অত্যাচারের ছবি প্রকাশ্যে, বিপাকে প্রেসিডেন্ট আসাদ
লতি সপ্তাহেই জেনিভায় বিরোধীদের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যোগ দেওয়ার কথা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের। কিন্তু তার আগেই সামনে এল তাঁর অত্যাচারের এক গুচ্ছ ছবি। যাতে দেখা যাচ্ছে কতটা নৃশংস ভাবে আটক বাসিন্দাদের হত্যা করেছিল তাঁর সেনাবাহিনী। ছবিগুলি খুঁটিয়ে দেখার পর তিন খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞের দাবি, এর পর আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা সহজ হবে।
ঠিক কী আছে ছবিগুলোতে? স্যার ডেসমন্ড ডি সিলভা, স্যার জিওফ্রে নাইস এবং অধ্যাপক ডেভিড ক্রেন নামে ওই তিন আইনজ্ঞ জানিয়েছেন, প্রতিটি ছবিই আসলে মৃতদেহের। তাঁদের দাবি, ২০১১ সালে সিরিয়ায় আসাদ বিরোধী অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর থেকে গত অগস্ট পর্যন্ত নানা সময়ে তাঁর মদতপুষ্ট বাহিনীর অত্যাচারে মারা গিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। সে অত্যাচার ঠিক কতটা নারকীয় ছিল, তারই প্রমাণ মিলেছে ছবিগুলোতে। কোনও ছবিতে দেখা যাচ্ছে মৃতদেহের গলা জুড়ে ভারী কিছুর দাগ। অর্থাৎ তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। কারও দেহে আবার রয়েছে তড়িদাহত হওয়ার নিশান। কারও বা শরীরজোড়া কালশিটে, পুরনো রক্তের দাগ। কারও চোখ উপড়ে নেওয়া হয়েছে। তবে একটি বিষয়ে তাঁদের প্রত্যেকের মধ্যেই চোখে পড়ার মতো মিল। প্রত্যেকটি দেহই অসম্ভব শীর্ণ, জীর্ণ। আইনজ্ঞদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অনাহারে, অর্ধাহারে তাঁদের বেঁচে থাকতে বাধ্য করেছিল আসাদ বাহিনী। প্রত্যেকেরই ওজন যে অসম্ভব কম, তা ছবি থেকেই স্পষ্ট।
এতেই শেষ নয়। আইনজ্ঞরা এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য দিয়েছেন তাঁদের একত্রিশ পাতার রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন যুবক। রিপোর্ট বলছে, আটকদের হত্যা করার পর তাঁদের দেহ পাঠিয়ে দেওয়া হত সেনা হাসপাতালগুলিতে। সেখানে তাঁদের দেহের ওপর কিছু সংখ্যা লিখে দেওয়া হত। সেনার কোন শাখা তাঁদের হত্যা করেছে, সেটা বোঝাতেই ওই সংখ্যা লিখে রাখা হত বলে দাবি আইনজ্ঞদের। তার পর তোলা হত নম্বর লেখা মৃতদেহের ছবি। সেই ছবিরই একটা বড়সড় অংশ এসে পৌঁছেছে আইনজ্ঞদের হাতে।
কিন্তু সিরিয়া প্রশাসনের নজর বাঁচিয়ে ছবিগুলো কী করে পৌঁছল? এর পিছনে অবশ্য রয়েছে একদা আসাদের মদতপুষ্ট সেনাবাহিনীর এক চিত্রগ্রাহকের অবদান। তিনিই আসাদ সেনার হয়ে মৃতদেহের ছবি তোলার কাজ করতেন। তখনই প্রায় এগারো হাজার মৃতদেহের পঞ্চান্ন হাজারেরও বেশি ছবি তোলেন তিনি। তবে প্রথম দিকে আসাদের পক্ষে থাকলেও পরবর্তী কালে গোপনে বিরোধীদের দিকেই সরে এসেছিলেন ওই চিত্রগ্রাহক। সে সময়ই এই ছবিগুলো লুকিয়ে দেশের বাইরে পাঠান তিনি। আপাতত নিরাপত্তার কারণে তিনি সিরিয়ার বাইরে কোথাও ঠাঁই নিয়েছেন বলে আইনজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাঁর সঙ্গেই গত দশ দিন নানা ভাবে কথা বলে সত্যিটা যাচাই করার চেষ্টা করেছেন আইনজ্ঞরা। সব কিছু শোনার পর ছবির সত্যিকেই আসাদ বাহিনীর অত্যাচারের প্রমাণ হিসেবে মেনে নিয়েছেন তাঁরা। প্রমাণগুলি দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনকেও। ওই তিন আইনজ্ঞের দাবি, এই প্রমাণগুলির ভিত্তিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করা সহজ হবে। প্রত্যাশিত ভাবেই, ছবিগুলোর সত্যতা অস্বীকার করেছেন আসাদ। জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষদের নয়, সন্ত্রাসবাদীদেরই হত্যা করা হয়েছে। এ কথা অবশ্য সত্যি যে আসাদ বিরোধীদের বিরুদ্ধেও অত্যাচারের অভিযোগ এসেছে বেশ ক’বার। কিন্তু সাম্প্রতিক ছবিগুলি যেন সে সব অভিযোগকে পিছনে ফেলে দিয়ে আসাদ সরকারের নৃশংসতাকেই তুলে ধরল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.