আজ মঙ্গলবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কি সুদ কমাবে? এই প্রশ্নই সোমবার শেয়ার বাজারে সকলের মুখে মুখে ফিরছিল। লগ্নিকারীদের আশঙ্কা, কমার বদলে সুদ বাড়তে পারে। গত কয়েক দিনে টাকার পতন ও মূল্যবৃদ্ধি উল্লেখজনক ভাবে না-কমা, এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক আজ ঋণনীতি ফিরে দেখতে গিয়ে সুদ বাড়াতে পারে বলে শেয়ার বাজার মহলের আশঙ্কা। মূলত এর জেরেই সোমবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স পড়ল ৪২৬ পয়েন্ট। দিনের শেষে সূচক দাঁড়াল ২০৭০৭.৪৫ অঙ্কে। এ নিয়ে মাত্র দু’দিনের লেনদেনেই সূচকের পতন হল ৬৬৬ পয়েন্টেরও বেশি।
এ দিন টাকাও পড়েছে ৪৪ পয়সা, যা শেয়ার বাজারের মন্দায় ইন্ধন জোগায়। বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৩.১০ টাকা। এই পতন ফের চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিকে বেসামাল করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা শেয়ার বাজার মহলে।
এই সঙ্কটের সময়েও অবশ্য অভয় দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। তাদের মতে, দেশের আর্থিক অবস্থা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের খবর, কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব অরবিন্দ মায়ারাম এ দিন বলেছেন, “চলতি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি (বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের ফারাক) এখনও ৫ হাজার কোটি ডলারের নীচে। তা ছাড়া দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ। অর্থনীতির মৌলিক উপাদানগুলিও মজবুত। ফলে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।”
এ দিন অবশ্য বিশ্ব শেয়ার বাজারেও দাম পড়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভারতে। আমেরিকা ফেব্রুয়ারি মাস থেকে তাদের বন্ড কেনার পরিমাণ আরও ১,০০০ কোটি ডলার কমিয়ে ৬,৫০০ কোটিতে নামিয়ে আনতে পারে বলে আশঙ্কা আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের। পাশাপাশি, চিনের আর্থিক বৃদ্ধি থমকে যাওয়ার খবরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই সব কারণেই অন্যান্য দেশের বাজারগুলিতে লগ্নিকারীরা হাতের শেয়ার বেচে মুনাফা ঘরে তুলে নিতে শুরু করেছেন।
এই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে অনিশ্চয়তা মেটার সম্ভাবনা দেখছেন না অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই। ফিনশোর ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের এমডি লক্ষ্মণ শ্রীনিবাসন বলেন, ‘‘আমার আশঙ্কা, নির্বাচন যত এগোবে, বাজারে অনিশ্চয়তা তত বাড়বে। ভর্তুকির ব্যবস্থা করে ভোট কেনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এটা দেশের অর্থনীতির পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। টাকার দাম পড়ছে, মূল্যবৃদ্ধির সূচকও তেমন আশার আলো দেখাতে পারছে না। এই অবস্থায় শেয়ার বাজারের পতন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।”
এর মধ্যেই আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন কিছু বাজার বিশেষজ্ঞ। ক্যলকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি ও স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, “ভারতের বাজারের প্রতি বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি এখনও আস্থা হারায়নি। তারা কিন্তু এ দেশে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করছে না। আমার আশা, তাদের লগ্নি বাজারকে ধরে রাখতে পারবে। সূচক এখনও যে-অঙ্কে রয়েছে, তাকে কম বলা যায় না।” |