বন্ধ থাকা খনিতে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল এক কর্মীর। অসুস্থ হন খনির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার-সহ আরও তিন জন।
মঙ্গলবার বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে রামনগর দু’নম্বর কোলিয়ারিতে এই ঘটনায় কর্মীদের সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, খনিগর্ভে যে মুখোশ নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, তা ওই কর্মীরা সঙ্গে নেননি। এমনকী, সঙ্গে থাকা সেফ্টি ল্যাম্প নিভে গেলেও ফিরে না এসে আরও গভীরে চলে যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর দাবি।
ইসিএল সূত্রের খবর, কয়লা কাটা শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েক বছর আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই খনিটি। খনিগর্ভে যে জল জমে তা পাম্পের সাহায্যে তুলে আশপাশের খনিতে নানা কাজের জন্য সরবরাহ করা হয়। কয়েক দিন ধরে পাম্পটি খারাপ। এ দিন সকালে সেটি সারানো-সহ খনিগর্ভের রক্ষণাবেক্ষণে নামেন কোলিয়ারির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার গুরুপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়, সিনিয়র মাইনিং সর্দার নিমাই সূত্রধর (৫৯)-সহ ১৩ জন কর্মী।
ওই দলে থাকা ওভারম্যান দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পাম্প সারানোর পরে তাঁরা দেখভালের কাজের জন্য এগোচ্ছিলেন। কিছুটা যাওয়ার পরে শ্বাস নিতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল। একটি সেফ্টি ল্যাম্প হাতে সামনে ছিলেন নিমাইবাবু। হঠাৎ সেই ল্যাম্প নিভে যায়।
খনির উদ্ধারকারী দল গিয়ে নিমাইবাবুকে তুলে আনে। চিকিৎসক জানান, তিনি মৃত। গুরুপ্রসন্নবাবু, দয়াময়বাবু ও সার্ভেয়ার শান্তিময় পালকে ইসিএলের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। দয়াময়বাবু ও শান্তিময়বাবুকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও গুরুপ্রসন্নবাবু ভর্তি রয়েছেন। নীলাদ্রিবাবু জানান, বিষাক্ত গ্যাসের জন্যই এমন ঘটেছে বলে চিকিৎসকেরা তাঁদের জানিয়েছেন। গোটা বিষয়টির তদন্ত হবে।
মুখোশ না নিয়ে নামার অভিযোগ প্রসঙ্গে দয়াময়বাবুর দাবি, “খনি বন্ধ থাকায় এখানে মুখোশ নেই। তা ছাড়া, বড় কোনও দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছাড়া আমরা মুখোশ ব্যবহার করি না। রক্ষণাবেক্ষণের কাজে মাঝে-মধ্যেই কর্মীরা এই খনিতে নামেন। তাই এমন ঘটতে পারে, কেউ ভাবিনি।” এ দিনের ঘটনায় খনির সুরক্ষা নিয়ে অবশ্য কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত খনি শ্রমিক সংগঠনের নেতা নরেন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকায় পরিষ্কার, বন্ধ খনির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।” মাইনিং সর্দার ও ওভারম্যানদের সংগঠন ‘ইনমোসা’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পূর্ণানন্দ মিশ্রের অভিযোগ, “মেয়াদ উত্তীর্ণ সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে কাজ করানো হয় কর্মীদের। নিয়মিত পরীক্ষাও হয় না।” |