বিশ্বযুদ্ধ চলছে ভেবে তিন দশক জঙ্গলে কাটানো হিরুর মৃত্যু
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেমে গিয়েছে তিরিশ বছর আগে। কিন্তু হিরু ওনোডাকে বিশ্বাস করায় কার সাধ্যি? শেষমেশ প্রাক্তন সতীর্থের কথা শুনে জঙ্গলের গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। সে ঘটনার পর চল্লিশ বছর কাটিয়ে অবশেষে সত্যি সত্যিই দেহ রাখলেন জাপানি সেনাবাহিনীর এই প্রাক্তন সদস্য।
অথচ, হিরুকে বহু আগেই ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেছিল জাপান এবং ফিলিপিন্স সরকার। সব জট পাকিয়ে গেল তো? তবে শুনুন, হিরুর গল্প। ইতিহাস বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানি সেনাবাহিনীর তথ্য আধিকারিক এবং গেরিলা যুদ্ধকৌশলের প্রশিক্ষক ছিলেন হিরু। ১৯৪৪ সাল নাগাদ তাঁকে ও তাঁর দলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ফিলিপিন্সের লুবাংয়ে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছিল কোনও অবস্থাতেই যেন তাঁরা জঙ্গল না ছাড়েন এবং আত্মসমর্পণ না করেন। পরের বছরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল পরিষ্কার হয়ে যায়। জাপান পরাজিত। তখনও অবশ্য তিন সতীর্থের সঙ্গে লুবাংয়ের জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছেন হিরু। নির্দেশের অপেক্ষায়।
তবে তাঁদের অস্তিত্বের কথা জানতে পারা যায় আরও বছর পাঁচেক বাদে। সালটা ১৯৫০। তিন সঙ্গীর এক জন সে বছর জাপানে ফিরে যান। তখনই জানা যায়, জঙ্গলে রয়ে গিয়েছেন হিরু-সহ তিন জন। মাঝে মধ্যেই লাগোয়া সেনা ছাউনি দেখতে চলে যান তাঁরা, কখনও বা ফিলিপিন্স সেনাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াই করেন। সে সময়ই হিরুর

হিরু ওনোডা
সঙ্গীদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়। তার পর প্রায় ন’বছর ধরে লুবাংয়ের জঙ্গল তন্নতন্ন করে খুঁজেছিল জাপান এবং ফিলিপিন্স সেনা। ১৯৫৯ সালে তাঁরা জানান, হিরু এবং তাঁর শেষ সঙ্গী মৃত। তার পর কেটে গিয়েছে তেরো বছর। ১৯৭২ সাল নাগাদ ফের ফিলিপিন্স সেনার সঙ্গে গুলিযুদ্ধ হয় হিরু ও তাঁর সঙ্গীর। তখনই জানা যায়, তাঁরা জীবিত। কিন্তু সেই যুদ্ধে হিরুর শেষ সঙ্গীরও মৃত্যু হয়। পালিয়ে যান হিরু। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে পরিবারকে নিয়ে লুবাংয়ে হাজির হন জাপান সরকারের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ভবি ভোলেননি। শেষমেশ ১৯৭৪ সাল নাগাদ হিরুর প্রাক্তন কম্যান্ডিং অফিসার এসে দেখা করেন তাঁর সঙ্গে। তার পরই জঙ্গল ছেড়ে বেরোন হিরু। জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরও তিনি তা বিশ্বাস করতে চাননি। তিরিশ বছর ধরে লুবাংয়ের জঙ্গলে তিনি কী করছিলেন, এ নিয়ে হিরুকে প্রশ্ন করা হলে, সোজাসাপ্টা উত্তর এসেছিল “নির্দেশ পালন করছিলাম।” পরে এ-ও জানিয়েছিলেন, তাঁকে যে বারবার জঙ্গল থেকে বার করার চেষ্টা হচ্ছিল, তা আসলে মার্কিন ‘ভক্ত’ জাপানের পুতুল-সরকারের কারসাজি। যুদ্ধ যে চলছেই, সে বিশ্বাস পোক্ত হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়। একাধিক মার্কিন বোমারু বিমান সে সময় ফিলিপিন্সের আকাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। সেগুলি দেখে হিরুর বিশ্বাস দৃঢ় হয়, যুদ্ধ থামেনি।
কিন্তু যখন বাস্তব মেনে দেশে ফিরলেন তিনি, তখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপান তখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের বন্যায় দুলছে। পাশ্চাত্যের ধাঁচে সেখানেও জাঁকিয়ে বসেছে প্রযুক্তি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার যে সাদা-কালো জাপানের ছবি মনে নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন হিরু, ১৯৭৪ সালে সেই জাপানকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না হিরু। তাই ব্রাজিলে চলে যান ১৯৭৫-এ। শুরু করেন নতুন জীবিকা, জীবন। তবে মাঝেমধ্যে জাপানেও আসতেন তিনি।
সেই সেনার মৃত্যু হল ৯১ বছর বয়সে। লুবাংয়ের জঙ্গলে তিন দশক আত্মগোপন করে থাকা হিরু আজ সত্যিই মুক্তি পেলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.