কাজে গেলে খাওয়া জোটে। না গেলে জোটে না। কখনও কাজের ফাঁকে, হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে রাতে ঘণ্টা খানেক চর্চা। এ ভাবেই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা সাদ্রী নৃত্যশৈলীকে। তাঁদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা যে স্বীকৃতি পাবে উত্তরবঙ্গ উৎসবে যোগদানের মাধ্যমে, ভাবতে পারেননি নকশালবাড়ির বিজয়নগর চা বাগানের শ্রমিকরা। সেই সঙ্গে বাড়তি পাওনা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা এবং কলকাতায় আমন্ত্রণ। এই ত্রহ্যস্পর্শে আপ্লুত এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই মানুষেরা। উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনায় অন্যতম অংশ ছিলেন ওঁরা ৪০ জন। অনুষ্ঠান শেষে তাঁরা স্বাধীনতাদিবসে কলকাতার রেড রোডে অনুষ্ঠানের স্বপ্নে বিভোর। |
মহড়ায় ব্যস্ত সাদ্রী নাচের দল। |
সোমবার উত্তরবঙ্গ উৎসবে অংশ নেয় ১২০ নৃত্যশিল্পী। বাংলা, রাজবংশী, নেপালির পাশাপাশি আদিবাসী নৃত্যের কোলাজ পরিবেশিত হয়। যা দেখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি অত্যন্ত খুশি। খুব ভাল নৃত্য পরিকল্পনা। এই দলকে স্বাধীনতাদিবসে রেড রোডে নৃত্য পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ রইল। পরে সরকারিভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।” দলের প্রধান উদ্যোক্তা সঞ্জীব গোর বলেন, “আমরা ১০ বছর ধরে এই ধরনের নৃত্য গীত চর্চা করি। অনেক কষ্ট সহ্য করে চর্চা ধরে রাখতে হয়। এর আগেও কয়েকটি অনুষ্ঠানে গিয়েছি। কিন্তু এরকম অনুষ্ঠানে আগে কখনও আসিনি। আমাদের দলের প্রত্যেকেই গর্বিত এমন একটা উৎসবে সামিল হতে পেরে।” দলের অন্যতম সদস্য জয়পাল টপ্পো বলেন, “সারাদিন পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় আমরা ক’জন বাড়ি ফিরে নাচের দলের সদস্য খুঁজতে বেরোই। সবাইকে বুঝিয়ে দল বাঁধা হয়। মাঝে মধ্যে কয়েক জন সদস্য চলে যায়। অনুষ্ঠানের আগে ফের সেই শূণ্যস্থান পূরণের জন্য লোক খুঁজতে হয়।” সমস্তই করতে হয় নিজেদের জীবিকা পালন করার পর। কোনও কোনও দিন কাজে যাওয়াই হয়ে ওঠে না। সেদিনের মজুরি কাটা যায়। নিজের পেট কেটে এভাবেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করছেন একঝাঁক নৃত্যপ্রেমী। কখনও সহৃদয় সাহায্য মেলে বাগান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
কোনও বড় অনুষ্ঠানে গেলে বাগান কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে গরহাজিরাতেও পুরো দিনের হাজিরা ৯৫ টাকা দেন। বিজয়নগর চা বাগানের ম্যানেজার অমিতাভ রায় বলেন, “আমাদের কিছু শ্রমিক নাচের দল করেন বলে জানি। আমাদের লাভজনক সংস্থা। সব সময় সম্ভব হয় না। তবু কোনও সময় বাইরে অনুষ্ঠান করতে গেলে দিনের মজুরি দিয়ে দেওয়া হয়।” তাতে খুব লাভ হয় না। জানালেন নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া সুমন্তী এক্কা। উত্তরবঙ্গ উৎসবে অংশ নেওয়ায় তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে সামান্য কিছু সাম্মানিক পাওয়া যাবে বলে জানান উত্তরবঙ্গ উৎসবের দায়িত্বে থাকা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক জগদীশ রায়। তিনি বলেন, “কিছু সাম্মানিক অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া হবে। তবে তার পরিমাণ কত আমরা তা জানাচ্ছি না।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা সত্ত্বেও তাই সরকারি ভাবে সাহায্য না পেলে সাদ্রী নৃত্যশৈলী ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে আক্ষেপ বিজয়নগর চা বাগানের শ্রমিক ও শিল্পীদের।
|