সম্পাদক সমীপেষু ...

৩৪ বছরে তবে কী করলেন
অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সাক্ষাত্‌কারটির (‘বামপন্থীরা যে কণ্ঠহীন হয়ে পড়ছেন, সেটা দেশের পক্ষে শুভ নয়’, ৮-১) শিরোনাম আমাকে উত্‌সাহিত করে এটি বিশদ ভাবে পড়ার জন্য। কারণ এটি জানা অত্যন্ত জরুরি যে, অধ্যাপক সেনের মতো মানুষ কেন এমন কথা বলছেন। প্রথমে মনে হচ্ছিল যেন সারা সাক্ষাত্‌কার জুড়ে একের পর এক যুক্তি সাজানো রয়েছে, কেন এখুনি বামপন্থীদের সঙ্গে কোটি কোটি সাধারণ ভারতবাসীর গলা মেলানো প্রয়োজন। পুরোটা পড়া হলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। বুঝলাম, ওঁর স্বপ্নের বামপন্থীদের কাছে ওঁর কী প্রত্যাশা। আসলে অধ্যাপক সেন সারা পৃথিবী জুড়ে অত্যন্ত সম্মানিত। দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মানের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বের, বিশেষত পিছিয়ে-থাকা দেশগুলির নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার নিরলস প্রচেষ্টার জন্য।
অর্থনীতিবিদ জ্যঁ দ্রেজ ও অধ্যাপক সেন তাঁদের সাম্প্রতিক বই ‘অ্যান আনসার্ট্ন গ্লোরি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশনস’-এ উল্লেখ করেছেন যে, যদিও অনেকের ধারণা ভারতবর্ষের উন্নয়ন পরিকল্পনা সমাজতান্ত্রিক চিন্তায় সমৃদ্ধ, কিন্তু আসলে তা একেবারেই নয়। উদাহরণ-সহ জানিয়েছেন যে, কমিউনিস্ট দেশগুলো সবাই সর্বজনীন শিক্ষাকে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছে, যা একটা ‘ফান্ডামেন্টাল সোশালিস্ট কমিটমেন্ট’ (পৃ: ২৫ ও ২৬)।
আমরা সবাই জানি, ভারতবর্ষে বিষয়টি দীর্ঘকাল অত্যন্ত অবহেলিত ছিল। মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি এ ধরনের অবহেলা ওঁকে উদ্বিগ্ন করেছে। উনি আশা করেছিলেন যে, বামপন্থীরা এ দেশে নিশ্চয়ই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্যের মতো বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করবেন। কিন্তু তিনি হতাশ হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আর একটি বিষয়ে আলোকপাত করা অত্যন্ত জরুরি। পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা শাসন করেছেন ১৯৭৭ সাল থেকে টানা ৩৪ বছর। এস পি গুপ্ত এবং এ কে সরকার তাঁদের গবেষণাপত্রে (‘ফিসকাল কারেকশন...’, ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি, ২৬ মার্চ, ১৯৯৪) জানান যে, ১৯৮৮-’৮৯, ১৯৮৯-’৯০ ও ১৯৯০-’৯১ এই তিন অর্থবর্ষে মাথাপিছু ব্যয়ে সামাজিক ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের হার সর্বভারতীয় গড়ের থেকে অনেকটাই কম ছিল। (ভারতবর্ষের গড় ব্যয় ৪৪৮ টাকা আর পশ্চিমবঙ্গের ব্যয় ৪১৬ টাকা) যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের রাজত্বকালের শেষ ২০ বছরের পরিসংখ্যান দেখি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া প্রকাশিত state finances: A study of sudgest তা হলে দেখা যাবে ১৯৯১-’৯২ সাল থেকে ২০১০-’১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু ব্যয় সোশাল সেক্টরে সর্বভারতীয় গড়ের থেকে সর্বদা যথেষ্ট কম। যেমন, ১৯৯১-’৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ব্যয় ৩৯৯.৫৪ টাকা, সর্বভারতীয় গড় ৪৬৩.৯০, ২০০১-’০২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ব্যয় ১১৯৪.৮৬ টাকা, সর্বভারতীয় গড় ১২৫৬.৫৫ আর ২০১০-’১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের ব্যয় ৩৩৯১.৭৮ আর সর্বভারতীয় গড় ৩৭৯৪.৫৯ টাকা।
এ কথা অতীতে অনেককে জিজ্ঞেস করেছি যে, একটি বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গে সোশাল সেক্টরে মাথাপিছু ব্যয় সর্বভারতীয় গড় থেকে এত কম কেন? তাঁদের সহাস্য জবাব, এই বামপন্থীরা বোধহয় সেই বামপন্থী নয়। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।


দারিদ্র কমেছে
বিশ্বব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ মাননীয় কৌশিক বসুর সঙ্গে অনেকাংশে একমত না-হয়ে উপায় নেই, যখন কয়েকটি ব্যাপার দেখি।
১) পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামেও কৃষিমজুর এমনকী জনমজুরের প্রচণ্ড অভাব। কোনও কাজে এক জন মজুর জোগাড় করা রীতিমত কষ্টসাধ্য। ডাকলেই মজুর পাওয়া যাবে বা মজুর দ্বারে দ্বারে কাজ খুঁজে বেড়াবেন, যা খুশি মজুরি দিয়ে তাঁদের যত খুশি কাজ করাব, সে দিন আর নেই। ৩/৪/৫ দিন নিরন্তর সাধাসাধি করলে তবে এখন কাজের মজুর পাওয়া যায়। মজুর যে দর ধার্য করেন গৃহকর্তা তা দিতে বাধ্য মজুর যতটুকু কাজ করবেন তাতেই সন্তুষ্ট হতে হবে। তা না-হলে পরের দিন আর মজুর পাওয়া যাবে না। এটা যদি দারিদ্র হ্রাসের লক্ষণ হয়, তবে বলতে হবে, অবশ্যই দারিদ্র কমেছে।
২) ১০০ দিনের কাজ, বাস্তবে ২০/৩০ দিন যা-ই পাওয়া যাক না-কেন, মজুরদের দৈনন্দিন মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৩) সাইকেল, মোটর সাইকেল, জামাজুতো, পোশাকপরিচ্ছদ, তেলসাবান, স্নো-পাউডার ইত্যাদি ভোগ্যপণ্যের ব্যবহার যে ভাবে বেড়েছে, মোবাইল যে ভাবে প্রায় প্রত্যেকের পকেটেই ঢুকছে, তা দারিদ্র কমার ফল বলেই মনে হয়।


বিপজ্জনক সেতু
বাদশাহি রোডের উপর মুরাতিপুরের ক্যানেল সেচ সেতুটি একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের পথ। এই সেচ ক্যানেল সেতুটিতে দীর্ঘ দিন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বর্ধমান-নতুনহাটগামী বহু বাস-লরি যাতায়াত করে আসছিল। গত ৩/৪ জানুয়ারি থেকে সেচ ক্যানেল সেতুটিতে কোনও যানবাহন যাতায়াত করছে না। তা ছাড়া সেতুটি এক দিকে যেমন সংকীর্ণ ও অন্য দিকে ফেন্সিংহীন। ইদানীং সেতুটি একেবারে বিধ্বস্ত। বাদশাহি রোডের এই সেতুটি দিয়েই পেরোতে হয় বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গগামী বহু সরকারি ও বেসরকারি বাস-লরিকে। সম্প্রতি এই যোগাযোগ একেবারে বেহাল। সেচ দফতর সম্প্রতি সেতুটিতে যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। প্রশাসন নির্বিকার। সেতুটির অবস্থান এমন স্থানে, যেখানে পারাপারের অন্য বিকল্প নেই বললেই চলে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.