থানায় থানায় ঘোরা বধূর অভিযোগে
ধৃত ২, গাফিলতি মিলল থানারও
তিন দিন ধরে তিন থানা এবং এক ফাঁড়িতে ঘুরে নাকাল বধূর অভিযোগে অবশেষে কাজ হল। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের মধ্যস্থতায় মেজিয়া থানায় দুর্গাপুরের যে দুই বাসিন্দার বিরুদ্ধে তাঁর শ্লীলতাহানি ও স্বামীকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন বধূটি, রবিবার রাতেই তাদের ধরে পুলিশ। তা ছাড়া, বধূটিকে হয়রান করার অভিযোগের বিভাগীয় তদন্তে বড়জোড়া থানার আইসি-র বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।
সংবাদমাধ্যমে সোমবার খবর প্রকাশ পেতেই বাঁকুড়া জেলায় বধূটিকে হয়রান করায় অভিযুক্ত তিন থানাগঙ্গাজলঘাটি, বড়জোড়া এবং মেজিয়ার সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “ডিএসপি (প্রশাসন) অম্লান ঘোষ তদন্ত করেন। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বড়জোড়া থানার আইসি-র তরফে কর্তব্যে গাফিলতি হয়েছে। রিপোর্টটি ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) অজয় নন্দকে পাঠানো হবে।”
ধর্তব্যযোগ্য অভিযোগ (কগনিজিবল অফেন্স) নিয়ে কেউ থানায়় গেলে পুলিশকে এফআইআর নিতেই হবে বলে ২০১৩-র নভেম্বরে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। অভিযোগকারী কোন এলাকার বাসিন্দা, তা সেখানে গৌণ। পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চ রায় দেয়, কোনও পুলিশ অফিসার এফআইআর নিতে না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে।
কিন্তু বাঁকুড়া ও দুর্গাপুর শহরের মাঝে দামোদরের চর এলাকা সোনাইচণ্ডীপুরের বাসিন্দা বধূটি হাড়ে-হাড়ে টের পেয়েছেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা সহজ কাজ নয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর বাড়িতে হানা দেয় জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী। বাধা দিতে গেলে তাঁর স্বামীকে রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযোগ জানাতে গিয়ে শুক্রবার থেকে দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন ফাঁড়ি, বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি ও মেজিয়া থানার মধ্যে কার্যত চরকির মতন ঘুরতে থাকেন ওই বধূ। সোনাইচণ্ডীপুর নির্দিষ্ট ভাবে কোনও থানার অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায়, সবাই অভিযোগ না নিয়ে তাঁকে ঘুরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
বধূটির ক্ষোভ, “এক দিকে আমার স্বামী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে। অন্য দিকে, পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে আমাকে এ থানা-ও থানা ঘুরিয়ে মারছিল। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার ঘটনাটি না জানলে হয়তো কোথাও অভিযোগ জানাতেই পারতাম না। তদন্তও হত না।” রবিবার রাতে অবশ্য তাঁর করা অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্গাপুরের জীতেননগর কলোনির বাসিন্দা মনোরঞ্জন সরকার ও প্রেমানন্দ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন বাঁকুড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ১৪ দিন জেল-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বধূটিকে ফাঁড়ি ও থানাগুলিতে গিয়ে এতটা হেনস্থা হতে হল কেন? দুর্গাপুরের ডিটিপিএস ফাঁড়ির দাবি, শুক্রবার দুপুরেই ঘটনার খবর পেয়ে তারা সোনাইচণ্ডীপুরে গিয়েছিল। একটি জেনারেল ডায়েরি নিয়ে অভিযুক্তদের জেরা করা হয়। ওই বধূকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা দাবি করেন, এলাকাটি বড়জোড়া থানার মধ্যে পড়ে। বড়জোড়া থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাবেন তাঁরা। নিয়ম অনুযায়ী ফাঁড়ির পুলিশ জেনারেল ডায়েরির কপি ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয় বড়জোড়া থানায়। তবে বড়জোড়া থানার আইসি অখিলচন্দ্র মালাকারের বক্তব্য, “কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।” অন্য দিকে, গঙ্গাজলঘাটি থানার ওসি দেবাশিস পাণ্ডা এবং মেজিয়া থানার ওসি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ঘটনার সময় তাঁরা থানায় ছিলেন না। ফলে, ঠিক কী হয়েছে তা জানেন না।
থানায় ঘুরে হয়রান বধূটির মন্তব্য, “অনেকেই আমার মতো সমস্যায় পড়েন। সে খবর তো পুলিশ সুপারের কানে না-ও পৌঁছতে পারে। তাঁদের কী হবে?” রাজ্য পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার বক্তব্য, ‘‘আমরা দেখছি, কী করা যায়।” বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বলেন, “থানার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে, থানার দেওয়ালেই উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর লেখা থাকে। তাঁদের কাছেও সাধারণ মানুষ সমস্যার কথা বলতে পারেন।” তবে ওই বধূটির দাবি, তিনটি থানা ও একটি ফাঁড়িতে বার কয়েক চক্কর লাগিয়েও অভিযোগ জানানোর হেল্পলাইন-নম্বর তাঁর চোখে পড়েনি। পুলিশ সুপারের আশ্বাস, জেলা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের নম্বর যাতে জনতার চোখে পড়ার মতো জায়গায় লেখা হয়, সে ব্যবস্থা করতে জেলার সব থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হবে। বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটেও বিশেষ ভাবে উল্লেখ থাকবে ওই নম্বরের।

(সহ প্রতিবেদন: সুব্রত সীট)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.