এসএফআই শুধু রানিগঞ্জে, কালনায় মুখোমুখি টিএমসিপি
দু’একটা কলেজ ছাড়া কলেজ ভোটের মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে তেমন কোনও গোলমাল হল না জেলা জুড়ে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টি কলেজের মধ্যে রানিগঞ্জ গালর্স ও কাটোয়া কলেজ বাদে আর কোথাও প্রার্থী দিতে পারেনি এসএফআই বা সিপি।
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “এসএফআইকে আমরা বলেছিলাম, কেউ প্রার্থী হতে চাইলে এসএফআই যেন আমাদের সাহায্য চায়। আমরা মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু ওদের কেউই যোগাযোগ করেনি।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে-র অবশ্য অভিযোগ, “সমস্ত কলেজেই ওদের হুমকি, মারধরের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। তাই রানিগঞ্জ গার্লস ছাড়া আর কোথাও মনোনয়ন পত্র তোলা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।”
তবে বিরোধী পক্ষ নেই তো কি, টিএমসিপি-র দুই গোষ্ঠীর সৌজন্যেই কলেজ ভোটে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কালনা। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র তোলার নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর ২টো পর্যন্ত। তার মধ্যেকে একটি গোষ্ঠীকে থানায় কার্যত কোণটাসা করে মনোনয়ন জমা দিল অন্য গোষ্ঠী।
দিন দুয়েক আগে থেকেই টিএমসিপির দুই ছাত্রনেতাকে কয়েকজন রাতের আঁধারে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তৃণমূল নেতারাও। দলীয় সূত্রে খবর, সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল এসএফআই প্রার্থী দিতে পারবে না সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সোমবার একটি বৈঠক করে প্রাথমিক তালিকা তৈরি হয়।
মনোনয়ন তোলার পরে উল্লাস। শ্যামসুন্দর কলেজে তোলা নিজস্ব চিত্র।
ঠিক হয়, ৩২টি আসনের মধ্যে কালনা ১ ব্লক থেকে ১১ জন, কালনা ২ ব্লক থেকে ৬ জন, শহর থেকে ৪ জন ও পূর্বস্থলী ১ ও ২ মিলিয়ে বাকি ১১ জন মনোনয়ন তুলবে। তবে আরও একটি গোষ্ঠীও মনোনয়ন তুলতে পারে এমন আশঙ্কাও ছিল। ঠিক হয়, অন্য গোষ্ঠী মনোনয়ন দিতে এলে দু-তিনটে আসন ছেড়ে রফা করা হবে। দলের তরফে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয় কালনা ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি উমাশঙ্কর সিংহ রায় ও ব্লকের সাধারণ সম্পাদক সেলিম শেখকে।
কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে মনোনয়ন তোলা শুরু হয়। সাড়ে দশটা নাগাদ ব্লক নেতাদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী ২৪ জন মনোনয়ন তুলতে ঢোকেন। ততক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছে যে শহর থেকে টিএমসিপিরই আরেকটি গোষ্ঠী মনোনয়ন দিতে আসছে। ঠিক হয়, কয়েকজনকে প্রার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছে বলে বাইরে রেখে দেওয়া হবে যাতে অন্য গোষ্ঠী মনোনয়ন না তুলতে পারে। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অন্য গোষ্ঠীর সদস্যেরা প্রথমে রিক্রিয়েশন ক্লাব, পরে অম্বিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জড়ো হয়। মনোনয়ন জমা দিতে গেলে অন্য গোষ্ঠীর মুখোমুখি হতে হবে আশঙ্কা করে পুলিশকে ফোন করে মনোয়ন তুলতে নিরাপত্তা চায় তারা। পুলিশ তাদের কলেজ চত্বরে আসতে বলে। শহরের ওই গোষ্ঠী কলেজের সামনাসামনি পৌঁছতেই বিপক্ষের লোকেরা বাঁশ, লাঠি নিয়ে এগিয়ে যায়। লোকবল কম থাকায় থানার ভিতরে ঢুকে মনোনয়ন তুলতে পুলিশের সাহায্য দাবি করে শহরের গোষ্ঠী। আর থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে বিপক্ষ দল।
বেশ কিছুক্ষণ পরে উমাশঙ্করবাবু ব্লকের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে কালনা থানায় ঢোকেন। তিনি প্রস্তাব দেন, শহর গোষ্ঠীর দুই সদস্যের নাম দেওয়া হোক, তিনি মনোনয়ন তোলার ব্যবস্থা করবেন। তবে অন্তত চারজনের নাম দেওয়ার দাবি করে ওই গোষ্ঠী। তিন জনের নামে রফা হওয়া মুখে কালনা শহর তৃণমূল নেতা মদন পোদ্দার শহরের সমস্ত ছেলের মনোনয়ন তোলার দাবি করেন। আর আলোচনা এগোননি উমাশঙ্করবাবুও। পুলিশও কলেজ পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে রাজি হয় না। ইতিমধ্যেই ঘড়ির কাঁটা দুটো পেরিয়ে যায়। অন্য গোষ্ঠীর সদস্যেরা ততক্ষণে ৩২টা আসনেই মনোনয়ন তুলে ফেলেছেন। মনোনয়ন তুলতে না পারা দলের নেতা অমরজিৎ হালদারের অভিযোগ, “দলীয় এক মন্ত্রীর নির্দেশে সমাজবিরোধীরা মনোনয়ন তুলল, অথচ আমরা মহকুমার কিছু ভাল ছাত্রকে এনেও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় মনোনয়ন তুলতে পারলাম না।” তবে টিএমসিপি-র অন্যতম রাজ্য সম্পাদক পলাশ মণ্ডল জানান, যোগ্যতাসম্পন্ন যুবকেরাই মনোনয়ন তুলেছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম কলেজ চত্বরে ঢুকলেই প্রার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। যারা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তাঁরা কলেজ চত্বরেই ঢোকেনি।” এ দিকে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজে মনোনয়ন তুলে বেরোনো ছাত্রদের কাছ থেকে নথিপত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। এই কলেজ ছাড়া আসানসোল-দুর্গাপুরের অন্যত্র অবশ্য মনোনয়ন তোলা নিয়ে বিশেষ গোলমাল বাধেনি। রানিগঞ্জ মহিলা কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও মনোনয়ন তুলতে পারেনি এসএফআই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.