হাটে নয়, আজ কবিতা বাড়িতে
জ আর জহিরুদ্দিন মিয়াঁ পায়ে ঘুঙুর বেঁধে কবিতার বই হাতে হাটে-বাজারে দিকে যাননি। মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতেই ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। কেউ নেড়েচেড়ে দেখছেন বঙ্গরত্ন পুরস্কার। কেউ এক লক্ষ টাকার চেক হাতে নিয়ে দেখছেন। কেউ দেখছেন তাঁর
চারণ-কবি জহিরুদ্দিন।
মানপত্র। জহিরুদ্দিনবাবু কিন্তু সবাইকে কবিতা শোনানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর লেখা কবিতা‘মেয়ের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে, নানা-নাতনির প্রেম।’ সুর করে পড়ছেন থামছেন, হাসছেন এক প্রাপ্তির হাসি। আবার পড়ছেন। বেজে উঠছে তাঁর ঘুঙুর।
কোচবিহারের অখ্যাত ধলুয়াবাড়ি গ্রাম এক দিনেই বিখ্যাত হয়ে উঠেছে চারণ কবি জহিরুদ্দিন মিয়াঁর জন্য। সোমবার টেলিভিশনের পর্দায় সবাই দেখেছেন শিলিগুড়িতে তাঁর হাতে বঙ্গরত্ন পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সকালে তাই সবাই ভিড় করেন তাঁর বাড়িতে। পুরস্কার হাতে নিয়ে দেখার পর জহিরুদ্দিনের কবিতা শুনছেন সবাই। এলাকার এক বাসিন্দা মহিরণ বেওয়া কিংবা আর এক জন তাহের মিয়াঁরা বলেন, “আমরা তো এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না, আমাদের জহিরুদ্দিন বঙ্গরত্ন পেয়েছেন। ওঁর কবিতা আমরা সবাই আগে শুনেছি। এ দিন আবার নতুন করে শুনছি।”
দরমার বেড়া দেওয়া ছোট ছোট দুটি ঘর। তার একটি রান্নার, অন্যটি শোওয়ার। চালের টিনের ভেঙে যাওয়া জায়গা দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকছে ঘরে। দশ বছরের ছেলেকে নিয়ে কবির সংসার। কয়েক বছর আগে স্ত্রী’র মৃত্যু হয়েছে। মেয়ে থাকে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। বছর ষাটের জহিরুদ্দিন জানিয়েছেন, দিনমজুরের পরিবারে জন্ম। তৃতীয় শ্রেণি পাশ করে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম। আর লেখাপড়া হয়নি। সে সময় থেকে মন কেড়েছিল পল্লির কবিরা। বিশেষ করে জলপাইগুড়ির সুধীর পণ্ডিত। সেই শুরু। তার পর কখন যে ধীরে ধীরে চারণ কবি হয়ে উঠেছেন তা বলতে পারেন না তিনি নিজেই।
বাড়ি থেকে খানিক দূরে ঘুঘুমারি বাজার। সেখানে সবাই এক ডাকে চেনেন জহিরুদ্দিনকে। বাস স্ট্যান্ড, পানিশালা, হরিণচওড়া সব জায়গায় তিনি একটা পরিচিত মুখ। বহু দিন সকাল হলেই অনেকেই দেখতেন পায়ে ঘুঙুর বেঁধে জহিরুদ্দিন কবিতা বলে যাচ্ছেন। তা অনেকেই শুনতেন। অনেকে দু’ টাকা দিয়ে তাঁর কবিতার বই কিনে নিয়ে যেতেন। এভাবেই অন্তত তিরিশ বছর ধরে সংসার চলছে তাঁর। জহিরুদ্দিনবাবুর দু’টি চোখেই সমস্যা রয়েছে। ভাল দেখতে পান না। তাঁর কথায়, “সাড়ে চার হাজারের বেশি কবিতা লিখে ছাপিয়েছি। সে সব বই বাজারে, বাসে, স্টেশনে বিক্রি করে যা আয় হত, তাই দিয়ে তাঁর সংসার চলেছে। সব কবিতাই মুখস্থ। সুর করে সব শোনাতাম। যাদের ভাল লাগত কিনে নিত।” কয়েকদিন আগে কোচবিহার বইমেলা কমিটি ও নায়েব আলি টেপু স্মরণ সমিতির পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয় জহিরুদ্দিনকে। দুই কমিটির দায়িত্বে থাকা পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “এ রকম একজন মানুষ বঙ্গরত্ন পাওয়ায় আমরাও সংবর্ধনা জানাব।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.