প্রথমে বিড়ি শ্রমিক হাসপাতাল। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার এক ক্যানসার হাসপাতলে। খরচের ধাক্কা সামলাতে না পেরে সেখান থেকে ফের বাড়ি। মাসকয়েক আগে সামসেরগঞ্জের অন্তর্দীপা গ্রামে নিজের বাড়িতেই শেষ পর্যন্ত মারা যান বছর তিপান্নর নেবাস বিবি। তাঁর গল ব্লাডারে ক্যানসার হয়েছিল। নেবাস বিবি ও তাঁর স্বামী দু’জনেই বিড়ি শ্রমিক ছিলেন। ছিল সচিত্র পরিচয়পত্রও। নেবাস বিবির ছেলে রাকিব সেখের আক্ষেপ, “চিকিৎসার জন্য মাকে বেশ কয়েকবার তারাপুরের বিড়ি শ্রমিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ক্যানসার হয়েছে বুঝতে পারার পরও আমাকে একবারের জন্যও বলা হয়নি যে, বিড়ি শ্রমিক হিসাবে আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করার কথা বিড়ি শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের। পরে যখন এক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতার কাছে বিষয়টি জানলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আগে জানতে পারলে অর্থাভাবে মাকে হারাতে হত না।”
নেবাস বিবির পরিবারের মতোই প্রাপ্য সুযোগ, সুবিধার কথা জানতেন না অরঙ্গাবাদের বিড়ি শ্রমিক রেজাউনুর রহমানও। তিনি বলছেন, “বহু কষ্টে দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি মাসখানেক আগে। সেও বিড়ি বাঁধে। বিড়ি শ্রমিকদের বিয়েতে আর্থিক সাহায্যের কথা আগে জানলে অনেক সুবিধা হত।” |
১৯৭৬ সালের কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের ‘বিড়ি ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফাণ্ড অ্যাক্ট’ অনুসারে বিড়ি শ্রমিকদের জন্য ২৬ রকম ক্ষেত্রে আর্থিক সুবিধা প্রদানের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু সেসব সুবিধার কথা খাতাকলমেই রয়ে গিয়েছে। বিড়ি শ্রমিকদের প্রায় কেউই সে খবর জানেন না। ধুলিয়ানের এক বিড়ি শ্রমিক ফুরমুজ আলির কথায়, “গ্রামের ৯৫ শতাংশ পরিবার বিড়ি বেঁধে দিন গুজরান করে। বেশিরভাগ শ্রমিকদেরই অক্ষর পরিচয় হয়নি। সরকারি সুযোগ সুবিধার কথাও জানেন না। বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলোও এসব বিষয়ে তেমন কিছুই জানান না। আর সেই কারণেই দালালের খপ্পরে পড়েন গরিব বিড়ি শ্রমিকরা।”
কিন্তু জানার পরেও কি সেই সুযোগ পাবেন বিড়ি শ্রমিকরা? আইএনটিইউসি’র রাজ্য বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাদশার আলি বলেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের জন্য শ্রম মন্ত্রক কর্তৃক বরাদ্দ সুবিধা পাওয়া গরিব শ্রমিকদের পক্ষে বেশ ঝক্কির।” কী রকম? বাদশার বলেন, “কেউ অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসার খরচ প্রথমে তাঁকে বা তাঁর পরিবারকে করতে হবে। পরে ভাউচার সহ আবেদন করে খরচ করা টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। এক লপ্তে দরিদ্র বিড়ি শ্রমিকের পক্ষেও একসঙ্গে অনেক টাকা খরচ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।”
সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান বলেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার কথা যদি তাঁরাই না জানেন তাহলে এগুলো থাকা, না থাকা দুই-ই সমান। তাছাড়া এই নিয়ে সেভাবে কোনও প্রচার নেই।”
রাজ্যের প্রাক্তন শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “শ্রমিক সংগঠনগুলিও শ্রমিকদের কল্যাণের থেকে রাজনীতি নিয়েই বেশি মনোযোগী। আর সেই কারণেই সুযোগ, সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা পাচ্ছেন না।” |