শেষ পর্যন্ত সুদ বাড়ানোর পথেই হাঁটলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজন। অর্থনীতিকে, বিশেষ করে শিল্প সংস্থাকে উৎসাহ দিতে গত বার ঋণনীতির পর্যালোচনায় সুদের হার না -বাড়িয়ে চমক দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার আর্থিক বাজারের আশার মুখে জল ঢেলে মূল্যবৃদ্ধির মোকাবিলায় তা বাড়ানোর পথই বেছে নিলেন রাজন।
মঙ্গলবার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের জন্য (আরবিআইয়ের অর্থবর্ষ শুরু জুলাই থেকে ) ঋণনীতি ফিরে দেখতে গিয়ে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়াল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। একই হারে বাড়ল রিভার্স রেপো এবং মার্জিনাল স্ট্যান্ডিং ফেসিলিটি (এমএসএফ )-র হারও। রেপো রেট দাঁড়াল ৮ % , রিভার্স রেপো ও এমএসএফ যথাক্রমে ৭ ও ৯ %। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া ঋণে সুদের হারই হল রেপো রেট। অন্য দিকে, ব্যাঙ্কগুলির থেকে ঋণ নেওয়ার সময়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে -হারে সুদ দেয়, তা রিভার্স রেপো। রেপো খাতে ঋণ নেওয়ার একটা সীমা রয়েছে। তার বেশি লাগলে ব্যাঙ্কগুলি এমএসএফ খাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিতে পারে। প্রসঙ্গত, রাজন জানান, এ বার থেকে ত্রৈমাসিকের বদলে দু’মাস অন্তর ঋণনীতি ফিরে দেখা হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট বাড়ানোর ফলে ব্যাঙ্কে সুদ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে এখনই সুদ বাড়ানোয় সমস্যা আছে বলে জানিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্তারা। যদিও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে প্রতিটি ব্যাঙ্কের অ্যাসেট লায়াবিলিটি কমিটি (অ্যালকো )। যেমন, ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এস চন্দ্রশেখরন বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমানত ও ঋণ, দু’য়ের উপরেই সুদ বাড়ানো মুশকিল। তবে আমাদের অ্যালকো খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্যও জানিয়েছেন, তাঁদের অ্যালকোও বৈঠকে বসছে এ নিয়ে। এ দিন ঋণনীতির পর্যালোচনা করতে গিয়ে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি কমতে পারে বলে মন্তব্য করেন রাজন। তিনি বলেন, “চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নামতে পারে।” যদিও আগে বলা হয়েছিল, তা হবে ৫ .৫ %। অনেকেরই আশা ছিল, বৃদ্ধি ও শিল্পের স্বার্থে এ বারও সুদ অপরিবর্তিত রাখবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা না -হওয়ায় শিল্প -সহ নানা মহল আশাহত। যদিও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন বলেন, “এটা থেকেই বোঝা যায়, মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।” ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, “ফের টাকার দামে পতন তাদের সুদ একই রাখা থেকে বিরত করেছে। বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির হারও সুদ কমানোয় উৎসাহিত করতে পারেনি।” ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, “এখন সুদ বাড়লেও চলতি মরসুমে ফের তা বাড়ানোর সম্ভাবনা কম বলে রাজন যে মন্তব্য করেছেন, তাতে আর্থিক বাজার কিছুটা আশ্বস্ত হবে।”
শেয়ার বাজার কিন্তু সুদ বাড়ার আশঙ্কাই করেছিল। যার জেরে সোমবার ৪২৬ পয়েন্ট পড়লেও, মঙ্গলবার ধাক্কা অনেকটা সামলে নেয় সেনসেক্স। এ দিন সূচক মাত্র ২৪ পয়েন্ট পড়েছে। অবশ্য টাকা ৫৯ পয়সা বেড়েছে। দিনের শেষে প্রতি ডলার ছিল ৬২ .৫১ টাকা। |