ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ বহু দিনের। আর তা নিয়ে অশান্তি কম নয় তামিলনাড়ুর অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল ডিএমকে-র অন্দরেও। সেই অশান্তি নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে কড়া হাতে দলের রাশ টেনে রেখেছিলেন ডিএমকে-প্রধান এম কে করুণানিধি। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎই আলাগিরিকে দল থেকে সাসপেন্ড করার পরেই উস্কে যায় বিতর্ক।
সে দিন এমন কী ঘটল, যার জেরে সাসপেন্ড হতে হল তাঁর মেজো ছেলে আলাগিরিকে? দলের বাইরে ও ভিতরে এর কারণ নিয়ে নানা রকম আলোচনা হলেও, আসল কারণ জানা গেল চার দিন পরে, মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে করুণানিধি নিজে মুখ খোলার পরে।
এ বার তাঁর মেজো ছেলে আলাগিরির বিরুদ্ধে অভিযোগের তির আরও তীক্ষ্ন। করুণানিধির দাবি, শুক্রবার সকালে আলাগিরি তাঁর কাছে এসে বলেছিলেন, আর তিন মাসের মধ্যেই মরতে হবে তাঁর ছোট ছেলে স্ট্যালিনকে। এটা খুনের হুমকি, নাকি অভিশাপ সে বিষয়টি আলাদা। কিন্তু যা-ই হোক না কেন, বাবা হিসেবে এমন কথা শুনতে মোটেই ভাল লাগেনি করুণানিধির। তাই আলাগিরির ঔদ্ধত্য আর বরদাস্ত না করে দল থেকে সাসপেন্ড করলেন তাঁকে। এমনটাই জানালেন করুণানিধি।
সাসপেন্ড হওয়ার পরে অবশ্য ক্ষমা তো দূরের কথা, সামান্য অনুতপ্তও নন আলাগিরি নিজে। বাবার দেওয়া এই ‘শাস্তি’কে তিনি জন্মদিনের উপহার হিসেবেই দেখেছেন। কাল বাদ পরশুই জন্মদিন তাঁর। করুণানিধি বলেন, “আলাগিরি যে দলের এক জন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, সেই দায়িত্ববোধটা ওর একেবারেই নেই। শুক্রবার ওকে সাসপেন্ড করার পর ও এক বারও আমার সঙ্গে এসে দেখা করেনি, কথা বলেনি। অথচ সমস্ত সংবাদমাধ্যমের সামনে এই সাসপেন্ড হওয়ার ঘটনা নিয়ে নানা রকম কথা বলছে। এটা দলের পক্ষে মোটেও ভাল নয়।”
ঠিক কী ঘটেছিল শুক্রবার? যার জেরে পেরিয়ে গেল এত বছরের সহ্যের সীমা? করুণানিধি বলেন, “শুক্রবার ভোর ছ’টায় আমার বাড়িতে এসে হাজির হয় আলাগিরি। আর এসেই স্ট্যালিনকে নিয়ে নানা রকম খারাপ কথা বলতে শুরু করে। অভিযোগ করে, স্ট্যালিনের মুখের ভাষা অত্যন্ত খারাপ। এমনকী এ-ও বলে বসে, যে আর তিন মাসের মধ্যেই মরতে হবে স্ট্যালিনকে।... ভোর ছ’টার সময় এসে এই কথাগুলো আলোচনা করার কোনও মানে হয়!”
আলাগিরির সঙ্গে ডিএমকে প্রধানের মন-কষাকষি নতুন কোনও বিষয় নয়। করুণানিধি বিভিন্ন সময়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক ভাবে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারেন ছোট ছেলে স্ট্যালিনই। যা বরাবরই মানতে নারাজ আলাগিরি। ভাইয়ে ভাইয়ে জোর লড়াই তা নিয়েই।
করুণানিধির কথায়, “আলাগিরি আর স্ট্যালিনের মধ্যে একটা অকারণ শত্রুতা রয়েছে। আমি জানি না, আলাগিরি ওর নিজের ভাইকে কেন এতটা ঘৃণা করে। আলাগিরি আমার সামনেই বলেছে, স্ট্যালিনকে আর তিন মাসের মধ্যেই মরতে হবে। নিজের ছেলেকে নিয়ে এমন কথা কোনও বাবাই সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু দলের প্রধান হওয়ার কারণে এটাও আমায় শুনে হজম করতে হল।... শুধু নিজের ভাইকে নয়, দলের যে কোনও সদস্য সম্পর্কেই এমন মন্তব্য অভিপ্রেত নয়। আলাগিরি দলে থাকলে এ ভাবেই বারবার শৃঙ্খলা ভাঙতে থাকবে ও।”
দিন কয়েক আগে মাদুরাইয়ে দলের পাঁচ সদস্যকে সাসপেন্ড করা নিয়েও ডিএমকে-র সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছিলেন আলাগিরি। প্রকাশ্যেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন দলের সিদ্ধান্তকে। ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিএমকে-র অভিযোগ ছিল, তাঁরা স্ট্যালিনের সমালোচনা করে পোস্টার লাগিয়েছিলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই আলাগিরি সাসপেন্ড হওয়া ওই পাঁচ সদস্যের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
ওই পাঁচ জনকে সাসপেন্ড করার বিষয়টিও মঙ্গলবার ব্যাখ্যা করেন করুণানিধি। দলের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তো তা নিয়ে লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়া উচিত। প্রকাশ্যে পোস্টার লাগানো অথবা সংবাদমাধ্যমের কাছে নিন্দা করাটা কোনও কাজের কথা নয়। এ ভাবে শুধু দলীয় শৃঙ্খলাই নষ্ট হয়।
আলাগিরিকে সাসপেন্ড করার পর শৃঙ্খলা ফিরবে কি না তা সময়ই বলবে। তবে এই ঘটনা ডিএমকে-র কোন্দলে ইন্ধন জোগাল।
|