চলতি সিরিজে ভারতীয় ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনার তোড়ে একটা তথ্য একদম হারিয়ে যাচ্ছে! লোকে ভুলে যাচ্ছেন, দু’টো ওয়ান ডে ম্যাচই কিন্তু আমরা হেরেছি খুব কম রানের ব্যবধ্যনে। তৃতীয়টা টাই হয়েছে। সব ক’টা ম্যাচেই তিনশোর বেশি রান তাড়া করতে হয়েছে। এবং ভারত খেলেছে শুধু পাঁচ ব্যাটসম্যান নিয়ে।
এখন প্রশ্ন, ভারতের কি এ বার ছ’জন ব্যাটসম্যান খেলানো উচিত? বড় রান তাড়া করতে নেমে ভারতের ওপেনারদের এখনও পর্যন্ত যা পারফরম্যান্স, তাতে পরের দুই ম্যাচেও বড় টার্গেটের সামনে পড়লে তারা দলের রক্ষাকবচ হয়ে উঠতে পারবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা দেখছি না। ব্যাটিং অর্ডারে যে চার নম্বরে নামছে, তারও এক দশা। ও দিকে, পাঁচ বোলার খেলিয়েও তো প্রতিপক্ষ টিমের হেসেখেলে তিনশোর বেশি রান তোলা ঠেকানো যাচ্ছে না। পাঁচের বদলে প্রথম সারির চার বোলার খেলালে এর বেশি দুর্দশা আর কী-ই বা হবে? বরং ভারত ব্যাটিং শক্তি বাড়িয়ে নেমেছে দেখে নিউজিল্যান্ড বাটসম্যানরা আরও বড় টার্গেট খাড়া করার চেষ্টায় চালিয়ে খেলতে গিয়ে তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফিরবে, এমন একটা সম্ভাবনা থাকে। |
অকল্যান্ডের পর হ্যামিল্টনেও অন্যতম ভরসা জাডেজা। |
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট অবশ্য চতুর্থ এক দিনের ম্যাচে ছয় ব্যাটসম্যানের রণকৌশলে যাবে বলে মনে হচ্ছে না। অকল্যান্ডের টাই ম্যাচে জাডেজা আর অশ্বিনের জুটি যে ভাবে দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে, তাতে ওরা ছ’নম্বর ব্যাটসম্যানের অভাব টের পেতে দেয়নি। দু’জনে বলটাও মন্দ করেনি। বিদেশের মাঠে এরা একসঙ্গে এখনও পর্যন্ত কয়েকটা মাত্র এক দিনের ম্যাচ খেলেছে। আমার মনে হয়, আরও বেশি সময় দেওয়া হলে ভারতকে লোয়ার মিডল অর্ডারে নির্ভরতা দিতে পারবে জাডেজা-অশ্বিন। মনে রাখতে হবে, বিরাট কোহলিকে নিয়ে শুরুর দিকে ধৈর্য্য ধরার সুফলটা কিন্তু ভারত এখন পাচ্ছে। ধোনি যে লগ্নিটা বিরাটে করেছিল, সেটাই জাডেজা-অশ্বিনের ক্ষেত্রেও করবে বলে মনে হয়। আমি দেখেছি, এ সব ব্যাপারে ধোনির ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় শেয়ার দালালদের মতোই সজাগ। ও ঠিক বুঝতে পারে, কোথায় লগ্নি করলে ভবিষ্যতে লাভ হবে।
আমি আবার এমন একটা তথ্য পেলাম যেটা আমাকে চমকে দিয়েছে। একটা পরিসংখ্যান বলছে, ভারত বিশ্বের অন্য সব দলের তুলনায় অনেক বেশি বাউন্ডারিতে খেলে। বাউন্ডারি মারায় তালিকায় ভারতের পরেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নাম। কিন্তু তারাও ভারতের থেকে প্রায় একশো বাউন্ডারি কম মেরেছে। উল্টো দিক থেকে দেখলে, ভারত আবার সেই টিম যারা অন্যদের তুলনায় অনেক কম সিঙ্গলস নেয়। বিশেষ করে ১০-৩৫ ওভারের মধ্যে বা দু’টো পাওয়ার প্লে-র মধ্যে। ভারতের ইনিংসে ডট বলের সংখ্যাও অসম্ভব বেশি।
এই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দু’টো জিনিস স্পষ্ট। এক, পর পর ডট বলের ধারা ভাঙার চেষ্টায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা প্রতিবার বড় শট খেলার বাড়তি ঝুঁকি নিচ্ছে। দুই, বাউন্ডারিতে রান তোলার চেষ্টায় ওরা হুক বা পুলের মতো ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে সেই সব পরিস্থিতিতে, যেখানে প্রতিপক্ষ লাগাতার শর্ট বল করে চাপ তৈরি করছে।
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের আসল রোগ সারাতে হলে অবিলম্বে নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেট করায় জোর দিতে হবে। দলের যে সব ব্যাটসম্যানের বেশি ডট বল খেলার প্রবণতা রয়েছে, তাদের সঙ্গে আদালা করে বসে সমস্যাটা নিয়ে কথা বলতে হবে। এত ডট বল সত্ত্বেও তো আমার স্ট্রাইক রেট আশির উপরে জাতীয় ছেঁদো যুক্তির এখানে কোনও জায়গা নেই। সোজা বলতে হবে, তুমি বেশি ডট বল খেলছ বলে ক্রিজের উল্টোদিকে থাকা তোমার পার্টনারের উপর তাড়াতাড়ি রান তোলার চাপ বাড়ছে। আর সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
আশা করি আগের তিনটে ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ধোনির ভারত আজ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কথায় বলে, হাজার মাইলের দূরত্ব অতিক্রম করতে গেলেও প্রথম পদক্ষেপটা দিয়েই শুরু করতে হয়। টিম ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে, এই পদক্ষেপ সেই স্প্রিন্টটা হওয়া চাই, দুই স্টাম্পের মাঝে ২২ গজের দূরত্ব পেরোতে যেটা দৌড়নো উচিত! |
আজ টিভিতে
চতুর্থ ওয়ান ডে-তে মুখোমুখি ভারত ও নিউজিল্যান্ড
(সোনি সিক্স, সকাল ৬-৩০) |