গণধর্ষনের অভিযোগ দায়ের করার পরেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন অভিযোগকারিণী মহিলা। তবে অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, তাঁকে কেউ গ্রাম ছাড়তে চাপ দেয়নি। রফা করার জন্য সালিশি সভাও হয়নি।
সোমবার জামালপুরের শম্ভুপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অভিযোগকারিণীর বাড়িতে তালা ঝুলছে। ওই মহিলা বা তাঁর স্বামীর হদিস নেই। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন, কেউ বলতে পারেননি। ধৃত সোহেল চৌধুরীর পিসিমা মেহেরুন্নিসা বিবি অবশ্য দাবি করেন, “ওই মহিলাকে কেউ গ্রাম ছাড়তে চাপ দেয়নি। ওর অভিযোগও মিথ্যা।” |
ধৃত সোহেলকে শনিবারই পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছিল বর্ধমান আদালত। তাঁর বাড়িতেও তালা। মেহেরুন্নিসার দাবি, “ওই মহিলা থানায় যাওয়ার আগে গ্রামের অনেককেই ধর্ষণের কথা বলেছিল। আমরা অবস্থাপন্ন। তাই টাকার লোভেই সে আমাদের ছেলেকে ফাঁসিয়েছে। তিন লক্ষ টাকা চাইছিল সে আর তার স্বামী। আমরা দিইনি। এমনকী যে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা-ও আমরা দিইনি।”
তবে কি সালিশি সভা ডেকে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ স্থির করা হয়নি? মেহেরুন্নিসার দাবি, “কোনও সভা ডাকা হয়নি। আমাদের কাছে কেউ টাকা চায়নি।” আনারুল মল্লিক নামে এক গ্রামবাসীও বলেন, “সালিশি সভার খবর আমার জানা নেই।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা অবশ্য দূর থেকে আঙুল তুলে দামোদরের পাড়ে একটি চালাঘর দেখিয়ে বলেন, “ওটা আসলে একটা ক্লাব। ওখানেই সালিশী সভা বসেছিল। গ্রামের পাঁচ তৃণমূল নেতা সেখানে ছিলেন। তাঁরাও গ্রাম ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন।”
তৃণমূলের জামালপুর ব্লকের কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ পাল আগে বলেছিলেন, “ওই সালিশি সভায় আমাদের কে-কে উপস্থিত ছিল, তা তদন্ত করে বের করতে বলব পুলিশকে।” এ দিন তিনি বলেন, “এখনও খবর নিয়ে উঠতে পারিনি। পুলিশ কিছু করেছে কি না, খোঁজ নেব।” বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য বলেন, “ওই গ্রাম সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানার টাকা আদায় বা আদায়ের চেষ্টার খবর আমাদের কাছে নেই। এমন অভিযোগ কেউ করেওনি।” |
অভিযোগকারিণী গ্রামছাড়া হওয়ায় তদন্ত বাধা পাবে না?
জামালপুর থানার এক অফিসারের দাবি, “উনি গ্রামে আছেন না নেই, তাতে মামলা আটকাবে না। আমরা ভিডিও ছবিতে ওঁর জবানবন্দি ধরে রেখেছি। আদালতেও ওঁর জবানবন্দি নথিভুক্ত হয়েছে। তদন্ত ঠিকই চলবে।” পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়েছে। এর পরে আর নতুন করে তদন্তের বিশেষ কিছু নেই।”
|