|
|
|
|
বাড়ির চার জনকে খুন, ধৃত যুবক
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাঁথি |
একই পরিবারের চার জনের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হল কাঁথির মুকুন্দপুর গ্রামে। মা, দাদা, বৌদি এবং পাঁচ বছরের ভাইঝিকে গলায় কোপ মেরে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক যুবককে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই পরিবারের চার জনকে খুন করেছেন দেবব্রত দাস নামে ওই যুবক। মেয়ের বাড়িতে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন বৃদ্ধ বাবা।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার দুপুরে। সন্ধের পর মারিশদা থানা এলাকা থেকে দেবব্রতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কাঁথির মহকুমা পুলিশ অফিসার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ক’দিন ধরে ওই পরিবারে অশান্তি হচ্ছিল। তার জেরেই দেবব্রত সকলকে খুন করেছেন বলে অনুমান।” ঘটনাস্থল থেকে একটি চপার উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মহেশ্বর মণ্ডলের করা অভিযোগের ভিত্তিতে দেবব্রতর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতেরা হলেন দেবব্রতর মা ঊর্মিলা দাস (৬০), দাদা অনুকূল (৪৫), বৌদি মৌমিতা (৩৬) এবং পাঁচ বছরের ভাইঝি মম। কাঁথি ১ ব্লকের দুলালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা এই দাস পরিবার। বাড়ির কর্তা দেবব্রতের বাবা অবন্তী দাস অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। অনুকূলবাবু এগরা মহকুমাশাসকের দফতরের কর্মী ছিলেন। আর দেবব্রতর মুদির দোকান রয়েছে। সম্প্রতি সম্পত্তি নিয়ে অনুকূল ও দেবব্রতের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ক’দিন ধরেই অশান্তি চলছিল। তার জেরে অবন্তীবাবু দিন কয়েক আগে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। শনিবার দুপুরে ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকাল থেকে ফের দাস পরিবারে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়। অবন্তীবাবু ছাড়া সকলেই বাড়িতে ছিলেন। দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিবাদ চরমে ওঠে। উত্তেজিত হয়ে ছোট ভাই দেবব্রত চপার দিয়ে একে একে মা, দাদা, বৌদি ও ভাইঝির গলায় কোপ মারে বলে অভিযোগ। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল থেকেই ওই বাড়িতে চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছিল। তারই মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান দেবব্রতর স্ত্রী ও ৮ বছরের ছেলে। মাঝেমধ্যেই ওই পরিবারে অশান্তি হয় বলে পড়শিরা বিশেষ গুরুত্ব দেননি। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ দেবব্রতকে মোটর সাইকেলে চেপে চলে যেতে দেখেন গ্রামবাসীরা। তারপর থেকে গোটা বাড়ি নিশ্চুপ দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তাঁরা দাস বাড়িতে গিয়ে দেখেন, চার জনের রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীরাই পুলিশে খবর দেন।
বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ কাঁথি থানার পুলিশ মুকুন্দপুর গ্রামে পৌঁছয়। মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে যান পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন ও ডিআইজি (পশ্চিমাঞ্চল) অজয় নন্দ। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের সুপ্রভা নায়েক এলাকারই বাসিন্দা। তিনি বলেন, “ওই পরিবারে দীর্ঘ দিন ধরে অশান্তি চলছিল। পঞ্চায়েতও মীমাংসার চেষ্টা করে। সমস্যা মেটানো যায়নি। তবে শেষমেশ যে এই পরিণতি হবে, তা কেউ ভাবিনি।”
এ দিন সন্ধের পরে মারিশদা থানা এলাকা থেকে দেবব্রতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তাঁর স্ত্রী ও ছেলের খোঁজ মেলেনি এখনও। ওই দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। |
|
|
|
|
|