আগের ম্যাচ টাই করে সিরিজে টিকে ছিল ভারত। কিন্তু হ্যামিল্টনে সাত উইকেটে হারার পর বিদেশে আরও একটা সিরিজ খোয়ালো ভারত। এমন হারের পর অধিনায়ক ধোনি সরাসরি তোপ দাগলেন তাঁর দলের বোলারদের দিকেই। বিশেষ করে পেসারদের। পেসারদের উদ্দেশে অধিনায়ক বলেই দিলেন, মাথাটা আরও খাটাতে হবে।
ভারতীয়রা এ দিন প্রথমে ব্যাট করে ২৭৮ তোলা সত্বেও বোলাররা কোনও চাপই সৃষ্টি করতে পারেননি নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের উপর। ধোনির বক্তব্য, “এই রকম উইকেটে শর্ট ও ওয়াইড বল করা উচিত না। কিন্তু আমাদের বোলাররা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাই করে গেল। নতুন-পুরনো সব বলেই। সার্কলের বাইরে পাঁচ ফিল্ডার নিয়ে আমাদের অসুবিধার কথা প্রায়ই বলি আমরা। কিন্তু শর্ট আর ওয়াইড বল করে গেলে এটা তো কোনও ব্যাপারই নয়। তবে স্পিনাররা ভাল বল করেছে। ওরা ঠিক জায়গায় বল ফেলে গিয়েছে। কিন্তু স্পিনাররা যে চাপটা তৈরি করেছিল, পেসাররা ফিরে এসে সেই চাপ ধরে রাখতে পারল না।”
কিন্তু জাডেজা-অশ্বিনরা তাঁদের প্রথম পাঁচ ওভারে বিপক্ষকে চাপে রাখা সত্ত্বেও কেন তাঁদের সরিয়ে পেসারদের ফিরিয়ে আনলেন? ক্যাপ্টেনের ব্যাখ্যা, “ইনিংসের শেষ দিকে পেসাররা চাপ রাখতে পারবে কি না, প্রথম দশ ওভারের বোলিং দেখে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। তাই শেষের ওভারগুলোর জন্য স্পিনারদের, বিশেষ করে জাডেজাকে রেখে দিয়েছিলাম।” কিন্তু ধোনির এই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেন পেসাররা। তাই ক্যাপ্টেন কুলের আক্ষেপ, “মাঝের ওভারগুলোয় যা বল করল আমাদের পেসাররা, তাতে তো মনে হল, ওদের আর বড় শট খেলতেই হবে না। প্রতি ওভারেই ওদের নিয়মিত বাউন্ডারি দিচ্ছিলাম। আসলে আমাদের পেসারদের মাথা আরও খাটাতে হবে। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী বল করতে হবে। মহম্মদ শামির ধারাবাহিকতা ভাল, তবে এই সিরিজে নয়। ভুবনেশ্বর কুমারও ফর্মে ছিল না।” |
শিখর ধবন, সুরেশ রায়নাদের বসিয়ে বিরাট কোহলিকে ওপেন করতে পাঠানো ও অজিঙ্ক রাহানেকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে বলা। স্টুয়ার্ট বিনিকে ওয়ান ডে ক্যাপ দেওয়া ও প্রায় সাত মাস পর অম্বাতি রায়ডুকে মাঠে নামানো এ দিনের এই সিদ্ধান্তগুলির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ধোনি বলেন, “অকারণে এ সব সিদ্ধান্ত নয়। রায়না শুরুটা ভাল করেও বেশি এগোতে পারছিল না। এই অবস্থায় কাউকে কিছু দিন বিশ্রাম দিলে সে নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবার সময়, সুযোগ পায়। সে জন্যই রায়না ও ধবনকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। বিরাটের সঙ্গে কথা বলি। ওপেন করার ব্যাপারে ও বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল। সে জন্যই রাহানেকে তিনে ও রায়ডুকে চারে ব্যাট করতে পাঠানো হল। রাহানেকে কয়েক মাস আগে ওপেন করিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় মিডল অর্ডারেই ও বেশি স্বচ্ছন্দ।”
দক্ষিণ আফ্রিকার পর এ বার নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও হার। ফের পরপর দুই বিদেশ সফরে ব্যর্থ ভারত। পার্টনারশিপের অভাবেই এমনটা হল বলে মনে করেন ধোনি। তাঁর বক্তব্য, “টপ অর্ডারে আমাদের প্রচুর লড়াই করতে হয়েছে। শুধু গত ম্যাচেই আমাদের শুরুটা ভাল হয়েছিল। কিন্তু আজ আবার একই সমস্যা। দশ ওভারের মধ্যেই দুটো উইকেট চলে গেল। যে রকম পার্টনারশিপ আমাদের দরকার ছিল, তা আমরা ইনিংসের পরের দিকে পেলাম। কিন্তু ভুল সময়ে উইকেট খোয়ানোয় মিডল অর্ডারের উপর খুব চাপ পড়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় প্রয়োজনীয় বাড়তি ১৫-২০ রান তুলে রাখাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।”
|
এই দলটার বিশ্বকাপ ধরে রাখা কঠিন, বলছেন গাওস্কর
নিজস্ব প্রতিবেদন
২৮ জানুয়ারি
|
ভারত অধিনায়কের পর সুনীল গাওস্করও সিরিজ খোয়ানোর দায় চাপালেন বোলারদের উপর। বিশেষ করে কাঠগড়ায় তুললেন পেসারদের। সঙ্গে কিংবদন্তি ওপেনার সতর্ক করে দেন এ ভাবে চললে আগামী বছর বিশ্বকাপেও ভরাডুবি হতে পারে ‘টিম ইন্ডিয়া’র। নিউজিল্যান্ডে ধারাভাষ্য দিতে ব্যস্ত থাকা গাওস্কর বলেন, “বোলিংটাই ভারতের প্রধান চিন্তার বিষয়। এই পরিবেশে নতুন বলের বোলারদের ভাল পারফর্ম করা উচিত। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও হয়নি। নিউজিল্যান্ডেও হচ্ছে না।” সঙ্গে গাওস্কর যোগ করেন, “আমরা বোলিংয়ে উন্নতি না করলে আগামী বছর ভারতের পক্ষে বিশ্বকাপ ধরে রাখাটা খুব, খুব, খুব কঠিন।” মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মঙ্গলবার হ্যামিল্টনে হারের পর পেসারদের উপর অসন্তোষ চেপে রাখতে পারেননি। গাওস্কর ‘ক্যাপ্টেন কুল’কে সমর্থনের সুরেই বলেন, “প্রশ্ন ওঠা উচিত, ভারতীয় পেসাররা কি ঠিকঠাক প্র্যাকটিস করে না? ওরা কি সঠিক গাইড পাচ্ছে না? হচ্ছেটা কী? একই ভুল বারবার করে যাচ্ছে।” পাশাপাশি হ্যামিল্টনে চতুর্থ ওয়ান ডে হারের জন্য ভারতীয় টপ অর্ডারের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়াতেই স্কোরবোর্ডে জেতার মতো রান ওঠেনি। টপ অর্ডারে বড় পার্টনারশিপ হলে ফল অন্যরকম হতেও পারত।” |