নালন্দার তেলহারায় খোঁজ বৌদ্ধ মহাবিহারের

২১ জানুয়ারি
সারা মহাবিহার জুড়ে বাঁধা ছিল অজস্র ছোট ছোট ঘণ্টা। হাওয়া বইলেই তাই গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ত সুমধুর শব্দ তরঙ্গ। সপ্তম শতকে নালন্দার কাছাকাছি তেলহারায় এই মহাবিহারের উল্লেখ করেছিলেন জুয়ান জ্যাং বা হিউয়েন সাং ও আর এক চিনা পরিব্রাজক ইৎ সিং। সম্প্রতি এই মহাবিহারের সন্ধান পেয়েছে বিহার রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর। ওই দফতরের অধিকর্তা অতুল বর্মা বলেন, “মহাবিহারটি বিরাট। সম্প্রতি তার নামফলক ও তিনটি উপাসনাস্থল পাওয়া গিয়েছে। পুরো খননকার্য শেষ হতে আরও অন্তত ১০ বছর লাগবে।”
তেলহারা মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ। —নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক আগেই প্রাচীন তাম্রলিপ্তের কাছে দাঁতনে জুয়ান জ্যাং কথিত একটি মহাবিহারের সন্ধান পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতর। সেই মহাবিহারের একটি বিহারের নাম ছিল বন্দক। নালন্দা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বিহারে খোঁজ মিলল যে মহাবিহারটির, তার প্রাচীন নাম ছিল সম্ভবত তিলাধক। নামফলকে ধর্মচক্রের দু’পাশে হরিণের চিহ্ন মিলেছে। অতুলবাবুর বক্তব্য, “বৌদ্ধ মহাযান শাস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হত এখানে।” এই মহাবিহার থেকে অনশনরত বুদ্ধের একটি পোড়ামাটির ফলক পেয়েছেন পুরাতত্ত্ববিদেরা। পাওয়া গিয়েছে যমন্তক মূর্তিও। অতুলবাবু বলেন, “ইৎ সিং জানিয়েছেন, সমসাময়িক অন্য বিহারগুলির মধ্যে সব থেকে সুন্দর ছিল এই বিহারটি। সেখানে বিহার জুড়ে বাঁধা থাকত নানা ঘণ্টা।” পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন মহানির্দেশক গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “তেলহারা পাল যুগের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ প্রত্নক্ষেত্র। সম্ভবত তেলহারা গুপ্ত ও গুপ্ত পরবর্তী সময়েও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল ছিল। এখান থেকে সংগৃহীত কয়েকটি অসাধারণ বৌদ্ধ মূর্তি কলকাতায় জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।” অন্তত এক হাজার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থাকতেন তেলহারার মহাবিহারে। সেই সঙ্গে থাকতেন তাঁদের শিষ্যরা। কাছাকাছি ও সমসাময়িক নালন্দা অবশ্য আকারে ও প্রভাবে আরও অনেক বড় ছিল।
অতুলবাবু বলেন, “নামফলকগুলি দেখে বোঝা যাচ্ছে, সেগুলি হাজার বছর পুরনো। ওই মহাবিদ্যালয়ে বুদ্ধের তিনটি মন্দির ছিল। তার সামনে ছিল বিশাল একটি প্রার্থনা মঞ্চ। এক সঙ্গে এক হাজার মানুষ সেখানে বসতে পারতেন।” মন্দিরে বুদ্ধ মূর্তির বেদিরও নিদর্শন মিলেছে। অতুলবাবু আরও জানান, সেখানে তিনটি বিভাগে শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। কলা, সংস্কৃতি এবং যুব সংক্রান্ত বিষয়। এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র এবং শিক্ষকদের আবাসন ছিল। সেগুলির নীচে খাদ্যদ্রব্যের গুদামের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পিছনেই ছিল শুর নদী। কোনও সময় বন্যা হলে তার জল যাতে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকতে না-পারে, সে জন্য নক্শা করা প্রাচীর দিয়ে গোটা এলাকা ঘেরা ছিল। খননের সময় লাল বালিপাথরের বিভিন্ন মূর্তিও সেখানে পাওয়া গিয়েছে। পুরাতত্ত্ববিদেরা জানান, নালন্দার মতোই তেলহারাতেও ধ্বংসাবশেষের দেওয়ালের গায়ে পুরু ছাইয়ের আস্তরণ পাওয়া গিয়েছে। ওই এলাকার দু’একর জায়গা জুড়ে খননকাজ চালাচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। প্রায় পাঁচ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ওই ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে বলে ওই বিভাগের অনুমান। আশপাশের বাড়িগুলির নীচে তা চাপা পড়ে রয়েছে। খনন কাজ চালাতে বিহার সরকার ওই ধ্বংসাবশেষের লাগোয়া আরও দু’একর ফাঁকা জমি অধিগ্রহণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বিহার রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের সাইট ইঞ্জিনিয়ার নন্দগোপাল কুমার বলেন, “বিহারটি তিন তলা ছিল। বর্তমানে উদ্ধার হওয়া ধ্বংসাবশেষ তিনতলারই অংশ।”
নিজের জেলা নালন্দায় দু’টি বৌদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পাওয়ায় উৎসাহী নীতীশ কুমার। সেখানে একটি হেলিপ্যাডও তৈরি করে দিয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে অর্মত্য সেন নালন্দা বিশ্ববিদালয়ের একটি বৈঠকে গিয়ে নীতীশের অনুরোধে নালন্দা ঘুরে যান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.