ভাবী প্রজন্ম বেড়ে ওঠে তাঁদের মধ্যেই। অথচ সেই নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলার অন্ত নেই। মেয়েদের শরীর-স্বাস্থ্য সম্পর্কে যাবতীয় ভুল ধারণা, অবহেলা, কুসংস্কার ও সঙ্কোচ যে ঝেড়ে ফেলা দরকার, মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে সেই বিষয়ে একমত হয়েছেন মন্ত্রী, চিকিৎসক, শিল্পী, বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা মনে করেন, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ দরকার। কারণ, দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্ম দেন নারীরাই। তাই তাঁরা অসুস্থ হলে দেশের ভিতটাই দুর্বল হয়ে পড়বে।
এ দিন সরকারের তরফে জানানো হয়, রাজ্যে প্রসূতি-মৃত্যুর হার প্রতি এক লক্ষে ১৪৫ থেকে কমে ১১৭ হয়েছে। কিন্তু আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই। এই হার আরও কমিয়ে সামনের আর্থিক বর্ষে এক লক্ষে ১০৯ করার লক্ষ্য স্থির করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
চিকিৎসকেরা মনে করেন, মেয়েদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে মেয়েদের তো বটেই, ছেলেদেরও সচেতন করা প্রয়োজন। জীবনের শুরু থেকে সায়াহ্ন পর্যন্ত মেয়েদের একান্ত কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটা অনিয়মিত ঋতু, ঋতুকালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা ব্যথা, একটোপিক প্রেগন্যান্সি, পলিসিস্টিক ওভারি, বন্ধ্যত্ব, তলপেটে ব্যথা, গর্ভপাত, মেনোপজ, যোনিমুখ ক্যানসার, যৌনাঙ্গে যক্ষ্মা, সন্তানের জন্ম গিতে গিয়ে মৃত্যু, প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম অনেক কিছুই হতে পারে। এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতার একটি বন্ধ্যত্ব নিবারণ ক্লিনিক আয়োজিত নারী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের নীতিনির্ধারণের জায়গায় থাকা মন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন, এ দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় মেয়েদের স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবহেলিত। |
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগিরের কথায়, “মেয়েদের শরীর নিয়ে আমাদের দেশে প্রথম থেকে এত অহেতুক ঢাক-ঢাক গুড়গুড় করা হয় যে, অধিকাংশ মহিলা নিজেরাই নিজেদের শরীর সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যান।” তাঁর বিশ্লেষণ, সচেতনতার অভাবে নারীশরীর সম্পর্কে বেশির ভাগ পুরুষেরও ভ্রান্ত ধারণা আর মাত্রাছাড়া কৌতূহল থাকে। এটা যৌন হেনস্থা, ধর্ষণের অন্যতম কারণ। এর জন্য স্কুল স্তর থেকে জীবনশৈলীর পাঠ দেওয়া জরুরি। কিন্তু সেই বিষয়ে কেউই তেমন ভাবছেন না।
এ দিনের অনুষ্ঠানে মেয়েদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে গৌতমবাবুর লেখা বই ‘জননী’র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। ইউনিসেফের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত এই অভিনেত্রী বলেন, “ভারতে প্রতি ১০ মিনিটে এক জন নারী প্রসব করতে গিয়ে মারা যান। মেয়েদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটা আমাদের দেশে হয় না। আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং শিক্ষার অভাব এর কারণ। এখান থেকে বেরোনোর চেষ্টা শুরু করতে হবে অবিলম্বে।”
শর্মিলাদেবীর বক্তব্যে সায় দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। নারী-স্বাস্থ্য পরিষেবায় ঘাটতির কথা মেনে নিয়েই তিনি বলেন, “আমরা প্রসূতি-মৃত্যু আরও কমাব। এ ছাড়া সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্প শুরু করেছে মেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই। এই প্রকল্পে বাল্যবিবাহ অনেকটা রোধ করা যাবে। অল্প বয়সে প্রসবের ঝুঁকিও কমবে।” |