|
|
|
|
|
সিনেমাওয়ালা |
বাকিটা দর্শক |
কলকাতার সিনেমা হলে সপ্তাহ দুয়েক চলেছিল ছবিটা। লোকজনের কাছে ঠিকঠাক খবর পৌঁছনোর আগেই আমজনতার চোখের আড়ালে চলে যায় ছবিটা— বাকিটা ব্যক্তিগত। যথেষ্ট দর্শক হয়নি জানিয়ে কিছু শো বাতিল করেছে মহানগরের মাল্টিপ্লেক্স। এর বাইরে তামাম বঙ্গদেশে তো প্রদর্শনের ব্যবস্থাই হয়নি। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া ও দর্শকদের প্রশংসা পাচ্ছিল। ছবিটা হয়তো ব্যক্তিগত বন্ধুদের বৃত্তেই আটকে যেত। কিন্তু তরুণ পরিচালক ‘কুছ পরোয়া নেহি’ বলে নিজেই এলসিডি প্রজেক্টরে তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনিচিত্র দেখাতে বেরিয়ে পড়েছেন। পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য শুরুটা করেছিলেন নদিয়ার তেহট্টে, তাঁর নিজের শহরে। তাঁর কথায়, “আমি জানতাম, মানুষ ছবিটা দেখবেন। সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই একটা চেষ্টা শুরু করি। তেহট্টে ছবিটা দেখাতে হাজার পনেরো টাকা খরচ হয়েছিল।” |
ঝাড়গ্রামের একটি হলে ছবিটা দেখছেন দর্শকেরা। |
বন্ধুদের থেকেই টাকাটা জোগাড় করে ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ২৫ টাকার টিকিটে একটা কমিউনিটি হলে ছবিটা দেখানো হয়। পুরো টাকাই উঠে আসে। সোমবার ঝাড়গ্রামে কথাকৃতি-র নাট্যমিলনী উৎসবে দেখানো হয় বাকিটা ব্যক্তিগত। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় পুরুলিয়া শহরের একটি চলচ্চিত্রোৎসবে সেটি দেখানোর কথা। পরে বরাকর, মাইথন, বহরমপুর। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি থেকেও ডাক আসছে। আর এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জেরেই হয়তো আবার রিলিজ করছে ছবিটি। প্রদীপ্ত জানালেন, “আপাতত ঠিক হয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি ছবিটা ফের সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। তখন হয়তো দর্শকেরা আবার বড় পর্দাতেই ছবিটা দেখতে পাবেন।” কিন্তু অন্য এমন অনেক ব্যতিক্রমী ছবি মফস্সলের দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নতুন ‘সার্কিট’ তৈরি করলেন প্রদীপ্ত। |
সুরের চক্রে |
কয়েক বছর বাদে-বাদেই উত্তরপাড়াকে ধন্যবাদ দিয়ে যান পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। কী করে ভোলেন, উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্র দিয়েই কুলীন অনুষ্ঠানে গাওয়া শুরু তাঁর। কলকাতার ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্সের চেয়ে মাত্র বছর পাঁচেকের ছোট, সূচনা ১৯৫৭-য়। প্রতি বছরই ২৩-২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ও ২৫ জানুয়ারি রাতভর সুর-তালের আলাপে-বোলে-গমকে উচ্চকিত হয় গঙ্গাতীরে জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ। |
|
হয়ে এসেছে টানা ৫৭ বছর। কে আসেননি? আমির খাঁ থেকে রবিশঙ্কর, ভীমসেন যোশী থেকে আমজাদ আলি, বিরজু মহারাজ, জাকির হুসেন, হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া— বাদ নেই প্রায় কেউই। তরুণ শিল্পীদের রসিকমহলে পরিচিত করানোটাও দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। এ বার যেমন গাইবেন কিরানা ঘরানার নবীন গায়ক, কর্ণাটকের জয়াতীত মেহুণ্ডি। হরিপ্রসাদের ভ্রাতুষ্পুত্র রাকেশ চৌরাসিয়া বাজাবেন বাঁশি। মোহনবীণায় বিশ্বমোহন ভাট বা দ্বৈতগায়নে রাজন ও সাজন মিশ্রের মতো প্রবীণেরাও আছেন। থাকছেন মোহনলাল মিশ্র, গোবিন্দ বসু, মালবিকা সেন, বিক্রম ঘোষ, এন রাজমও। |
সুচিত্রা-পাগল |
সামনে থেকে প্রথম সুচিত্রা সেনকে দেখেছিলেন কলকাতা বিমানবন্দরের কাছে গৃহদাহ-র শ্যুটিংয়ে। “সেটা ছিল ১৯৬৬-র ডিসেম্বর বা ১৯৬৭-র জানুয়ারি”— এত বছর বাদে আর ঠিক মনে করতে পারেন না ষাটোর্ধ্ব শরৎ কোনার। নানা সময়ে আরও তিন বার সুচিত্রার শ্যুটিং দেখেছেন। যদিও কাছে যাওয়ার বা কথা বলার সুযোগ পাননি। তবে ১৯৮৩ থেকে ফি বছর ৬ এপ্রিল, মহানায়িকার জন্মদিনে ফুলের তোড়া নিয়ে বর্ধমান থেকে তাঁর বালিগঞ্জের বাড়িতে গিয়েছেন। শরৎবাবুর কথায়, “গত বার দারোয়ান ফুল পৌঁছে ফিরে বললেন, ‘ম্যাডাম বলেছেন, বর্ধমানের পাগলটাকে বলিস, এ সব যেন আর না করে।’ মনেও রেখেছেন ঠিক!” শরৎবাবুর বাসের ব্যবসা। ৬ এপ্রিল তাঁর বাসে উঠলে যাত্রীদের মিষ্টিমুখ করানো হয়। উত্তম-সুচিত্রা ফ্যান ক্লাবও গড়ে ফেলেছেন তিনি। “উত্তমকুমার আর সুচিত্রা সেনকে আমি বাবা-মা মনে করি, জানেন তো?” ১৯৮০ সালে উত্তমের মৃত্যুর পরে তিনি মাথা মুড়িয়ে শ্রাদ্ধও করেছিলেন। এ বার অবশ্য তত দূর যাননি। এখন তাঁর একটাই সাধ, বর্ধমান শহরে পাশাপাশি উত্তম-সুচিত্রার পূর্ণাবয়ব মূর্তি বসানো হোক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরবারেও সেই আর্জি জানানো হয়েছে।
|
কাঁসাই-সন্ধান |
মুকুটমণিপুর মেলার ষোলো বছরেও প্রকাশিত হল স্মরণিকা ‘কাঁসাই-কুমারী’। কিন্তু নতুন যা তা হল, কাঁচা হাতের গল্প-কবিতা-উপন্যাস শুভেচ্ছা-বার্তায় স্মরণিকা ভরতে চায়নি মেলা কমিটি। বরং এই স্মরণিকাকেই করে তুলতে চেয়েছে আঞ্চলিক ইতিহাসের এক সনিষ্ঠ সংকলন। ইঁদপুর, হিড়বাঁধ, খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সিমলাপাল, তালড্যাংরা ব্লকের আলাদা আলাদা ইতিহাস লিখেছেন অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়, দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরাঙ্গসুন্দর সুবুদ্ধি, গিরীন্দ্রশেখর চক্রবর্তী, রামামৃত সিংহমহাপাত্র প্রমুখ। রয়েছে শবর সম্প্রদায়, ভূদান আন্দোলন, খাতড়া আদালতের ইতিবৃত্তের মতো অনুসন্ধানী লেখা। সম্পাদক তথা খাতড়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বাবুলাল মাহাতোর ব্যাখ্যা, “আমাদের মতো প্রশাসকেরা সাময়িক ভাবে এখানে আসেন। ব্লকগুলি তথা মহকুমার চরিত্র বুঝতে এই ধরনের সংকলন কাজে লাগবে। সেই বোঝাটা উন্নয়নমূলক কাজকর্মের প্রথম ধাপ, আবার আত্মানুসন্ধানও বটে।” ১৯৬৬-তে অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল বাঁকুড়া জেলা গেজেটিয়ার। তার পরে আর বেরোয়নি। সরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত ‘কাঁসাই-কুমারী’ এক অর্থে দক্ষিণ বাঁকুড়ার জেলা গেজেটিয়ারেরও কাজ করবে। |
আবার হৃদয় |
সরকারি সাহায্য নেই। নেই ব্যাঙ্কঋণ। বিদেশি সংস্থার কাছে হাত পাতা হয়নি। স্রেফ সাধারণ মানুষের দানে আর দোরে-দোরে সহযোগিতা চেয়ে শ্রীরামপুরে বেলুমিল্কি গ্রামে মাথা তুলেছে শ্রমজীবী হাসপাতাল। ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে পাঁচতলা দু’টি ভবন। এ বার চালু হতে চলেছে পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট। প্রকল্পের নাম— আবার হৃদয় ছুঁয়ে। কেন ‘আবার’? কেননা এর আগে বেলুড়ে একই ভাবে বাইপাস সার্জারির পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিলেন এই প্রকল্পের পথিকৃৎরা। এ বার দ্বিতীয় পর্যায়ে চণ্ডীগড় থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে ক্যাথল্যাব মেশিন এসেছে। আনুষঙ্গিক কিছু যন্ত্র কিনতেও গুনতে হয়েছে মোটা টাকা। সেই খরচ তুলতে বেলুড় আর শ্রীরামপুরের কর্মী-বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীরা লিফলেট হাতে রেলস্টেশন, দোকান-বাজার, রাস্তায় দাঁড়িয়ে চাঁদা তুলেছেন। তালিকায় রয়েছে বাইপাস ও বেলুন সার্জারি, পেসমেকার বসানো বা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মতো নানা জরুরি অস্ত্রোপচার। ক্যানসার ও ডায়ালিসিস ইউনিটও চালু হচ্ছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে কয়েক হাজার মানুষ হৃদয়-আকৃতির বেলুন ওড়াবেন। হাজার উড়ন্ত হৃদয়েই নতুন ইউনিটের উদ্বোধন।
|
উদ্ভাসিত চোখ |
ছবি আঁকে মন আর মনন। জন্ম থেকে ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির অধিকারী, পরে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে গিয়েও শিল্পসৃষ্টি থামাননি বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। শুধু আঙুলের ছোঁয়া আর অন্তর্দৃষ্টিতে ভর করে গড়া তাঁর সেরামিক টাইল ম্যুরাল কলাভবনে আজও অক্ষয়। সেই সৃষ্টি-পর্ব আর স্রষ্টাকে ইনার আই তথ্যচিত্রে ধরে রেখেছেন বিনোদবিহারীর ছাত্র সত্যজিৎ রায়। এ বার তাঁকে স্মরণ করল উদ্ভাস নামে বহরমপুরের একটি চিত্রচর্চা প্রতিষ্ঠান। একাদশ বর্ষে তাদের ক্যালেন্ডারের চার পাতা ভরেছে বিনোদবিহারীর ছবি ও তথ্যে। ছাত্রজীবনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নন্দলাল বসুর প্রিয়পাত্র বিনোদ পরে কলাভবনে শিক্ষক, মিউজিয়ম-কিউরেটর, গ্রন্থগারিক ও অধ্যক্ষ হন। পান পদ্মভূষণ সম্মানও। “যে ছবি, যে কবিতা, যে সাহিত্য বেঁচে থাকা মানুষকে আনন্দ দেয়— তাই হচ্ছে সর্বাধুনিক।” ক্যালেন্ডার ধরে রেখেছে শিল্পীর এই অন্তর্দৃষ্টি।
|
অন্য নবান্ন |
হাতের কাজ, প্রাণের উৎসব... পাহাড় থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত ছড়ানো এই রাজ্যের শিল্পীরা তো বটেই, পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির শিল্পীরাও এসেছেন শিল্পকর্ম নিয়ে। বোলপুরের গীতাঞ্জলিতে নবান্ন মেলায় এই রাজ্যের সাকিলা বিবি, দ্বিজেন দাসদের পাশে হস্ত ও কুটির শিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ওড়িশার নারায়ণ নায়ক, ঝাড়খণ্ডের কুণাল কিশোরেরা। আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিখরচায় জনা আশি শিল্পীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণ এবং আলোচনার ব্যবস্থাও হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের তসর, ওড়িশার পটশিল্প আর বেতের মোড়া, দুই মেদিনীপুরের পটচিত্র, বনকাপাশির শোলার কাজ— এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়। শান্তিনিকেতনে ঘুরতে এসে স্লোভাকিয়ার তিন পর্যটক কিনে ফেলেছেন বেশ কয়েকখানা তসরের শাড়ি। আর আছে সমান তালে লোকগান ও নাচ। খিদে পেলে পিঠেপুলি। মেলা শেষ ২৭শে জানুয়ারি।
|
রুনুর আখড়া |
সালটা ২০০৯। নিছক কৌতূহলের বশেই এক বন্ধুর সঙ্গে কলকাতার জোড়াবাগানে পঞ্চানন ব্যায়াম সমিতিতে কুস্তি দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। দেখা মাত্রই প্রেম। তত দিনে তাঁর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে কী? আর পাঁচটা বাঙালি মেয়ে যখন ঘর সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সলপের তেঁতুলকুলির রুনু গড়াই হাঁটলেন উল্টো পথে। বিয়ের আগে কবাডি খেলতেন, বিয়ের পরে শুরু হল কুস্তি। ফটোগ্রাফার স্বামী বাধা দেননি। জোড়াবাগান আখড়ার কুস্তি-শিক্ষক অসিতকুমার সাহা ধাতু চিনতে ভুল করেননি। ২০১১-য় পটনায় জাতীয় গেমসে বাংলার হয়ে ৪৮ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জেতেন রুনু। গত বছর জাতীয় স্তরের পরীক্ষায় পাশ করে শুরু করেছেন কোচিং-ও। বছর আঠাশের রুনুর এখন ছাত্র জনা পনেরো, ছাত্রী দ্বিগুণ। হাওড়ার রুনুর মতোই তাঁরা আসেন নানা জেলা উজিয়ে। আসন্ন জাতীয় গেমসে বাংলার জুনিয়র মহিলা দলের দায়িত্বও নেওয়ার কথা তাঁর। রুনুর আদর্শও অসিতবাবুর বাবা, ১৯৫২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ভারতের জাতীয় কুস্তি দলের প্রধান কোচ সুধীরচন্দ্র সাহা। অলিম্পিক ও এশিয়াডে ভারতকে অনেক পদক দিয়েছে কুস্তি। কিন্তু মেয়েদের কুস্তিকে অনেকেই ভাল চোখে দেখেন না। নিজের এলাকায় চেষ্টা করেও আখড়া করতে পারেননি রুনু। “আমি খেলাধুলো করি, তা পাড়ার লোক জানলেও, কী খেলি অনেকেই জানে না”— বলার সময়ে মুখটা ম্লান হয়ে আসে শক্তিমতী মেয়ের। |
|
|
|
|
|
|
|
|