থানায় অভিযোগ জানাতে নাকাল বধূ
শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানানোর জন্য হন্যে হয়ে একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও তিনটি থানায় তিন দিন ধরে চক্কর লাগালেন এক বধূ। আর ‘আমাদের এলাকা নয়’ বলে এড়িয়ে গেল সবাই। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়ার পুলিশ সুপারের নির্দেশে রবিবার বিকেলে ওই বধূর অভিযোগ নিল মেজিয়া থানা। গাড়ি পাঠিয়ে ওই থানায় অভিযোগকারিণীকে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করলেন পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কেউ অভিযোগ জানাতে গেলে থানা তা নিতে বাধ্য। অভিযোগকারী কোন এলাকার বাসিন্দা, তা সেখানে গৌন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার এ দিন বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যেখানকার ঘটনাই হয়ে থাকুক, যে কোনও থানারই ওই মহিলার অভিযোগ নেওয়া উচিত ছিল। লিখিত ভাবে আমার কাছে থানাগুলির গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ না হলেও বিষয়টি আমি জেনেছি। বাঁকুড়ার তিনটি থানার বিরুদ্ধে ওই বধূকে ফিরিয়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”
যে জায়গার এই ঘটনা, সেই সোনাইচণ্ডীপুর আদতে বাঁকুড়া ও দুর্গাপুর শহরের মাঝে দামোদরের একটি চর এলাকা। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বেশ কিছু পরিবার বাস করলেও নির্দিষ্ট ভাবে কোনও থানা বা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত নয় এই এলাকাটি। ফলে, কোনও ঘটনা ঘটলে অভিযোগ জানাতে গিয়ে বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই এলাকার মাঝবয়সী এক বধূর বাড়িতে হানা দেয় জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী। তিনি সেই সময় স্বামীর সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন। বধূটির অভিযোগ, “দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে শ্লীলতাহানি করে দুষ্কৃতীরা। আমার স্বামী বাধা দিলে তাকে রড দিয়ে বেধড়ক পেটায় ওরা। আমি কোনও রকমে বেরিয়ে এক পড়শির বাড়িতে আশ্রয় নিই।” কিছু ক্ষণ পর পড়শিদের নিয়ে বাড়িতে ফিরে তিনি দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে রয়েছেন স্বামী। তাঁকে উদ্ধার করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এর পরেই শুরু ঘোরার পর্ব।
শুক্রবার সকালে ওই বধূ প্রথমে দুর্গাপুর থানার অধীন দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের (ডিটিপিএস) ফাঁড়িতে গিয়ে গোটা ঘটনা জানান। তাঁর দাবি, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে দুই দুষ্কৃতীকে আটকও করে। কিন্তু, এলাকাটি তাদের নয়, এই দোহাই দিয়ে অভিযোগ না নিয়ে তাঁকে বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানায় যেতে বলা হয়। সেখানে অভিযোগ না করলে আটক দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানায় পুলিশ। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের দাবি, “ডিটিপিএস ফাঁড়ি একটি জেনারেল ডায়েরি করেছিল। ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করার পর ডায়েরিটি বড়জোড়া থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।” কাউকে আটক করার কথাও অস্বীকার করেছেন ওই পুলিশকর্তা। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কিন্তু বলেন, “ডিটিপিএস ফাঁড়ি থেকে এমন কোনও ডায়েরি বড়জোড়ায় এসেছিল বলে আমার অন্তত জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
বধূটি জানিয়েছেন, ডিটিপিএস ফাঁড়ির কথামতো শুক্রবার রাত ন’টা নাগাদ বড়জোড়া থানায় পৌঁছলে তারা গঙ্গাজলঘাটি থানায় যোগাযোগ করতে বলে। শনিবার সকালে তাঁরা গঙ্গাজলঘাটিতে যান। সব শুনে ওই থানাও অভিযোগ নেবে না জানিয়ে ফের বড়জোড়া থানাতেই যেতে বলে। বধূটির পরিবারের অভিযোগ, এ বার বড়জোড়া থানা লিখিত অভিযোগ নেয়। অভিযোগের একটি ফোটোকপি তাদের দেওয়া হয়। যদিও তাতে থানার স্ট্যাম্প মারা ছিল না। কিন্তু, বাড়ির ফেরার পথেই বড়জোড়া থানার পুলিশ ফোন করে ‘কোনও ভাবেই অভিযোগ নেওয়া যাবে না’ বলে জানিয়ে দেয়। রবিবার ফের থানায় আসতে বলা হয় তাঁদের। এ দিন সকালেই বধূ বড়জোড়া থানায় আসলে তাঁকে আবার গঙ্গাজলঘাটি থানায় যেতে বলা হয়। তিনি গঙ্গাজলঘাটিতে গেলে তাঁকে মেজিয়া থানায় যেতে বলা হয়। হতোদ্যম না হয়ে বধূ মেজিয়া থানাতেও যান।
ছবিটা বদলায়নি। মেজিয়াও অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। তখন হতাশ হয়ে রানিগঞ্জ হয়ে নিজেদের গ্রামে ফিরে যাচ্ছিলেন ওই বধূ ও তাঁর সঙ্গী, দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার বাসিন্দা কালীপদ রায়। তখনই আসে পুলিশ সুপারের ফোন! কালীপদবাবুর কথায়, “এসপি ফোন করে মেজিয়া থানায় যেতে বলেন। কিন্তু, দু’দিন ধরে থানায় থানায় ঘোরার পরে আর অভিযোগ করার ইচ্ছা ছিল না আমাদের। কিন্তু, উনি গাড়ি পাঠিয়ে আমাদের রানিগঞ্জ থেকে মেজিয়া থানায় নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। উপায় না দেখে মেজিয়া পুলিশও অভিযোগ নেয়।” ওই বধূ বলেন, “আমার স্বামী এখনও হাসপাতালে। সুবিচার চেয়ে থানায় থানায় তিন দিন ধরে ঘোরাঘুরি করলাম। অথচ পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরা দূরে থাক, অভিযোগ পর্যন্ত নিতে চাইল না! পুলিশ সুপারের চাপে থানা অভিযোগ নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু, আদৌ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা তারা করবে কি না, তা আমাদের সন্দেহ আছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.