প্রজাতন্ত্র দিবসে উত্তরবঙ্গ থেকে মণিপুর পর্যন্ত বন্ধ ডাকল কেএলও-সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের দশটি সংগঠন। দেশের সংবিধান মানেন না বলে দাবি করে ২৬ জানুয়ারির সব অনুষ্ঠান বয়কট করার আহ্বানও জানিয়েছে ওই সংগঠনগুলি। মঙ্গলবার প্রেস বিঞ্জপ্তি জারি করে কেএলও-র সাধারণ সম্পাদক কৈলাস কোচ প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের রাত থেকে ওই দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যানবাহন, দোকান-বাজার সহ সব রকমের অনুষ্ঠান, এমনকী সিনেমা হলের মত বিনোদনমূলক জায়গাও বন্ধ রাখার আবেদন করেছেন।
তবে বাসিন্দাদের আতঙ্কিত হয়ে না পড়ার আবেদনও করা হয়েছে কেএলও-র তরফে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কৈলাস কোচ বলেছেন, “আমাদের লড়াই সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নয়। আমার অনুরোধ তারা যাতে আতঙ্কিত না হন। আমাদের লড়াই পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।”
অন্যান্য বছরও অবশ্য প্রজাতন্ত্র দিবসে বন্ধ ডাকা হয়েছে। এ বছরে বন্ধের ঘোষণা প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিম বলেছেন, “অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। এর আগে কেএলও-র বন্ধে কোনও সাড়া পড়েনি।”
তবে কড়া হাতে জঙ্গি দমনের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াল কামতাপুর পিপলস পার্টি (কেপিপি)। যদিও দলের বক্তব্য, জঙ্গি দমনের নামে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার হলে কেপিপি আন্দোলনে নামবে। মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিখিল রায় বলেন, “সরকারকে সন্ত্রাসবাদীদের কড়া হাতে দমন করতেই হবে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে যেন সাধারণ মানুষের উপরে পুলিশি নির্যাতন নেমে না আসে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে তাঁদের দলের দুই নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। এমন চললে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।
সোমবার শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া কামরাঙাগুড়িতে ‘উত্তরকন্যা’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী কেএলও-র নাম না-করে জানান, বোমা মেরে, গুলি করে খুন বরদাস্ত হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মনোভাবকে সমর্থন করে কেপিপি নেতৃত্ব জানিয়েছেন, তাঁরাও গুলি, খুন, গুন্ডামির বিরোধী। নিখিল রায় বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক পথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। সন্ত্রাস ও নাশকতার পথে কোনও দাবি আদায় করা সম্ভব নয়।”
জঙ্গি দমনের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেও, রাজবংশী ভাষা স্বীকৃতির জন্য রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করাকে বামফ্রন্টের পথে কামতাপুরি আন্দোলন ভাঙার ‘পুরনো খেলা’ বলে অভিযোগ তুলেছেন কেপিপি নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করছেন, কামতাপুরি আন্দোলনকে ভাঙার জন্য রাজ্য সরকার কৌশলে ‘রাজবংশী’ শব্দটি ব্যবহার করতে চাইছে। দলের এক মুখপাত্র অভিযোগ করেন, রাজবংশী ভাষা স্বীকৃতির দাবিতে উত্তরবঙ্গে যে আন্দোলন হয়নি, সেটা মুখ্যমন্ত্রী ভাল জানেন। কামতাপুরি ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনে নেমে প্রচুর মানুষ জেল খেটেছেন। পুলিশের গুলিতে মারাও গিয়েছে। তবু রাজবংশী অ্যাকাডেমি, ভাষা স্বীকৃতির জন্য কমিটি গঠনের কথা বলে কামতাপুরি আন্দোলনে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
|