সাম্প্রতিক কালে উত্তর ২৪ পরগনায় মেয়েদের উপর নিগ্রহের ঘটনায় সচেতনতা গড়তে ‘নারী সুরক্ষা বিষয়ক পদযাত্রা ও সচেতনতা শিবির’ করল হাবরা পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে শহরের প্রায় ৪০টি স্কুল-কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওই মিছিলে হাঁটেন। সাধারণ মানুষও যোগ দেন। পরে শহরের কলতান সভাগৃহে সচেতনতা শিবির করা হয়। এসেছিলেন হাবরার রবীন্দ্রপল্লির নির্যাতিতা তরুণী ও গাইঘাটার শিমুলপুরের নির্যাতিতা কিশোরীর পরিবারের সদস্যেরা।
পুলিশের তরফে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় ও হাবরা থানার আইসি অনিল রায়। অনিলবাবু বলেন, “নারী নির্যাতনের ঘটনায় স্কুল কলেজের পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আমরা এনেছি। সকলে সচেতন না হলে এই সামাজিক ব্যধি রোখা যাবে না।” ভাস্করবাবু বলেন, “জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যে হেল্প লাইন চালু করা হচ্ছে, সেই নম্বরটি বেশি করে প্রচার করা হচ্ছে। রাস্তায় বেরিয়ে কোনও মহিলা সমস্যায় পড়ে ওই নম্বরে ফোন করলে তাঁদের সাহায্যের জন্য স্থানীয় পুলিশ যাবে। জেলার প্রতিটি থানায় মেয়েদের জন্য হেল্প ডেস্ক হয়েছে। সেখানেও মহিলা পুলিশ থাকবেন। মেয়েরা সেখানে গিয়েও অভিযোগ জানাতে পারেন।” |
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বেলুড় মঠ সারদাপীঠের সম্পাদক দিব্যানন্দজী মহারাজ, হাবরার শ্রীচৈতন্য কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক শিবাজীপ্রতিম বসু, বাংলার শিক্ষক সুমিত্রা ভট্টাচার্য প্রমুখ। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী উল্লেখ করে দিব্যানন্দ মহারাজ বলেন, “প্রকৃত শিক্ষার অভাবই এই সামাজিক ব্যধির কারণ। মেয়েরা নিজেদের দুর্বল ভাবলে চলবে না। তাদের আত্মনির্ভর হতে হবে। প্রয়োজনে শরীরচর্চা করতে হবে।” শিবাজীবাবু বলেন, “দিল্লি পরিবারে ছেলে মেয়ে-র মধ্যে বৈষম্য করা চলবে না। সামাজিক ভাবে এই সামাজিক ব্যাধিকে নির্মূল করতে হবে।” সুমিত্রাদেবীও বলেন, “মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ উদ্যোগী হলে তারা ভরসা পাবে।”
এ দিনের সভায় ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন ভাস্করবাবু। রাস্তায় বেরিয়ে কী করা উচিত, কী নয় তা তাঁদের বুঝিয়ে বলেন তিনি। বিশেষ করে চাকরির প্রলোভন বা অপরিচিত কারওর সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে হাবরা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস, গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ-সহ বহু রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত থাকলেও কেউই মঞ্চে ওঠেননি। পরে অবশ্য মঞ্চে উঠে দুই নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের হাতে অন্ত্যোদয় যোজনার কার্ড তুলে দেন খাদ্যমন্ত্রী তথা বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ওই দুই নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যেরা বলেন, “এমন ঘটনার পরে যে পুলিশ-প্রশাসন ও নেতা-মন্ত্রীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে ভরসা পাচ্ছি। আশা করি, এর পরে অপরাধীরা এমন ঘটনা ঘটানোর আগে দু’বার ভাববে।”
জ্যোতিপ্রিয় জানান, জেলার প্রতিটি থানাতেই এমন শিবির করে সচেতনতা গড়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা। |