অনেক স্বপ্ন নিয়ে নদিয়ার কৃষ্ণনগর বিপিসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছিলেন সোমনাথ ঘোষ। তাঁর বাঁ হাত পঙ্গু। ভর্তির সময় কাউন্সেলিং- এ শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী ‘টার্নার ট্রেডে’ ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ক্লাস শুরু হতেই দেখা দেয় বিপত্তি। ওই ট্রেডের এক শিক্ষকের কাছে তাঁকে শুনতে হয়‘তোমার বাঁ হাত পঙ্গু। ওই হাতে কোনও কাজ হবে না। তুমি আর ক্লাসে আসবে না।’
অপমান আর স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন কৃষ্ণনগরের গন্ধর্বপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের প্রতিবন্ধী ওই ছাত্র। সোমনথের আক্ষেপ, “ভেবেছিলাম আইটিআই কলেজে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। কিন্তু সে আর হল কই!”
সোমনাথ একা নন, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ফি বছর সোমনাথের মতো বহু প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীর কারিগরি শিক্ষার স্বপ্ন এভাবেই ভেঙে যাচ্ছে। অথচ রাজ্যের প্রতিটি আইটিআই কলেজে প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু সেই আসনগুলিতে ভর্তি হওয়ার পর মাঝ পথে পড়াশোনায় দাঁড়ি টানতে হয় বহু প্রতিবন্ধী পড়ুয়াকে।
কৃষ্ণনগরের বিপিসি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শরদিন্দু কুণ্ডু বলেন, “আসন সংরক্ষণের কারণে প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের ভর্তি নিতেই হয়। কিন্তু তাঁদের জন্য আলাদা কোনও পরিকাঠামো নেই। ফলে অন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই তাঁদের ক্লাস করতে হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সেটা শুধু সমস্যারই নয়, কখনও কখনও বিপজ্জনকও বটে।” |
হাল-হকিকত |
• আগামী বছর অগস্টের মধ্যে ছাত্রাবাস তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে।
• প্রতিবন্ধী ছাত্রদের জন্য ১০০টি ও ছাত্রীদের জন্য ৫০টি আসন।
• ছাত্রাবাসে থাকার জন্য কোনও খরচ লাগবে না।
• জেলার ছাত্রছাত্রীরাও এখানে থেকে পড়তে পারবেন। |
|
রাজ্যে আইটিআই কলেজের সংখ্যা ৫৯। প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কলকাতার এসএন ব্যানার্জী রোডে একটি আইটিআই কলেজ আছে। আইটিআই ফর ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড বয়েজ অ্যান্ড গার্লস নামে ওই কলেজে ছাত্রদের জন্য ১০৬টি এবং ছাত্রীদের জন্য ১০টি আসন আছে। কিন্তু সেখানে আবার উল্টো চিত্র। প্রতিবন্ধীদের জন্য রাজ্যের একমাত্র কলেজ হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রাবাস না থাকার কারণে ওই কলেজে সেভাবে প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারা ভর্তি হন না। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতি বছর ফাঁকা আসনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নেওয়া হয়।
রাজ্যের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এর ডাইরেক্টর হরিপ্রসন্ন দে জানান, এই সমস্যা সমাধানের জন্য কলেজটিকে আবাসিক কলেজ করা হচ্ছে। হরিপ্রসন্নবাবু বলেন, “প্রতিবন্ধীদের ওই কলেজে ১৫০ আসনের একটি হস্টেল তৈরি হচ্ছে।”
রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের সমস্যার কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ। জেলার ছাত্রছাত্রীরাও হস্টেলে থেকে এই কলেজে পড়তে পারবেন।”
আগামী বছর অগস্ট মাসের মধ্যেই হস্টেল তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে। হরিপ্রসন্নবাবু বলেন, “ইতিমধ্যে একটি সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।” ষোল আনা ইচ্ছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আইটিআই কলেজে পড়া হয়নি সোমনাথের। হতাশ ওই ছাত্র বাধ্য হয়ে নদিয়ার আসাননগর মদনমোহন তর্কালঙ্কার কলেজে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। সোমনাথ বলেন, “এটা অত্যন্ত ভাল খবর। এমন সুযোগ আগে পেলে আমিও কলকাতার ওই কলেজে ভর্তি হতে পারতাম।” |