ঠিক এক বছর আগের ফাইনালে মেলবোর্ন পার্কের প্লেক্সিকুশন-এ দু-দু’বার হোঁচট খেয়ে এক ফাইনালিস্টের বিপজ্জনক আছড়ে পড়া দেখে শিউরে উঠেছিলেন অনেকেই। দর্শকদের বেশির ভাগের এখনও মনে আছে, চোট পাওয়ার পর ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কার কাছে ৬-৪, ৩-৬, ৪-৬ হারটা সে বারের চতুর্থ বাছাইয়ের জন্য কতটা হৃদয়বিদারক ছিল। তবু চোট নিয়ে অসাধারণ লড়াইয়ের ওই স্কোরলাইনই বলে দেয়, লি না আদতে ঠিক কত বড় ফাইটার!
চিনা মেয়েটার এই লড়াকু মানসিকতায় ঈশ্বরও বোধহয় মুগ্ধ! তাই এ বছর ঈশ্বরও ওর পাশে ছিলেন। শনিবারের ফাইনালে ডমিনিকা সিবুলকোভাকে ৭-৬, ৬-০ উড়িয়ে দিয়ে নিজের প্রথম অস্ট্রেলীয় ওপেন খেতাব জিতে নিল লি। এবং আরও একবার স্কোরলাইন বলে দিচ্ছে, ফাইনালে ঠিক কী রকমের বিধ্বংসী টেনিস খেলেছে ও। তৃতীয় বার এখানে ফাইনালে ওঠার পর খেতাবটা ওর প্রাপ্য ছিল। লি-র ঝুলিতে এটা দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব। ওকে আন্তরিক অভিনন্দন। অস্ট্রেলীয় ওপেনে ও-ই প্রথম এশীয় যে সিঙ্গলসে খেতাব জিতল। শুধু তাই নয়, একত্রিশ বছরের লি ওপেন যুগে মেলবোর্ন পার্কের সবচেয়ে বেশি বয়সি চ্যাম্পিয়ন! লি-র এই সাফল্য এ বার বহু প্লেয়ারকে নতুন করে উদ্বুদ্ধ করবে। ওকে দেখে আশার নতুন আলো খুঁজে পাবে অনেকেই! |
স্বপ্নের সান্নিধ্যে
চ্যাম্পিয়ন লি ও রানার্স সিবুলকোভাকে নিয়ে কিংবদন্তি ক্রিস এভার্ট।
শনিবার অস্ট্রেলীয় ওপেনে মেয়েদের ফাইনালের পরে। ছবি: গেটি ইমেজেস। |
লি-র কাছে হারলেও ডমিনিকা সিবুলকোভা দেখলাম নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে নামতে পেরে দারুণ রোমাঞ্চিত। ওর মতোই জীবনে প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে পৌঁছে দারুণ উত্তেজিত হয়ে আছে স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কাও। নোভাক জকোভিচকে ছিটকে দিয়ে ও টুর্নামেন্টের সেরা অঘটনটা ঘটানোর পরে আমরা অনেকেই হয়তো একটা অল-সুইস ফাইনাল চেয়েছিলাম। রাফায়েল নাদালের অবশ্য অন্য পরিকল্পনা ছিল। সেমিফাইনালে যে নির্মম আগ্রাসনে ও ফেডেরারের ছুটি করে দিল, সেটা দেখার পর ফাইনালের যুদ্ধ ঠিক কতটা কঠিন হতে চলেছে, সেটা ভেবে ওয়ারিঙ্কার হাড় হিম হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক!
ওয়ারিঙ্কা নিজে অবশ্য এই টুর্নামেন্টে দুর্ধর্ষ ফর্মে। শুধু আগের দু’বারের চ্যাম্পিয়ন নোভাককে হারানোই নয়, টমাস বের্ডিচের বিরুদ্ধেও অসাধারণ ছিল ও। তবু মানতেই হচ্ছে, আগুনে ফর্মের রাফার বিরুদ্ধে ফাইনালে ওর কাজটা তুলনায় একটু কঠিন। ওর রাস্তায় প্রথম হার্ডল অবশ্যই অভিজ্ঞতা। ওর প্রতিপক্ষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলা ব্যাপারটাকে স্রেফ জলভাত করে ফেলেছে। রাফার এটা ১৯ নম্বর ফাইনাল। যা ইভান লেন্ডলের সমান। গ্র্যান্ড স্ল্যামে সবচেয়ে বেশি, ২৪টা ফাইনাল খেলেছে ফেডেরার। কিন্তু রাফার কোর্ট কভার করার ক্ষমতা এ বার ফেডেরারকেও তাজ্জব করে দিয়েছে! সেই ফেডেরার, যে কিনা রাফার খেলার ধরন বাদবাকিদের তুলনায় অনেক বেশি ভাল করে চেনে! সঙ্গে এটাও ভুললে চলবে না, সেই ফেডেরারই সেমিফাইনালে রাফার কাছ থেকে পয়েন্ট কাড়তে গিয়ে বেশির ভাগটাই নাস্তানাবুদ হয়েছে।
ফাইনালে ওয়ারিঙ্কাকে হারালে নিজের ১৪ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জিতবে রাফা। গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীদের তালিকায় পিট সাম্প্রাসের সমান হয়ে ওঠার সঙ্গে একটা দারুণ নজিরও গড়ে ফেলবে, প্রতিটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম দু’বার করে জেতার। ওপেন যুগে যা আর অন্য কেউ করে দেখাতে পারেনি। এমন অনবদ্য ইতিহাস গড়ার হাতছানি তো আছেই। তার সঙ্গে যোগ করুন, গত বছর হাঁটুর মারাত্মক চোট নিয়ে সাত মাস কোর্টের বাইরে ঘোর অনিশ্চয়তায় দিন কাটানোর পর ফিরে ফরাসি আর যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জিতে এক নম্বর হয়ে বছর শেষ করা-- ফাইনালে স্প্যানিশ যে অনেকটাই এগিয়ে, সেটা বলে দিতে হয় না!
তবে রড লেভার এরিনায় রবিবার ওয়ারিঙ্কা স্রেফ ফুঁয়ে উড়ে যাবে ভাবলে কিন্তু মস্ত ভুল হবে। সদ্য ফেডেরারকে হটিয়ে সুইৎজারল্যান্ডের সর্বোচ্চ র্যাঙ্কিংয়ে থাকা টেনিস প্লেয়ারের আসনটা জীবনে প্রথম বার দখল করেছে ও। জীনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যামেও কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।
|
সবাই বলছে আমি নাকি এখানে তৃতীয় বার লাকি! চিনে আমরা কিন্তু ৬ আর ৮-কে লাকি ধরি, ৩-কে নয়। গত বার উইম্বলডনের আগে অবসর নিতে চেয়েছিলাম। আমার কোচ কার্লোস ধমকে থামায়। ধন্যবাদ কার্লোস। তুমি আমার উপর সব সময় আস্থা রেখেছ আর বিশ্বাস করে গিয়েছ যে, আমি আরও ভাল করতে পারব। বিশেষ করে এ বার শীতে আমরা একসঙ্গে প্রচুর খেটে তৈরি হয়েছি। ম্যাক্স, আমার এজেন্ট, তোমাকে ধন্যবাদ আমায় বড়লোক করে দেওয়ার জন্য। এ বার স্বামী। চিনে দারুণ জনপ্রিয় মানুষ। কিন্তু সব ছেড়েছুড়ে আজকাল আমার সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়, আমার র্যাকেট সারায়, ড্রিঙ্ক বানায়। তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি খুব ভাল মানুষ। অবশ্য তার থেকেও বেশি ভাগ্যবান। কারণ তুমি বউ হিসাবে আমাকে পেয়েছ!
লি না |
|