পিসেমশাইকে বুভুক্ষু হাউন্ডের খাঁচায় ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। একে একে তাঁর নিকট আত্মীয়দেরও নিকেশ করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই। মৃত পিসেমশাই জাং সং থায়েকের আত্মীয়, বংশধরদের শেষ করে সব অর্থেই তাঁকে নিশ্চিহ্ন করা। অন্তত তেমনই দাবি দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সংবাদপত্রের।
স্বাভাবিক ভাবেই, খবরটির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টি নিয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া না মেলায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অনেকেই খবরটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে নারাজ। বিশেষত ক্ষমতায় আসার পর থেকে কিম জং উনের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে সব অভিযোগ একাধিক বার উঠেছে, তার পর পিসেমশাইয়ের আত্মীয়দের নিকেশ করার খবরকে শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়ার অপপ্রচার বলে মানতে রাজি নন বহু মানুষ। আর তাঁদের সেই ধারণা আরও জোরদার করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্য এক সংবাদপত্র। উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন এমন মানুষদের একাংশের তৈরি সে সংবাদপত্রও সম্প্রতি একই দাবি করেছে। সে সংবাদপত্রের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে এ জল্পনা আলোড়ন তুলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। ।
দুটি সংবাদপত্রেরই দাবি, গত ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে পিয়ংইয়ং-এ জোর করে নিয়ে আসা হয় জাং সং থায়েকের আত্মীয়দের। যাঁরা আসতে চাননি, তাঁদের বাড়ির সামনেই জনসমক্ষে গুলি করে খুন করা হয়। বাকিদের পিয়ংইয়ং-এ এনে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জাং-এর বোন জাং কাই সুন, তাঁর স্বামী এবং কিউবায় উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত জং ইয়ং ইন, জাং-এর ভাগ্নে এবং মালয়েশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত জাং ইয়ং চল। রেহাই পাননি জাং ইয়ং চলের দুই ছেলেও। তা ছাড়া জাং সং থায়েকের দুই ভাইয়ের ছেলে এবং নাতি-নাতনিদেরও হত্যা করা হয়। আনুমানিক হিসেব বলছে, সব মিলিয়ে প্রায় জাং সং থায়েকের একশোরও বেশি আত্মীয়কে খুন করেছেন কিম জং উন। যাঁরা বেঁচেছেন, তাঁদের প্রত্যন্ত গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
এখন প্রশ্ন, তা হলে কি পিসি কিম কিয়ং হুইকেও হত্যা করলেন উত্তর কোরিয়ার এই কমিউনিস্ট শাসক? সংবাদপত্রের দাবি, পিসিকে প্রাণভিক্ষা দিয়েছিলেন কিম জং উন। কিন্তু পরে হয় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে অথবা আত্মহত্যা করে মারা যান কিম কিয়ং হুই। কারণ, স্বামীর হত্যার পর তাঁকে আর জনসমক্ষে আসতে দেখা যায়নি। ঠিক যে ভাবে, ডিসেম্বরের শেষ থেকে জনসমক্ষে আসেননি জাং সং থায়েকের আত্মীয়রা। তাতেই বাড়ে সন্দেহ।
তথ্য বলছে, ২০১১ সালে যখন ক্ষমতায় আসেন কিম জং উন, তখন পাশে ছিলেন পিসেমশাই জাং সং থায়েকই। কিম সেই পিসেমশাইকেই হত্যার নির্দেশ দিলে আলোড়িত হয় গোটা বিশ্ব। শোনা যায়, ক্ষুধার্ত হাউন্ডের পালের খাঁচায় তাঁকে এবং আরও ছয় সঙ্গীকে ফেলে দিয়েছিলেন কিম। সত্যাসত্য জানার উপায় নেই। কারণ কমিউনিস্ট শাসিত উত্তর কোরিয়ার খবর সে অর্থে বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছয় না।
এ ক্ষেত্রেও অনুমান, জল্পনাই শেষ কথা। ওই দুই সংবাদপত্রের দাবি, আত্মীয়দের নিকেশ করে এ বার পিসেমশাইয়ের অনুগত আমলাদেরও খতম করার কথা ভাবছেন কিম। সত্যিটা অবশ্য বাইরের দুনিয়া থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকা উত্তর কোরিয়াই জানে। এ পারের বাসিন্দাদের শুধু অনুমানই সম্বল। |