লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের এইমস-কে আঁকড়েই রাজ্য জুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু করল কংগ্রেস।
রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে অনশনে বসার কথা ঘোষণা করে তারই ইঙ্গিত দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
শনিবার রায়গঞ্জের মার্চেন্ট ক্লাব মাঠে ‘ধিক্কার সমাবেশে’র মঞ্চ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং পাঁচ বছর পরে সদ্য কংগ্রেসে ফেরা সোমেন মিত্র জানিয়ে দেন, রাজ্য জুড়ে তাঁদের আন্দোলনের ‘হাতিয়ার’ এখন এইমস এবং তা শুরু হবে নবান্নের দোরগোড়া থেকেই।
প্রদীপবাবু বলেন, “রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি এবং সে জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবিতে ৩১ জানুয়ারি থেকে দীপা দাশমুন্সির নেতৃত্বে নবান্নের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসবেন প্রদেশ নেতৃত্ব। বাংলা জুড়েই সেই আন্দোলন ছড়িয়ে দেব আমরা।” অনশন মঞ্চে কি সোমেনও থাকবেন?
সোমেন বলেন, “এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যা নির্দেশ দেবেন তাই করব। তিনি বললে অবশ্যই অনশনে বসব।” প্রদীপবাবু অবশ্য জানান দিন দুয়েকের জন্য দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। ফিরেই এ ব্যাপারে সোমেনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। তবে দীপাদেবী বলেন, “প্রদেশ নেতৃত্বের সব স্তরের নেতা-কর্মীকেই ওই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আমি নিজেও যে নবান্নের সামনে আমরণ অনশন করব।”
শুক্রবার যে বিমানে তাঁর উত্তরবঙ্গ সফর শুরু করতে বাগডোগরা উড়ে গিয়েছিলেন সোমেন, কাকতালীয় ভাবে সেই বিমানেই তাঁর তিন দিনের পাহাড়-সফর সেরে কলকাতা ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে, এ দিন রায়গঞ্জের মঞ্চ থেকে সোমেনর দাবি, রায়গঞ্জে এইমস হোক তা চায় না শাসক দল।
তিনি জানান, রায়গঞ্জের পরিবর্তে কল্যাণীতে এইমস গড়ার দাবি নিয়ে তৃণমূল সাংসদরা প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সোমেনবাবু বলেন, “ক্ষমতা দখলের পরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলীয় সাংসদেরা দল বেঁধে দিল্লি গিয়েছিলেন। মনমোহন সিংহের কাছে তাঁরা দরবার করেছিলেন, রায়গঞ্জ নয় এইমস হোক কল্যাণীতে। তৃণমূল সাংসদ হিসেবে সেই দলে আমিও ছিলাম। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী সে দিন আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে কথা দেওয়া আছে, রায়গঞ্জেই এইমস গড়তে চায় তাঁর সরকার।” সোমেনবাবুর অভিযোগ, “গত পাঁচ বছর তৃণমূলের এমনই অনেক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সাক্ষী থেকেছি।’’
গত ৬ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে জানান, জমি-জটে দেশ জুড়ে এইমসের ধাঁচে নতুন হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করা হয়েছে। বদলে গড়া হবে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। দলীয় সূত্রে খবর, এই ঘোষণার পরেই প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশে ক্ষোভ তৈরি হয়। লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই ঘোষণা রায়গঞ্জ-সহ রাজ্যে কংগ্রেসের কাছে ‘বড় ধাক্কা’ এবং তা তৃণমূলকে ‘বাড়তি রাজনৈতিক সুবিধা’ দেবে বলেও দাবি করেন তাঁরা।
লোকসভা নির্বাচনের মুখে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় দল যাতে বিপাকে না পড়ে, সে জন্য কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এরপরে রায়গঞ্জে ধিক্কার সমাবেশ’-এর ডাক দেয় প্রদেশ কংগ্রেস। এ দিন, দীপাদেবী কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণার প্রেক্ষাপটও বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ না-করায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। মনে রাখতে হবে, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য কেন্দ্র টাকা দিতে প্রস্তুত। রায়গঞ্জের পানিশালা এলাকার চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতেও রাজি। কিন্তু রাজ্য সরকার তা করছে না।”
উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি অমল আচার্য অবশ্য কংগ্রেসের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “সোমেনবাবুর মতো নেতারা দলে সুবিধা করতে না পেরে এখন মিথ্যে কথা বলছেন।” |