মন্দারমনির সৈকতে প্যারাগ্লাইডিং-এর ব্যবস্থা দেখে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল বছর সতেরোর গরিমা। বাবা হরিশঙ্কর জয়সওয়ালও রাজি হয়ে যান। নীচে ছুটে যাবে গাড়ি, তাতে বাঁধা প্যারাসুট থেকে আকাশে উড়বে মানুষ, এমন ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ অনেক সৈকতেই আছে। ঝুঁকি এমন কিছু নয়।
কিন্তু ঘটে গেল বিপত্তি। গরিমা বলেন, “যে গাড়ি প্যারাসুট টানছিল, সেটি আচমকা থেমে যায়। প্যারাসুট ঘুরে যাওয়ায় পড়ে যাই।” গরিমা মেরুদণ্ডে চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এখন বাড়িতে তাঁর চিকিৎসা চলছে। ক্যালকাটা গালর্স স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী স্কুলের পরীক্ষায় বসতে পারেননি।
হরিশঙ্করবাবুর অভিযোগ, “কোনও রকম সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই প্যারাগ্লাইডিং চলেছে।” চোট পাওয়ার পরে এলাকায় কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে থানায় ফোন করেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকেও কোনও রকম সাহায্য পাওয়া যায়নি।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর ঘটে দুর্ঘটনা। ৪ জানুয়ারি রামনগর থানা জেনারেল ডায়েরি হিসেবে অভিযোগ নথিবদ্ধ করে। তারপর থেকে থানার তরফে জয়সওয়াল পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। কেন? রামনগর থানার ওসি সুধাংশুশেখর লায়েক বলেন, “কয়েক দিন আগে এই থানায় যোগ দিয়েছি। বিষয়টি ভাল করে না দেখে কিছু বলতে পারব না।” যে সংস্থার প্যারাগ্লাইডিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হয়েছে সেই ‘শ্রী অ্যাডভেঞ্চার’ সংস্থার কর্তা মনোরঞ্জন বর্মনও এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। বারবার ফোন করা হলেও, সে দিনের দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন শুনেই ফোন রেখে দিচ্ছেন তিনি।
ঘটনা শোনার পরে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “দুঃখজনক ঘটনা। এ জিনিস মেনে নেওয়া হবে না।’’ তবে শুধু মন্দারমনি নয়, দিঘা থেকে দার্জিলিং, নানা পর্যটন কেন্দ্রে অ্যাডভেঞ্চার রাইড নিয়ে দুর্ঘটনার অভিযোগ রয়েছে পর্যটন দফতরে।
অ্যাডভেঞ্চার রাইডগুলির সুরক্ষা নিয়ে কী চিন্তা করছে রাজ্য সরকার? রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “গোয়ার ধাঁচে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য আইন তৈরি হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা বিধানসভায় পেশ করা হবে। সেই আইনের ভিত্তিতে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ও রাইডগুলিকে অনুমতি দেওয়ার আগে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি ভাল করে দেখা হবে। তাতে পর্যটকদের অধিকার নিশ্চিত হবে।” মন্ত্রী জানিয়েছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়ার সঙ্গে পরিকাঠামো ঢেলে সাজার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।
কোথায় গলদ থেকে যাচ্ছে সুরক্ষায়? উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল জানান, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সংস্থাদের ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক অনুমোদন দেয়। ‘অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর অপারেটর্স অব ইন্ডিয়া’ নামে একটি সংগঠনও সার্টিফিকেট এবং সদস্য পদ দেয়। প্যারাগ্লাইডিং, প্যারাসেলিং, মাউন্টেন বাইকিং, র্যাফটিং, এমন প্রতিটি স্পোর্টের ক্ষেত্রে গাইডের প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তার পরিকাঠামো, প্রয়োজনীয় লাইসেন্স, সব দেখে তবেই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সংস্থা কেবল স্থানীয় কর্তৃপক্ষের থেকে ব্যবসায়িক ছাড়পত্র নিয়েই কাজ করে। ফলে সুরক্ষার ঘাটতি থেকে যায়। “রাজ্য সরকার নতুন আইন আনলে অবশ্য কড়াকড়ি বাড়বে,” বলেন সম্রাটবাবু। |