এক সঙ্গে বেশ কয়েকটি কম ওজনের শিশু মৃত্যুর ঘটনা ফের ঘটল পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে। নবজাত শিশুর পরিচর্যা কেন্দ্র (এসএনসিইউ) থাকা সত্ত্বেও তাদের সেখানে ভর্তি না করতে পারায় এই হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্নও উঠে গেল।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে আটটি শিশুর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সুপার নীলাঞ্জনা সেনের দাবি, “ওই শিশুগুলির ওজন অত্যন্ত কম ছিল। তা ছাড়া সংক্রমণ-সহ কিছু সমস্যায় ভুগছিল ওরা। বিশেষ চিকিৎসা দিতে ওদের নিওনেটাল ওয়ার্ডে ওয়ার্মারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায় নি।” হাসপাতাল কর্তপক্ষ জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে চারটির জন্ম হয়েছিল এই হাসপাতালে। বাকিদের বাইরে থেকে আনা হয়েছিল। শিশু বিভাগের চিকিৎসক শিবশঙ্কর মাহাতোর মতে, “এসএনসিইউ বিভাগে এক একটি বাচ্চার জন্য পৃথক পরিকাঠামো থাকে। এ ক্ষেত্রে এই বিভাগে এলে চেষ্টা করা যেত।” তাহলে ওদের নবজাত শিশুদের পরিচর্যা কেন্দ্রে (এসএনসিইউ) কেন রাখা হয়নি? সুপারের দাবি, “নবজাত শিশুর পরিচর্যা কেন্দ্রে শয্যা খালি না থাকায় তাঁদের ভর্তি করা যায়নি।” |
বর্তমানে এসএনসিইউ ওয়ার্ডে ১৪টি শয্যা রয়েছে। স্টেপ ডাউন (এসএনসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা শিশুর অবস্থা তুলনামূলক ভাবে উন্নত হলে স্টেপ ডাউন শয্যায় তাকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়) শয্যার সংখ্যা মোটে ৪টি। ফলে এসএনসিইউ ওয়ার্ডে প্রায় সব সময়েই অসুস্থ শিশু ভর্তি থাকে। তাই ইতিমধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এসএনসিইউ বিভাগে শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মাস তিনেক আগে হাসপাতালের তিন তলায় ৩২ শয্যার নতুন এসএনসিইউ তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওই ওয়ার্ড চালু করার মতো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। তাই ওই ওয়ার্ডও চালু করা যায়নি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “নতুন এসএনসিইউতে সোমবার আরও চারটি শয্যা চালু করে দেওয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আরও একটি শয্যা চালু হয়ে যাবে। এ দিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেমন যেমন পরিকাঠামো তৈরি হবে, সেই মোতাবেক শয্যা চালু করা হবে।”
এখানে সদ্যোজাতদের প্রাথমিক ভাবে যে নিওনেটাল ওয়ার্ডে রাখা হয়, সেখানেও শষ্যার অভাব রয়েছে। সেখানে ৩০টি শষ্যা থাকলেও বর্তমানে সেখানে ৪৬ জন শিশুকে ভর্তি রাখা হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “জেলার ২০টি ব্লক, তিনটি পুরএলাকা ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের রোগীদের চাপও সামলাতে হয় এই হাসাপাতালকে। তাই চেষ্টা করেও অনেক সময় পরিকাঠামোর অভাবে অসুস্থ শিশুদের বাঁচানো যাচ্ছে না।” |