বনগাঁ-চাকদহ সড়ক
রাস্তার দু’পাশে বেআইনি পার্কিং, নজর নেই প্রশাসনের
রাত ১১টা। শীতের রাতে সুনসান সড়ক। এক যুবক মোটর সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। কুয়াশা না থাকলেও দূর থেকে কোনও গাড়ি আসছে কি না তা বোঝার উপায় নেই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎই একটি মালবোঝাই ট্রাক দ্রুতগতিতে এসে মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা মারল। ছিটকে পড়লেন আরোহী যুবকটি। ছিটে গিয়ে দেখি মাথা ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। জ্ঞান নেই। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে যায়। বস্তুত, এটি দুর্ঘটনা হলেও উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ-চাকদহ সড়কের বর্তমান অবস্থায় পথ দির্ঘটনা আর কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরঞ্চ, এই রাস্তায় যাতায়াতকারীদের পরিবার-পরিজন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আশঙ্কিত থাকেন। কারণ রাস্তার দু’পাশ জুড়েই সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে লরি, ট্রাক। ফলে সরু রাস্তায় যানচলাচলের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটে প্রায়ই।
জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বনগাঁ-চাকদহ সড়কের ধারে সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। রাস্তার ধারে বেআইনি ট্রাক-লরি পার্কিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন ওই এলাকার মানুষ। সড়কের দু’পাশ বরাবর সারি সারি ট্রাক-লরি দাঁড়িয়ে থাকা কারণে শুধু রাস্তা সরু হয়ে যাওয়াই নয়, সড়কের বাঁকগুলিও ভীষণ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতটাই যে কয়েক হাত দূর থেকেও উল্টোদিকের যানবাহন সম্পর্কে চালক কোনও কিছুই বুঝতে পারছেন না। আর যখন তা তাঁর নজরে আসছে তখন একেবারে শেষ মূহূর্ত। ফলে বেশিরভাগ সময়েই এড়ানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। ঘটছে মৃত্যুও।
বনগাঁ-চাকদহ সড়কের দু’পাশে এ ভাবেই সার বেঁধে
দাঁড়িয়ে থাকে পণ্যবোঝাই ট্রাক। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
কয়েক বছর আগে এশিয়ান ডেভলেপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর ঋণের টাকায় পুরনো বনগাঁ-চাকদহ সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে দু’ লেনের ঝাঁ চকচকে রাস্তা তৈরি হয়েছিল। বনগাঁ থেকে নদিয়ার চাকদহ চৌমাথা পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার সড়ক পেয়ে খুশি হয়েছিলেন এলাকার মানুষ। কিন্তু এখন বনগাঁ থেকে গোপালনগর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথ খুবই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে রাস্তার দু’পাশে ট্রাক-লরির দাপটে। এ নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, বেআইনি পর্কিংয়ের চোটে সড়ক চুরি হয়ে গেলেও পুলিশ-প্রসাসনের হুঁশ নেই। তাঁরা জেগে ঘুমোচ্ছেন। শুধু পার্কিংই নয়, রাস্তার ধারে ইমারতীর জিনিসপত্র ফেলে রাখাও ওই সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। স্থানীয় এক বৃদ্ধের প্রশ্ন, “বনগাঁ ও গোপালনগর থানার পুলিশ এই সড়কে রোজ টহল দেয়। পুলিশের বড়কর্তারা ঘুরে বেড়ান। এমনকী স্থানীয় বিধায়কও এই রাস্তায় যাতায়াত করেন। তা সত্ত্বেও কেন প্রকাশ্যে সড়ক দখল হয়ে যাবে?”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে সড়কের সম্প্রসারণের কাজ শেষ হওয়ার পরে মাস কয়েক সব ঠিকঠাক ছিল। ফের ধীরে ধীরে রাস্তার একপাশে ট্রাক-লরি পার্কিং শুরু হয়। কয়েক মাস আগে থেকে রাস্তার দু’পাশই ট্রাক পার্কিংয়ের দখলে চলে গিয়েছে। পেট্রাপোল বন্দরগামী মালবোঝাই সব ট্রাক দিনের পর দিন সড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকায় যান চলাচলের যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনই ক্ষতি হচ্ছে সড়কেরও। এ ব্যাপারে কী বলছেন বিধায়ক?
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বনগাঁ-চাকদহ সড়কের ওই সমস্যার কথা জানি। বিষয়টি জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে জানিয়েছিলাম। ১৫ জানুয়ারি জেলাশাসকের দফতরে এক বৈঠকে বেআইনি ট্রাক পার্কিং নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। সভায় বনগাঁ থানার আইসি চন্দ্রশেখর দাসকে জেলাশাসক বনগাঁ-চাকদহ সড়ক থেকে ট্রাক সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিষয়টি জেলা পুলিশের কর্তাদেরও নজরে আনা হয়েছে।”
জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “সড়ক থেকে ট্রাক সরানোর বিষয়টির সঙ্গে শুল্ক, সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউজ কর্পোরেশন, পুরসভা, পুলিশ সকলে যুক্ত। পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারা কি ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হবে। তবে সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।”
সড়কের দু’ধারে ট্রাক পার্কিংয়ের ব্যাপারে কয়েকজন ট্রাক চালকের বক্তব্য, তাঁরা বাধ্য হয়েইওই সড়কের দু’ধারে ট্রাক রাখেন। কারণ পুরসভার যে ট্রাক-টার্মিনাস রয়েছে সেখানে ট্রাক রাখতে গেলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তাই যানচলাচলের অসুবিধা হবে জেনেও তারা রাস্তার পাশে ট্রাক রাখতে বাধ্য হন।
পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “পুরসভার ট্রাক-টার্মিনাসে প্রায় সাড়ে সাতশো ট্রাক পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। পেট্রাপোল দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন আড়াইশো থেকে তিনশো ট্রাক পণ্য নিয়ে বেনাপোলে যায়। পণ্য রফতানিতে গতি না বাড়লে সড়কের উপর ট্রাক পার্কিংয়ের সমস্যা পুরোপুরি মিটবে না। পেট্রোপোল বন্দরে সেন্ট্রাল ওয়্যার হাউজ কর্পোরেশন-এর ট্রাক-টার্মিনাসে ৫০০টি পণ্য বোঝাই ট্রাক দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকায় ওখানেও ট্রাক রাখার জায়গা কমে গিয়েছে।”
বনগাঁর এসডিপিও রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “সড়কের উপর ট্রাক-লরি দাঁড় করিয়ে রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে পুলিশি অভিযান আরও বাড়ানো হবে।”
যদিও এসডিপিও-র এই কথায় মোটেও সন্তুষ্ট নন এলাকার মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, অতীতেও পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বহুবার এমন আশ্বাস পেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তা যে নেহাতই কথার কথা ছিল তা প্রতিনিয়ত তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.