দুনিয়ার কাছে তাঁরা আদর্শ তারকা দম্পতি। কিন্তু জোর গুঞ্জন, একুশ বছরের সেই দাম্পত্যেও চিড় ধরেছে। এবং সেই চিড়ের নেপথ্যে রয়েছে জোহানেসবার্গে আয়োজিত নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণসভার সেই চটুল মুহূর্ত। যেখানে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী হেলে থর্নিং-শ্মিটের পাশে বসে স্মার্টফোনে ‘সেলফি’ তোলার চেষ্টা করছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এক মার্কিন সংবাদপত্রের দাবি, ক্ষুব্ধ মিশেলের সঙ্গে এ নিয়ে তীব্র মনোমালিন্য হয়েছে ওবামার।
এ নিয়ে একটি ছবিও প্রকাশ করেছে ওই সংবাদপত্র। যাতে দেখা যাচ্ছে মিশেল ক্ষিপ্ত ভাবে কিছু বলছেন। কিন্তু যাঁকে বলছেন, তিনি ওবামা কি না, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে। সংবাদপত্রটির আরও দাবি, সম্পর্কে এতটাই গভীর চিড় ধরেছে, যে তার জেরে বিবাহবিচ্ছেদের কথাও ভাবছেন দু’জনে। এখন অপেক্ষা ২০১৬-র। কারণ সে বছরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় দফার কার্যকাল শেষ করবেন বারাক ওবামা। এক মার্কিন সংবাদপত্রের দাবি, তার পরেই সম্পর্ক ছিন্ন করে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন মিশেল।
সত্যি-মিথ্যে অবশ্য জানার উপায় নেই। কারণ হোয়াইট হাউস বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। আর যে সংবাদপত্রে খবরটি ছাপা হয়েছে, তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন বহু দিনের। সব মিলিয়ে বিষয়টিতে আমল দিতে নারাজ অনেকেই। কিন্তু বিতর্কের কেন্দ্রীয় চরিত্র যদি স্বয়ং ওবামা হন, তা হলে জল্পনা বাড়াই স্বাভাবিক। আর তা বাড়ছেও। সেই জল্পনার আগুনে ঘি ঢালছে একের পর এক ঘটনা। |
এই সেই বিতর্কিত ছবি। ছবি: এপি। |
তার মধ্যে সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি ঘটেছে ক্রিস্টমাসের সময়। হাওয়াই দ্বীপে সপরিবার বেড়াতে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু যখন ফিরে আসেন, দেখা যায় দুই কন্যা সাশা এবং মালিয়া সঙ্গে রয়েছে। স্ত্রী মিশেল তখনও হাওয়াইতেই। নিন্দুকদের দাবি, বারাক-মিশেল সম্পর্কের অবনতির সর্বশেষ প্রমাণ এটিই। তবে হোয়াইট হাউস আবার অন্য রকম ব্যাখ্যা দিয়েছে। ওবামার মুখপাত্রের ব্যাখ্যা, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে স্ত্রীকে একা রেখে আসা আসলে ওবামার তরফ থেকে মিশেলের জন্মদিনের আগাম উপহার। স্বামী-দুই কন্যা, সংসার, দেশ, দশের দায়িত্ব সামলে নিজের মতো করে একা থাকাটা মিশেলের পক্ষে যে বেশ দুর্লভ, তা বিলক্ষণ বোঝেন ওবামা। তাই মিশেলকে একা হাওয়াইতে রেখে এসে সেই সময়টাই উপহার দিতে চেয়েছিলেন তিনি।
এবং হোয়াইট হাউসের দাবি, সে সময়টুকু চেটেপুটে উপভোগ করেছেন মার্কিন ‘ফার্স্ট লেডি’। মাউই দ্বীপে ওপরা উইনফ্রের প্রাসাদোপম বাড়িতে সময় কাটিয়েছেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ওপরার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গেল কিং এবং মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডারের স্ত্রী শ্যারন ম্যালন। মহিলামহলের আড্ডায় দারুণ সময় কাটিয়েছেন মিশেল, দাবি হোয়াইট হাউসের।
কিন্তু এই ব্যাখ্যায় মোটেই থামানো যাচ্ছে না সন্দেহবাতিক নিন্দুকদের। তাঁদের একাংশের দাবি, পরিবারের সঙ্গে যদি সত্যি সত্যি ঘনিষ্ঠ হন মিশেল, তা হলে হঠাৎ জন্মদিন উপলক্ষে মহিলাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে এত দৃঢ় অবস্থান কেন নিলেন তিনি? নিন্দুকেরা অবশ্য এর মধ্যেও ওবামা পরিবারে কলহের আঁচই পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, জীবনের অনেকগুলো বছর স্বামী-সন্তানদের দিয়ে দেওয়ার পর ক্ষুব্ধ মিশেল এখন স্রেফ নিজের জন্যই ভাবতে চান। সেই মনোভাবই ফুটে উঠেছে তাঁর মন্তব্যে।
কিন্তু মন্তব্যগুলিকে যে খুব সাধারণ ভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়, সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁর বক্তব্যের মূল নির্যাস ছিল মহিলারা যেন নিজেদের জন্যও সময় বের করেন, সুস্থ থাকার সব রকম চেষ্টা করেন। কিন্তু তা হলে এমন আপাত নিরীহ মন্তব্যের পিছনে হঠাৎ অন্য রকম ব্যাখ্যা কেন খুঁজতে গেলেন সমালোচকরা?
কারণ হিসেবে তাঁরা তুলে ধরছেন জোহানেসবার্গে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্য আয়োজিত স্মরণসভার সেই চটুল মুহূর্তটিকে। তার পর থেকেই বারাক-মিশেল সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে গুজব ছড়িয়েছে। যাতে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ঘটনা। সম্প্রতি এ-ও শোনা গিয়েছে, যে প্রেসিডেন্টের সুরক্ষার কাজে নিযুক্ত ‘সিক্রেট সার্ভিসের’ দেহরক্ষীদের কাছ থেকে ওবামার বিশ্বাসভঙ্গের কথাও জানতে পেরেছেন মিশেল।
এমন দাবি অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও বেশ ক’বার প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডির টালমাটাল সম্পর্ক নিয়ে বহু জল্পনা হয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই মিশেল এবং বারাককে একে অপরের পাশে দেখা গিয়েছে। কোনও ফাঁক নজরে আসেনি সেখানে।
শনিবার রাতে মিশেলের জন্মদিন উপলক্ষে যে পার্টির আয়োজন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তাতেও কোনও শূন্যতা নজরে আসবে না বলেই আশা অতিথিদের। কিন্তু এ কথা সত্যি যে এ দিনের পার্টিতে সবার তীক্ষ্ন নজর থাকবে দেশের ‘ফার্স্ট কাপল’-এর উপর। সে নজরে আদর্শ অভিভাবক এবং আদর্শ দম্পতির তকমাটা প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডি বজায় রাখতে পারেন কি না, সেটাই দেখার। |