সিরিজে টিকে থাকলেন ধোনিরা
অবিশ্বাস্য টাই হলেও ভারতের
রোগের দাওয়াই পাওয়া গেল না
বাড়িতে নয়, শনিবার সহকর্মীদের সঙ্গে অফিসে বসে ভারতের উত্তজেক ম্যাচটা দেখছিলাম। দেখলাম, শেষ ওভারে সতেরো তুলে কী ভাবে ম্যাচটাকে অবিশ্বাস্য ভাবে টাই করে দিল রবীন্দ্র জাডেজা! ম্যাচটা শেষ হয়ে যাওয়ার বহুক্ষণ পরেও জাডেজা আর অশ্বিনের ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে খুব হইচই চলছিল। সত্যি বলতে, শুধু ব্যাটিং নয়। বোলিংয়েও ওরা শনিবার যা করেছে, প্রশংসনীয়। এ রকম ব্যাটিং উইকেটে চার-সাড়ে চার রান রেট রেখে বল করে যাওয়া, দু’টো-একটা উইকেট নেওয়া খারাপ কী? কিন্তু ম্যাচটার বিশ্লেষণে বসে আমার মনে হচ্ছে, শনিবারের জাডেজা-অশ্বিনের ব্যাটিং-বোলিং সরিয়ে রাখলে ম্যাচে ভারতের পক্ষে কী পড়ে থাকছে?
তেমন কিছু না!

অকল্যান্ডে জাডেজা ম্যাজিক। ছবি: এএফপি।
রোগগুলো যেমন ছিল, তেমনই আছে। ডেথ ওভারে এ দিনও বরাবরের মতো বেধড়ক মার খেয়েছে পেসাররা। তিনশো আবারও পেরিয়ে গিয়েছে। ওপেনিং-সমস্যা এখনও মেটেনি। জাডেজা বা অশ্বিন শনিবার খেলে দিল, ভারতও আপাতত সিরিজ হার থেকে বেঁচে গেল। কিন্তু রোজ-রোজ জাডেজারা না-ও পারফর্ম করতে পারে। তখন?
বরং আমি বলব, ম্যাচটা টাই হয়ে ব্যাপারটা ভারতের বিপক্ষেই গেল। কোনও ভাবেই ওয়ান ডে সিরিজটা আর জিতবে না ধোনিরা। বড়জোর সমান-সমান হবে। কিন্তু ধোনিরা হেরে সিরিজের নিষ্পত্তি যদি এ দিনই হয়ে যেত, টিমে কয়েকটা ‘শাফল’ করা যেত। কিন্তু সিরিজ এখনও বেঁচে থাকায় সে সব বোধহয় হবে না। যদিও সেটা দরকার।
কোথায়?

১) ডেথ ওভার বোলিং: এক মাস বা দু’মাস নয়, দু’বছর হয়ে গেল ভারত এই সমস্যায় ভুগে চলেছে। আমি তো বুঝতে পারছি না জো ডসের কাজটা কী? তুমি টিমের বোলিং কোচ, বোলিংয়ের রোগ ধরে তার প্রতিষেধক বার করতে তোমার ছ’মাস লাগতে পারে। কিন্তু দু’বছর নয়। প্রত্যেক ম্যাচে চল্লিশ ওভারের পর থেকে মারাত্মক মার খাচ্ছে ভারতীয় পেস ব্যাটারি। শনিবার দিল আশি রান! ধোনিকে বলতে শুনছি যে, টস জিতে ও ফিল্ডিংই নেবে, কারণ রান তাড়া করতে ওর টিম কমফর্টেবল। তার মানে, টিমের বোলিংয়ে তোমার অতটা ভরসা নেই, যতটা ব্যাটিংয়ে আছে। কিন্তু তা হলে তুমি একই বোলার খেলিয়ে যাচ্ছ কেন? শনিবার বরুণ অ্যারনকে খেলানো হল। কিন্তু তোমার বেঞ্চে উমেশ যাদব কেন বসে থাকবে? যে কি না এক বছর আগেও ইন্ডিয়ার এক নম্বর পেসার ছিল! ডেথ বোলিংয়ের ওষুধ বার করা খুব কঠিন কিছু নয়। দু’জন পেসার ঠিক করতে হবে। সেটা উমেশ, অ্যারন কিংবা অশোক দিন্দা হতে পারে। যাদের বলা হবে, শুরুতে তোমরা দু’ভার করবে। মাঝে আরও দু’টো। বাকি পাঁচ-ছ’ওভার চল্লিশ ওভারের পর। মনে রাখতে হবে, ২০১৫ বিশ্বকাপটা হবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। রোজ রোজ তিনশো, সওয়া তিনশো তাড়া করে জেতা কিন্তু ওখানে অসম্ভব।

সমস্যা এক। পুরনো জায়গাতেই টিম-ধোনি। শনিবার। ছবি: গেটি ইমেজেস।
২) ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাকফুটে শক্তিশালী ক্রিকেটারের অভাব: কথাটা দাদিও (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) বলেছে। বলেছে যে, চেতেশ্বর পূজারাকে ওয়ান ডে স্কোয়াডে ভাবা হচ্ছে না কেন? আরে, বিদেশে তোমাকে কেউ হাঁটুর নীচে বল করবে না। পূজারাকে দিয়ে ওপেন করিয়ে দেখা যাক না। রোহিত শর্মাকে পরের দিকে পাঠানো হোক। রোহিতও ব্যাকফুটে ভাল। কিন্তু মুভিং বল ও ম্যানেজ করতে পারে না। আর ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ারের অভাবে তাড়াতাড়ি উইকেট চলে যাচ্ছে। শনিবার ভারতের ওপেনিং জুটি ভাঙতেই ১৬ রানে চার উইকেট চলে গেল।

৩) ভাল পেসার-অলরাউন্ডারের অভাব: রবিচন্দ্রন অশ্বিন এখন পুরোপুরি অলরাউন্ডার। কিন্তু স্পিনার দিয়ে বিদেশে বাজিমাত কতটা সম্ভব, সন্দেহ আছে। বরং পেসার-অলরাউন্ডার বেশি দরকার বিশ্বকাপে। তিনটে নাম পাচ্ছি আপাতত। রজত ভাটিয়া। স্টুয়ার্ট বিনি। এবং লক্ষ্মীরতন শুক্ল। যাদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য লক্ষ্মী। আর একটা কথা। স্টুয়ার্ট বিনিকে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডে? ঘোরাতে?

তাই বলছি, ভারত না হারলেও এই ম্যাচ থেকে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। তবে এটা ঠিক এখন ভারতীয় ক্রিকেটাররা মানসিক ভাবে পোক্ত। অশ্বিন যেমন দেখিয়ে দিচ্ছে, ওকে আর বাদ দেওয়া কঠিন। দশ ওভার বলের সঙ্গে ব্যাটিংয়েও টিমের বাকি ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জে ফেলে দেবে। আর জাডেজা? ছ’বলে আঠারো চাই এই অবস্থায় ওভারের ফোর্থ বলে সিঙ্গলস ছেড়ে দিচ্ছে, পরপর বাউন্ডারি আর ওভার বাউন্ডারি মেরে টাই করে দিচ্ছে সত্যিই অকল্পনীয় ওদের মেন্টাল স্ট্রেংথ।
টাইয়ের পাঁচ কাহন
• ওয়ান ডে-র ইতিহাসে শনিবার সাত নম্বর ম্যাচ টাই করল ভারত।
• ওয়ান ডে-র সবচেয়ে বেশি টাইয়ের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার (৯টি)। এর পর পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৮টি)।
• প্রথম ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন হিসেবে চার ম্যাচ টাইয়ের রেকর্ড ধোনির।
• নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম কোনও ম্যাচ টাই ভারতের।
• ভারতের সবচেয়ে বেশি টাই ইংল্যান্ড আর জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে (দুটো করে)। বাকি দুটো টাইয়ে প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর শ্রীলঙ্কা।
টিমের জন্য কিছু করতে পেরে দারুণ লাগছে। শেষ বল পর্যন্ত টিকে থাকাটা টার্গেট ছিল। দুর্ভাগ্যবশত লাইনটা পার করতে পারলাম না। তবে এই ম্যাচ থেকে অনেক শিখেছি। মনে হয় আমরা ভাল বল করেছি কিন্তু স্ট্রেট বাউন্ডারি খুব ছোট।
রবীন্দ্র জাডেজা
ব্যাটসম্যান জাডেজা প্রচণ্ড প্রতিভাবান। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর রান করতে দেখেছি ওকে। ওর চিন্তা-ভাবনাটা শুধু ঠিক জায়গায় রাখতে হবে। এমনিতে আমাদের সিরিজে টিকে থাকাটা বড় ব্যাপার। একটা সময়ে ম্যাচটা যে কোনও দিকে গড়াতে পারত। বিশেষ করে যখন ১৪০ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে যায়। জাডেজা, অশ্বিন দারুণ ব্যাটিং করে ম্যাচটা টেনেছে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি

পুরনো খবর:

অকল্যান্ডের স্কোর
নিউজিল্যান্ড
গুপ্তিল ক রাহানে বো জাডেজা ১১১
রাইডার বো ভুবনেশ্বর ২০
উইলিয়ামসন বো শামি ৬৫
অ্যান্ডারসন বো অশ্বিন ৮
টেলর রান আউট ১৭
ব্রেন্ডন ক অশ্বিন বো অ্যারন ০
রঙ্কি ক রাহানে বো জাডেজা ৩৮
নাথান রান আউট ১
সাউদি রান আউট ২৭
ম্যাকক্লেনাঘান ক জাডেজা বো শামি ৩
বেনেট ন.আ. ৩
অতিরিক্ত ২১
মোট ৫০ ওভারে ৩১৪
পতন: ৩৬, ১৮৯, ১৯৮, ২২৪, ২৩০, ২৭০, ২৮০, ২৮০, ২৮৮, ৩১৪
বোলিং: ভুবনেশ্বর ৯-০-৪৮-১, শামি ১০-০-৮৪-২, অ্যারন ৭-০-৫২-১
জাডেজা ১০-০-৪৭-২, অশ্বিন ১০-০-৪৭-১, রায়না ৪-০-২৬-০

ভারত
ধবন ক গুপ্তিল বো অ্যান্ডারসন ২৮
রোহিত ক বেনেট বো অ্যান্ডারসন ৩৯
বিরাট ক রঙ্কি বো বেনেট ৬
রাহানে ক রঙ্কি বো অ্যান্ডারসন ৩
রায়না ক রঙ্কি বো সাউদি ৩১
ধোনি ক সাউদি বো অ্যান্ডারসন ৫০
অশ্বিন ক গুপ্তিল বো নাথান ৬৫
জাডেজা ন.আ ৬৬
ভুবনেশ্বর ক নাথান বো বেনেট ৪
শামি ক উইলিয়ামসন বো অ্যান্ডারসন ২
অ্যারন ন.আ ২
অতিরিক্ত ১৮
মোট ৫০ ওভারে ৩১৪-৯
পতন: ৬৪, ৭২, ৭৪, ৭৯, ১৪৬, ১৮৪, ২৬৯, ২৭৫, ২৮৬
বোলিং: সাউদি ১০-০-৭৪-১, ম্যাকক্লেনাঘান ১০-০-৭৬-০, বেনেট ১০-২-৪১-২
অ্যান্ডারসন ১০-১-৬৩-৫, উইলিয়ামসন ২-০-১৭-০, নাথান ৮-০-৩৯-১




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.