টাটকা খবর
চির অন্তরালে চলে গেলেন মহানায়িকা

৬ এপ্রিল ১৯৩১-১৭ জানুয়ারি ২০১৪।
দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান। টানা ২৬ দিন হাসপাতালে তাঁর জীবন নিয়ে দড়ি টানাটানির পর শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে জীবনাবসান হল মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের। আর সেই সঙ্গেই অবসান হল বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের এক অধ্যায়ের। গত ২৩ ডিসেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে মধ্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। টানা প্রায় এক মাস তাঁর শারীরিক অবস্থা নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলছিল। ফুসফুসে সংক্রমণের পাশাপাশি তাঁর হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর রাতে তাঁকে আইটিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়।
ভিড় কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
টানাপোড়েন চলছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। প্রবল শ্বাসকষ্টে কাতরাচ্ছিলেন মহানায়িকা। কাজ দেয়নি নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরও। চিকিৎসা নিতে তাঁর প্রবল অনীহা যে কোনও একটা বড় বিপদ ডেকে আনছে তার আঁচ পাচ্ছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু সুচিত্রা সেন চিকিৎসা প্রত্যাখানের ব্যাপারে নিজের জেদে এতটাই অনড় ছিলেন যে চিকিৎসকদের ভূমিকা কার্যত ছিল অসহায় দর্শকের।
এ দিন সকাল ৭টায় পালস রেট নেমে যায় আচমকাই। ৮টায় হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। শুরু হয় হৃদপিন্ডের ম্যাসাজ। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে।
মহানায়িকার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরেই হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মধ্যে প্রশাসনিক তত্পরতা তুঙ্গে ওঠে। বেলা ১০টা ২০ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে সুচিত্রার প্রয়াণ সংবাদ ঘোষণা করেন। সুচিত্রা-কন্যা মুনমুন হাতজোড় করে সংবাদমাধ্যমকে প্রণাম জানান। বলেন, ‘‘মায়ের হয়ে আপনাদের প্রণাম।’’ ঠিক হয়, যত দ্রুত সম্ভব তাঁর দেহ বালিগঞ্জের বাড়ি হয়ে কেওড়াতলা শ্মশানে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। পোড়ানো হবে চন্দন কাঠে।
শেষ
শ্রদ্ধা মুখ্যমন্ত্রীর।
চলছে শেষকৃত্য।
বাঁ দিক থেকে রাইমা, মুনমুন ও রিয়া।
ইতিমধ্যে বেলুড় মঠ থেকে হাসপাতালে এসে পৌঁছন তিন সন্ন্যাসী স্বামী বিমলাত্মানন্দ (তাপস মহারাজ), স্বামী সুদেবানন্দ (মাখন মহারাজ), স্বামী গুরুদশানন্দ (উজ্বল মহারাজ)। মৃতদেহের গলায় শ্রীরামকৃষ্ণের প্রসাদী মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। মৃতদেহে পরানোর জন্য মুনমুনের হাতে তুলে দেওয়া হয় সারদাদেবীর প্রসাদী শাড়ি। এসে
অস্থি বিসর্জনের পথে।
পৌঁছয় শববাহী গাড়িও। তত ক্ষণে সুচিত্রাকে পরানো হয়ে গিয়েছে শেষযাত্রার পোশাক। সাদা বেনারসি। তার উপরে জড়ানো সোনালি গরদের চাদর। ঘোমটা দেওয়া। কপাল থেকে চিবুক পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ঘোমটার ভিতর থেকে। যেন শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন। কফিনে বন্ধ মহানায়িকার মরদেহ ফুল দিয়ে সাজানো ওই গাড়িতে তোলা হয় বেলা সাড়ে ১২টায়।
পুলিশ পাইলট দিয়ে শববাহী গাড়ি বের হয় হাসপাতাল থেকে। এই গাড়ির পিছনেই ছিল মুনমুন, রিয়া ও রাইমার গাড়ি। তার ঠিক পিছনেই মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি। মরদেহ নিয়ে গাড়ির কনভয় যায় বালিগঞ্জের বাড়িতে। সেখানে মিনিট পাঁচেক মরদেহ রেখে সোজা কেওড়াতলা।
আগেই মহানায়িকাকে গান স্যালুট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ শ্মশানে তাঁকে গান স্যালুট দেওয়া হয়। দুপুর ১টা ৫০ নাগাদ শুরু হয় শেষকৃত্য। সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী, পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তি। শ্মশান চত্বর এবং আশপাশে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। সুচিত্রার আপামর ভক্ত ভিড় করেছিলেন শ্মশানের বাইরে। এমনকী, চেতলা ব্রিজের উপরেও তিলধারণের জায়গা ছিল না। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রবীন্দ্র সদন চত্বরেও ছবি রাখা হয়েছিল।
সুচিত্রার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই যে ভিড় শুরু হয়েছিল হাসপাতালের বাইরে, সেই ভিড়ই কার্যত জনসমুদ্রে পরিণত হয় শ্মশানে। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ।

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

জীবন যে পথে
জন্ম ৬ এপ্রিল ১৯৩১ বাংলাদেশের পাবনায়।
বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ভাইবোনের মধ্যে সুচিত্রা ছিলেন পঞ্চম।
১৯৪৭ সালে শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে। একমাত্র কন্যা মুনমুন সেন।
‘সাত পাকে বাঁধা’-র জন্য প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী হিসাবে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর সম্মান।
১৯৭২ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কার।
জনসমক্ষে আসবেন না বলে ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান।
২০১২ সালে ‘বঙ্গ বিভূষণ’।
প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমা ‘সাত নম্বর কয়েদি’। মুক্তি পায় ১৯৫৩ সালে।
প্রথম হিন্দি সিনেমা ‘দেবদাস’-এর মুক্তি ১৯৫৫ সালে।
শেষ হিন্দি সিনেমা ‘আঁধি’ মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে।
শেষ বাংলা সিনেমা ‘প্রণয় পাশা’ মুক্তি পায় ১৯৭৮-এ।
১৯৭৮ সালে সিনেমা থেকে অবসর।
শেষ জনসমক্ষে আসা ১৯৮৯-এ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর।
মৃত্যু ১৭ জানুয়ারি ২০১৪।

সুচিত্রা সেন অভিনীত ছায়াছবি

চিরকালের সুচিত্রা
 
তবু মনে রেখো...

শেষের সে ক্ষণ
সকাল ৭.০০ পালস রেট আচমকাই নেমে যায়।
সকাল ৮.০০ বন্ধ হয় হৃদস্পন্দন। শুরু হয় কার্ডিয়াক ম্যাসাজ।
সকাল ৮.২৫ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহানায়িকার জীবনাবসান।
সকাল ৯.৩০ হাসপাতালে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সকাল ১০.২০ মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুচিত্রার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে, ব্যবহৃত হবে চন্দন কাঠ।
দুপুর ১২.০০ শববাহী গাড়িতে বালিগঞ্জের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হল মহানায়িকার কফিনবন্দি দেহ।
দুপুর ১২.৩০ বাড়ি থেকে শ্মশানের উদ্দেশে রওনা।
দুপুর ১.০০ সাধারণের প্রবেশাধিকার বন্ধ। দেহ পৌঁছল কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী, নিকটাত্মীয় ও টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র জগতের কলাকুশলীরা।
দুপুর ১.৩০ মাল্যদান করলেন নিকটাত্মীয়রা।
দুপুর ১.৪০ গান স্যালুট দেওয়া হল মহানায়িকাকে।
দুপুর ১.৫০ মুখাগ্নি করলেন কন্যা মুনমুন। শুরু হল শেষকৃত্য।
বিকেল ৫.৩০ শেষকৃত্য সম্পন্ন।
সন্ধে ৬.৪০ চিতাভস্ম গঙ্গায় বিসর্জন।

দিল্লির হোটেলে মিলল সুনন্দা পুষ্করের দেহ
শুক্রবার রাতে দিল্লির এক হোটেল থেকে উদ্ধার হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী তারুরের স্ত্রী সুনন্দা পুষ্করের দেহ। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। হোটেলের যে ঘর থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে সেটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। আত্মহত্যা কী না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বৃহস্পতিবারই পাক সাংবাদিক মেহর তারারের সঙ্গে শশী তারুরের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে টুইট যুদ্ধ চলছিল। সেই বিতর্কের অবসান ঘটাতে তারুর ও তাঁর স্ত্রী সুনন্দা ময়দানে নামেন। ওই দিন তারুর-দম্পতি জানান, তাঁদের দাম্পত্য জীবন সুখী। কিন্তু কিছু বিতর্কিত টুইটের জন্য সেই আবহ নষ্ট হচ্ছে। এ দিন সুনন্দার অস্বাভাবিক মৃত্যু তাঁদের ‘সুখী দাম্পত্য’কে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করাল।
সুনন্দার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মেহের তারার টুইটে বলেন,“আমি খুবই মর্মাহত। বলার ভাষা নেই। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।”

নিজস্ব চিত্র ও পিটিআই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.