ভারতের যোজনা কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর দারিদ্রসীমা হিসেবে দৈনিক ২৭ টাকার কথাই বলেছেন। (‘ইউ পি এ আমলে দ্রুত দারিদ্র কমেছে’, সাক্ষাৎকার, ১০-১) কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী/নেতা বলেছেন, দৈনিক ১২ টাকায় দু’বেলার পেটভরা খাবার পাওয়া যায় নয়াদিল্লিতে। এই সব নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু উপার্জনের সীমারেখা বদলায়নি। সুতরাং সেই মাপকাঠিতে দারিদ্র কমেছে, এটা প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য উপদেষ্টা বলতেই পারেন।
জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড় ইত্যাদি ব্যাপারে নীতিপঙ্গুত্বের কারণে শিল্প প্রসারে নাকি দেরি হচ্ছে। তা হলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ২০০৮ সালে দ্রুত জমি অধিগ্রহণ এবং সমস্ত রকম ছাড়পত্র মেলা সত্ত্বেও আজ ২০১৪ সালে সেখানে ২ কেজি ইস্পাতও কেন তৈরি হল না বা ১ ইউনিট বিদ্যুৎও কেন উৎপাদিত হল না? এর ব্যাখ্যা কে দেবে? |
নীতিপঙ্গুতা বা দুর্নীতি নয়, শিল্প সম্প্রসারণ হচ্ছে না শিল্পপতিদের ব্যর্থতার জন্য। তাদের পুঁজির অভাবে। শ্রীবসু ভারতীয় অর্থনীতির একটি বিপজ্জনক দিকের কথা তুলে ধরলেন না। সেটি হল, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী সম্পদের (এন পি এ) দ্রুত হারে বৃদ্ধি। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন, এই অনাদায়ী সম্পদের তিন চতুর্থাংশ বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলির কাছে অনাদায়ী হয়ে পড়ে আছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্মী সংগঠনও এটা নিয়ে সরব হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি যদি ফেল করে, তবে কোথা থেকে শিল্প/কৃষির উন্নতির জন্য অর্থ আসবে। বৃদ্ধির হার তো তলানিতে ঠেকে যাবে।
বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলি দু’দিকে কাটে। এক দিকে সরকারি ইনসেনটিভ নেবে কর ছাড়ের সুবিধা নিয়ে। অপর দিকে ব্যাঙ্কের টাকা নিয়ে ফেরত দেবে না। শিল্পপতি/পুঁজিপতিদের এই চক্রান্তমূলক কার্যকলাপের জন্যই আর্থিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
দীপকরঞ্জন কর। কলকাতা-৭৭ |