস্কৃতি ইত্যাদি। উজানী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক রূপে আত্মপ্রকাশ করেন নব্বইয়ের দশকে। সাহিত্যচর্চা ছাড়াও এলাকায় (ময়নাগুড়ির চাপগড় গ্রাম) নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও যুক্ত রাখেন নিজেকে।
|
রবীন্দ্রভবন মঞ্চে ‘উত্তরবঙ্গ প্রবাহ’ পত্রিকা গোষ্ঠী, নাট্যসংস্থা কলাকুশলীর সহযোগিতায় সম্প্রতি গ্রন্থ উন্মোচনের অনুষ্ঠান হল। কৃষ্ণেন্দু রায় সম্পাদিত উত্তরবঙ্গের সীমান্ত এবং উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজ ও সংস্কৃতি, কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা (গীতেশ চন্দ্র রায় ও রতন চন্দ্র রায় সম্পাদিত)বই দুটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ঘটে আনন্দগোপাল ঘোষের হাত ধরে। উপস্থিত ছিলেন পরেশ চন্দ্র অধিকারী, সুখবিলাস বর্মা, বিমলেন্দু মজুমদার-সহ বিশিষ্ট জনেরা। দ্বিতীয়টি ছিল কলাকুশলী পরিবেশিত নাটক ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’। দেবেশ রায়ের উপন্যাস যোগেন মণ্ডল অবলম্বনে লিখিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন তমোজিৎ রায়।
|
‘তোমার মনের গভীরে যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাই তোমাকে চিনিয়ে দেয়
সেই আকাঙ্ক্ষা যেমন, তেমনই হবে তোমার ইচ্ছেশক্তি’......
বৃহদারণ্যকোপনিষদ থেকে টমাস হবস বইয়ের পাঠ আর জীবনের পাঠ দিয়ে আত্মশক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তাঁর লাইফ লিঙ্গুয়া (কথাচিত্র প্রকাশন) নামে বইটির কিশোর সাহা-কৃত বাংলা অনুবাদ জীবনের ভাষা প্রকাশিত হয়েছে ৩৮ তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনের দিন। মঞ্চেই ইংরেজি ও বাংলা বই দুটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এই বই? “নিজের স্বপ্ন কী ভাবে ধৈর্য ধরে সফল করতে হয় সে বিষয়ে আমি নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করতে চেয়েছি পাঠকের সঙ্গে,” বললেন সৌমিত্র। |