নির্বাচন পরবর্তী বাংলাদেশে সমাজের একটি অংশের উপরে অত্যাচার কমানোর সব চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে ঢাকা। গত কাল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননকে এ কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি নয়াদিল্লিকে আশ্বাস দিয়েছেন, জামাতের অত্যাচারের জেরে বাংলাদেশের মানুষ যাতে দলে দলে শরণার্থী হিসেবে ভারতে না আসেন তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।
তিন দিনের ভারত সফর শেষ করে আজ ঢাকা ফিরলেন বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের একদা রাজনৈতিক সচিব ও হাসিনার বিশেষ দূত তোফায়েল। ফেরার আগে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি আগের থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বিরোধী দল বুঝতে পারছে, হিংসার আশ্রয় নিয়ে আখেরে কোনও লাভ হয়নি, বরং জনসমর্থন হারিয়েছে তারা। তাই বিএনপি এখন অবরোধের রাজনীতি থেকে সরে এসে রাজনৈতিক কর্মসূচির আশ্রয় নিয়েছে।
সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনকে অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানবিরুদ্ধ হিসাবে আখ্যা দিলেও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অবরোধ হিংসা এবং হরতাল থেকে সরে এসেছেন। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, তাঁর দলের ভিতরে নির্বাচনে যোগ না-দেওয়া নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জিয়ার ছেলে তারেকের গোষ্ঠী বাদ দিলে, দলের বেশিরভাগ নেতা এবং কর্মীই এখন মনে করছেন, ভোটে যোগ না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তোফায়েলের কথায়, “বিরোধী দলের অনেকেই মনে করছেন যে জামাতে ইসলামির সাহায্য নেওয়াটা ভুল হয়েছে। বিএনপি বুঝতে পেরেছে যে জামাতের ইন্ধনেই নির্বাচনে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।” কিন্তু সমাজের একটি অংশের উপরে হামলা হচ্ছে কেন? তোফায়েলের মতে, “বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িক নন। এটা করিয়েছে জামাত, তারা ১৯৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।”
শিবশঙ্কর মেনন তোফায়েলের সঙ্গে আলোচনায় সীমান্ত পরিস্থিতি বিশদ জানতে চেয়েছেন। তোফায়েল জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা, বগুড়া, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁ-র মত কিছু জায়গায় জামাতে ইসলামি সমাজের একটি অংশের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়েছে, ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে - এ কথা সত্যি। কিন্তু সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।
পশ্চিমী বিশ্বকে সামলানোর কাজও হাসিনা সরকার অনেকটাই করে ফেলেছে বলে দাবি হাসিনা সরকারের। গত কালই ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, তারা হাসিনা সরকারের পাশে আছে। জামাতে ইসলামি ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগসাজশ খতিয়ে দেখার প্রস্তাব পাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। সাম্প্রতিক নির্বাচন নিয়ে অসন্তুষ্ট হলেও হাসিনা সরকারের প্রতি মনোভাব বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছে আমেরিকাও। হাসিনা সরকারের কর্তাদের মতে, কিছু শিশু জামাতের হিংসার বলি হওয়ার পরে পশ্চিমী দুনিয়ার টনক নড়েছে। তাদের মনোভাব বদলানোয় ভারতও সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন আওয়ামি নেতৃত্ব।
তোফায়েল জানিয়েছেন, তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তির পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বাড়ানোকেও তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। |