রাজ্য ও জেলা স্তরের অনেক পোড় খাওয়া নেতা ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। এই অবস্থায় লোকসভা ভোটে একলা চলার হুমকি দিয়েও প্রার্থী বাছতে হিমসিম খাচ্ছে কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত সাত জন দলীয় বিধায়ককে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিতে চলেছে প্রদেশ কংগ্রেস।
দু’দিন আগে প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচন কমিটির বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের পর দার্জিলিং ছাড়া বাকি ৪১টি আসনে প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করে একটি তালিকা তৈরি করেছেন প্রদেশ নেতারা। সূত্রের খবর, শেষ মুহূর্তে বড়সড় কোনও বদল না হলে এই তালিকাটিই হাইকম্যান্ডের গড়া স্ক্রিনিং কমিটির কাছে পাঠানো হবে। সোমবার থেকেই দিল্লিতে কংগ্রেসের স্ক্রিনিং কমিটির বৈঠক শুরু হবে। তার পর ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই লোকসভা প্রথম দফার প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব যে সাত জন কংগ্রেস বিধায়ককে এ বার লোকসভা ভোটে প্রার্থী করতে চাইছেন তাঁরা হলেন কোচবিহারে কেশবচন্দ্র রায়, আলিপুরদুয়ারে জোসেফ মুন্ডা, জলপাইগুড়িতে সুখবিলাস বর্মা, উলুবেড়িয়ায় অসিত মিত্র, পুরুলিয়ায় নেপাল মাহাতো, দুর্গাপুর-বর্ধমানে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বোলপুর অথবা বীরভূম থেকে অসিত মাল।
এ ছাড়াও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে শঙ্কর সিংহ, যাদবপুরে কৃষ্ণা দেবনাথ, বালুরঘাটে ওমপ্রকাশ মিশ্র, দক্ষিণ কলকাতায় মালা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও প্রার্থী হিসাবে প্রথম পছন্দের বলে প্রস্তাব দিয়েছেন প্রদেশ নেতৃত্ব।
বস্তুত বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের সময় কেন্দ্রওয়াড়ি তিনটি করে নাম রাজ্য নেতৃত্ব পাঠান। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই নামগুলি পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্র থেকে আর কোনও দাবিদার না থাকলে অবশ্য একটি নামই পাঠানো হয়। প্রদেশ নির্বাচন কমিটির তালিকায় ১১টি কেন্দ্রের জন্য একটি করে নাম পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ৬ জন কংগ্রেসের বর্তমান সাংসদ। বর্তমান সাংসদদের কারও আসন পরিবর্তনের প্রস্তাব এখনও দেওয়া হয়নি। এমনকী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে তাঁর বর্তমান কেন্দ্র জঙ্গীপুরেই প্রার্থী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও যে পাঁচ আসনে কেবল একজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, সেই সব আসন এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন উত্তর কলকাতা আসনে সোমেন মিত্র, রানাঘাটে প্রতাপকান্তি রায়, আলিপুরদুয়ারে জোসেফ মুন্ডা, পুরুলিয়ায় নেপাল মাহাতো এবং বর্ধমান পূর্ব আসনে জোসেফ মাঝি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠক শুরু হওয়ার আগে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড দাবি করেছিল এ বার অনেক বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তরুণ নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেবে কংগ্রেস। সেই বিচারে কংগ্রেসের বর্তমান ৬ সাংসদের মধ্যে তিন জনই মুসলিম। কিন্তু বাকি আসনগুলির মধ্যে প্রার্থী হিসাবে প্রথম পছন্দে নাম রয়েছে মাত্র তিন মুসলিম নেতার। তবে তিন পছন্দ মিলিয়ে মোট ১৩ জন মুসলিম নেতা-নেত্রীর নাম রয়েছে। এ ছাড়াও রাহুল শিবির থেকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ইন্দ্রাণী মিশ্রকে। আসানসোল কেন্দ্রের জন্য তাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই তালিকা তৈরির পরেও একটি মৌলিক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তা হল, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট কি কিছুতেই হচ্ছে না? প্রদেশ কংগ্রেস সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে বটে, কিন্তু জোট যে কিছুতেই হচ্ছে না এই ঘোষণা কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এখনও করেনি। অনেকে বলছেন, শেষ মুহূর্তে তেমন সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
জোট বিতর্কে না গিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের এক নেতা আজ বলেন, তাঁরা চাইছেন যথাসম্ভব নিজের শক্তিতে লড়াই করতে। সেই কারণেই দলের সাত জন বিধায়ককে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এঁরা প্রার্থী হলে ওই সব কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের জেতা অবশ্যই কঠিন হবে। |