কখনও ব্যক্তিগত, কখনও রাজনৈতিক, আবার কখনও সেই রাতের নানা খুঁটিনাটি প্রসঙ্গ তুলে জেরা চলল সাক্ষী ফজলুল হকের। সোমবারের পরে মঙ্গলবারও দিনভর নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা ও সেশন জজের আদালতে সজল ঘোষ হত্যা মামলার শুনানি চলাকালীন ফজলুল হক মণ্ডলকে জেরা করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রতীমসিংহ রায়। এ দিন শারীরিক অসুস্থতার জন্য আদালতে হাজির হতে পারেন নি আরেক সাক্ষী কাজল শেখ।
জেরার শুরুতেই প্রতীমসিংহ রায় ফজলুল হক কী করেন তা জানতে চান। ফজলুল হক জানান, চাষবাস ও টুকটাক ব্যবসা। পূর্বস্থলী, পারুলিয়া, বড়গাছি অঞ্চলে তাকে সকলে ‘মন্টু’ বলে চেনে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন হ্যা।ঁ এই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন? সাক্ষী জানান ২১-১-১২ তারিখ। প্রতীমবাবু জানতে চান ওই বছর ঈদ কত তারিখে পড়েছিল? ফজলুল হক বলেন, বলতে পারব না। প্রশ্ন করা হয় তিনি হজ করে এসেছেন কিনা। সাক্ষী বলেন হ্যাঁ।এরপরে জানতে চাওয়া হয় পুলিশের কাছে কখন, কিভাবে, কাদের সঙ্গে জবানবন্দী দিতে আসেন ফজলুল হক। সাক্ষী জানান, ২১ তারিখ সকাল ৯টা নাগাদ সাক্ষী গৌতম নাথ, কাজল শেখ ও সৌভিক আইচের সঙ্গে নবদ্বীপ থানায় জবানবন্দী দিতে আসেন তিনি। কে তাঁদের থানায় আসতে বলেছিল এ প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী জানান থানা থেকে এক কনস্টেবল গিয়ে তাকে বলেছিলেন। থানায় কাকে প্রথমে এবং কাকে শেষে জেরা করা হয়েছিল তা মনে আছে কি না জানতে চাওয়া হলে ফজলুল শেখ বলেন, মনে নেই। এরপরে আইনজীবী জানতে চান, নবদ্বীপ আদালতের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তিনি কীভাবে জবানবন্দী দিতে আসেন? সাক্ষী বলেন, চারজন একসঙ্গে পুলিশের গাড়িতে নবদ্বীপ থানা থেকে আদালতে আসেন।
এরপরে সজল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষীর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন আইনজীবী। জানতে চান সজল ঘোষ সাক্ষীর বন্ধু ছিলেন কিনা। ফজলুল হক বলেন, না ভাইয়ের মতো। তাঁদের রাজনৈতিক বোঝাপড়া কতদিনের? উত্তর আসে, পাঁচ-সাত বছরের। বাড়িতে যাতায়াত ছিল কিনা জানতে চাইলে ফজলুল হক বলেন, না। আইনজীবী জানতে চান, সজলবাবু তো ছাত্র নেতা ছিলেন, কোন কলেজে পড়তেন উনি? সাক্ষী বলেন, উনি পড়াশুনো করতেন না। সজলবাবু আগে কোন কলেজে পড়তেন জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন তিনি বলতে পারবেন না। আইনজীবী বলেন, জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেছেন ঘটনার দিন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ পূর্বস্থলীর বিধায়কের সঙ্গে দুই আহতকে দেখতে নবদ্বীপ হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি। সেদিন রাতে কোথা থেকে এসেছিলেন তিনি? সাক্ষী জানান, পারুলিয়া বাজার থেকে। তবে তিনি বিধায়কের সঙ্গে আসেন নি, গৌতম নাথের সঙ্গে এসেছিলেন। অত রাতে তিনি সেখানে কি করছিলেন জানতে চাইলে উত্তর আসে পার্টি অফিসে ছিলাম। আরও কিছু প্রশ্নের পরে সোমবারের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
মঙ্গলবার শুরুতেই ফজলুল হককে প্রতীমসিংহ রায় প্রশ্ন করেন, ১৯৯৮ সালে কালু মোল্লা বলে এক ব্যক্তিকে খুনের মামলায় তিনি আসামি ছিলেন কিনা। সাক্ষী বলেন হ্যাঁ, তবে সে মামলা মিটে গিয়েছে। আইনজীবী জানতে চান মামলা মিটে যাওয়ার কোনও কাগজ তিনি আদালতে দাখিল করতে পারবেন কিনা।
সাক্ষী বলেন না। পরের প্রশ্ন ছিল সাক্ষীর স্ত্রী তৃণমূলের হয়ে ভোটে জিতে বর্তমানে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কিনা। সাক্ষী বলেন, হ্যাঁ। পূর্বস্থলী ২নং পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তিনি। সাক্ষী আগে সহ-সভাপতি ছিলেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর দেন, ছিলেন না।
এরপরে প্রশ্ন শুরু হয় ঘটনার রাত নিয়ে। আইনজীবী জানতে চান, হাসপাতালে প্রবেশের জন্য কোনও অনুমতি সাক্ষী নিয়েছিলেন কিনা। তিনি জানান ওয়ার্ডমাস্টারকে বলে গিয়েছিলেন। এরপরে অভিযুক্তের আইনজীবী সাক্ষীর পূর্ববর্তী জবানবন্দীর অসঙ্গতি খুঁজে প্রশ্ন করতে থাকেন। তিনি সাক্ষীকে বলেন, ওই রাতে হাসপাতালে যে মোটরবাইক তিনি দেখেছিলেন তাঁর রঙ, মডেল তিনি বলেন নি। যাদের দেখেছিলেন তাঁদের জামাকাপড় কেমন ছিল তাও বলেন নি। বলেন নি লোকনাথের গায়ে শাল ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাক্ষী বলেন না। জেরার শেষে প্রতীমসিংহ রায় বলেন, ওই রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে কোনও ঘটনাই ঘটেনি। সাক্ষ্য মিথ্যা। সাক্ষী বলেন, না সব সত্যি।
সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্বে আরেক আইনজীবী নারায়ন সাধু সাক্ষী ফজলুল হক মণ্ডলের কাছে জানতে চান এই মামলায় অভিযুক্ত সর্ফউদ্দিন, হানিফ মণ্ডল এবং সইফুদ্দিনের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ আছে কি না। সাক্ষী জানান, নেই।
এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। |