অটোর দৌরাত্ম্য রুখতে তিনি তখন হাজরায়। তার তিন কিলোমিটারের মধ্যে নিউ আলিপুরে খুচরো নিয়ে বচসার জেরে এক তরুণীর গলা টিপে ধরলেন এক অটোচালক! পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার দুপুরে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের অটো-শাসন অভিযান চলার সময় এই ঘটনা শহরের অটো-দৌরাত্ম্যকেই ফের প্রমাণ করল।
নিউ আলিপুরে কী ঘটেছে এ দিন?
পুলিশ সূত্রের খবর, বেহালা কালীপদ মুখার্জি লেনের বাসিন্দা বছর সাতাশের সোলাঙ্কি সেনগুপ্ত পার্কসার্কাসে একটি টেলিকম সংস্থার কর্মী। তাঁর অভিযোগ, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি নিউ আলিপুরের চণ্ডীতলায় এক গ্রাহকের বাড়িতে অফিসের কাজে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে একটি অটোতে ওঠেন। ১১টা নাগাদ নিউ আলিপুর মোড়ে পৌঁছে ভাড়া দেওয়ার জন্য অটোচালক বাপি সিংহকে একটি ৫০ টাকার নোট দেন। অটোচালক ভাড়ার ছ’টাকা খুচরো চান। তরুণী জানান, টাকাটি খুচরো করে আনার জন্য চালককে দু’মিনিট দাঁড়াতে বলেন তিনি। তাতেই খেপে গিয়ে তাঁর হাত থেকে টাকাটি এক প্রকার ছিনিয়ে নেন চালক। মেয়েটির কথায়, “টাকাটা কেড়ে নিয়ে খুচরো করে আনতে বলে চালক! আমি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করি, টাকাটা ফেরত না দিলে কী করে খুচরো করাব!”
তাঁর অভিযোগ, কোনও কথাই শুনতে চাননি চালক। উল্টে তাঁর ভাড়ার জন্য এত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় সময় নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করে চিত্কার করতে থাকেন অটোচালক।
সোলাঙ্কি বলেন, “এর পরেই ওই চালক আমার গলা টিপে ধরেন। ওর হাত দু’টি ছাড়ানোর চেষ্টা করি। চেঁচাতে থাকি। দেখতে পেয়ে অন্য এক অটোচালক দৌড়ে আসেন। তিনি আসতেই বাপি আমার গলা থেকে হাত সরিয়ে নেন। ওই চালকের কথাতে গাড়ি নিয়ে চলে যান বাপি। আমি তার থেকে টাকাটা নিয়ে নিই।” অটো চলে যেতেই তার শেষ চারটি নম্বর (৭০৪৫) লিখে রেখেছিলেন তরুণী। পরে নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযোগ পেয়েই তল্লাশিতে নেমে অটোটি আটক করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় চালক বাপি সিংহকে। একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত অটোচালককে আজ, রবিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে ।
নিউ আলিপুর চত্বরে এমন ঘটনা নতুন নয়। ক’ দিন আগেই ভাড়া নিয়ে বচসার জেরে এক মহিলার নাক ফাটিয়ে দেন এক অটোচালক। বেকবাগানে অল্প দূরত্বের জন্য বেশি ভাড়া চাওয়ার ঘটনা ঘিরে বচসার জেরে লোহার রড দিয়ে এক
মহিলার মাথা ফাটিয়ে দেন অটোচালক। যাদবপুরের রামগড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে বেপরোয়া অটোর ধাক্কায় প্রাণ গিয়েছিল ঋষিকেশ সেনগুপ্ত নামে এক প্রবীণের। প্রতিবাদে পথে নামেন মানুষ। পরিবহণ মন্ত্রী এ দিন মৃতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেন। এ দিন ফের নিউ আলিপুরে নিগৃহীত হলেন সোলাঙ্কি।
পরিবহণমন্ত্রীর কথায়, “অটোচালকেরা কেন এত হিংস্র হয়ে উঠছেন, তা বুঝতেই বেরিয়েছিলাম।” যদিও তিনি নিজে এমন ঘটনার সাক্ষী হননি। কিন্তু তাঁর পরিদর্শনস্থল থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে এক অটোচালকের হিংস্র হয়ে ওঠার সাক্ষী থাকল কলকাতা। |