দিনের বেলায় বেশ গরম। ভোর কিংবা গভীর রাত ছাড়া শীত তেমন মালুমই হচ্ছে না। সন্ধ্যার পরেও চাদর-মাফলার না জড়িয়েই বেরোচ্ছেন অনেকে। এ সব দেখে আম-বাঙালির মুখে মুখে প্রশ্ন ঘুরছে, শীত কি তবে চলেই গেল দক্ষিণবঙ্গ থেকে? আবহবিদেরা অবশ্য তা বলছেন না। তাঁদের বক্তব্য, শীত পালায়নি। বরং জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দক্ষিণবঙ্গে শীতের এমন চরিত্রটাই স্বাভাবিক।
আবহবিজ্ঞানীরা জানান, দক্ষিণবঙ্গে শীত থাকে কয়েক দফায়। ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শীতের প্রথম ইনিংস। সে সময় দিনে যেমন উত্তুরে হাওয়ার দাপট থাকে, রাতেও পারদ থাকে নিম্নমুখী। জানুয়ারির শেষেই শীতের চরিত্র বদলায়। তখন দিনের তাপমাত্রা বাড়ে। রাত কিংবা ভোরবেলা ছাড়া শীতের কামড় মালুম হয় না। এটাকেই শীতের দ্বিতীয় ইনিংস বলেন আবহবিদেরা।
যদিও এ বার প্রথম থেকেই শীতের দাপট দেখা যায়নি। একের পর এক উচ্চচাপ কিংবা ঘূর্ণাবর্তের ধাক্কায় থমকে গিয়েছিল শীতের রথ। কখনও কখনও পথ ভুলে বাংলায় ঢুকে পড়েছে দক্ষিণ ভারতের পুবালি বাতাস-ও। যার ফলে এ বার সারা দক্ষিণবঙ্গে এক বারও শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়নি। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানী বলছেন, “এ বার শুধু বীরভূমে শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে। তা-ও শুধু এক দিনের জন্য!”
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, সম্প্রতি মধ্য ভারতে ঘূর্ণাবর্তের জন্য উত্তুরে হাওয়া বাধা পাচ্ছিল। তাই দক্ষিণবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে উঠেছিল। শনিবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি বেশি। কিন্তু আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “মধ্য ভারতের বাধাটি কেটে যাচ্ছে। ফলে উত্তুরে হাওয়ার জোর বাড়বে।”
তা হলে কি শীতের দাপট বাড়বে? আবহাওয়া অফিস কিন্তু তেমন আশ্বাস দিচ্ছে না। আবহবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জানুয়ারি মাস শেষ হতে চলেছে। আবহবিজ্ঞানের খাতায় শীত এখন প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছে। পৌষ কিংবা মাঘের শুরুতে শীতের যে দাপট মেলে, তা এখন টের পাওয়া যাবে না। সেটা এখন মিলবে কেবল উত্তরবঙ্গে।
তবে এর মধ্যেও কিছুটা আশার আলো দেখাচ্ছেন আবহবিদেরা। গোকুলবাবু বলছেন, “উত্তুরে হাওয়ার জোর বাড়ার ফলে আজ, রবিবার থেকেই দক্ষিণবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা নামবে।” হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, জানুয়ারি মাসে রাতের কলকাতার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামিকাল, সোমবার মহানগরের রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকে পৌঁছে যেতে পারে বলে আবহবিদদের পূর্বাভাস। |