সনিয়া নারাজ, তাই নন প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী

১৬ জানুয়ারি
ড়াইটা রাহুল গাঁধী বনাম নরেন্দ্র মোদীই রইল। শুধু রাহুলের নামের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর তকমাটা জুড়ল না কংগ্রেস। বরং এ ব্যাপারে সমস্ত রহস্যের ইতি টেনে কংগ্রেস আজ জানিয়ে দিল, লোকসভা ভোটে দলের প্রচার অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন রাহুল গাঁধীই। এবং তিনিই ভবিষ্যৎ নেতা।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকে এ বিষয়ে আজ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। আগামিকাল তালকাটোরা স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের মহা-অধিবেশনে তা অনুমোদন করা হবে।
রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হল না কেন? বিশেষ করে চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে হারের পরে সনিয়া গাঁধী নিজেই বলেছিলেন, “উপযুক্ত সময়ে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করবে কংগ্রেস।” আজ ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত বৈঠকেও গোড়ায় এই নিয়ে দাবি উঠেছিল। কিন্তু তা নাকচ করে দিলেন সনিয়া নিজেই। আগের অবস্থান থেকে সরে এসে তিনি এ দিন বলেন, “কোনও দল যদি তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করে, তার মানে এই নয় যে কংগ্রেসকেও তা করতে হবে। সেটা কংগ্রেসের রীতি নয়।” তা হলে ২০০৯ সালে যে মনমোহন সিংহের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল? তারও জবাব দেন সনিয়া। বলেন, “তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এ বার অবসর গ্রহণের কথা তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন।”

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন
সনিয়া ও রাহুল। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে পিটিআইয়ের ছবি।
সম্প্রতি চার রাজ্যের ভোটে হারের পরে প্রশ্ন উঠেছিল, কংগ্রেস কি এ বারে নরেন্দ্র মোদীর মোকাবিলায় রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে? কংগ্রেস নেতাদের একটি বড় অংশ বলছেন, তখন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যাপারে উপযুক্ত সময়ে ঘোষণা করার কথা বলেন সনিয়া। কিন্তু তার পরে দলেই প্রশ্ন উঠেছে, এই ভাবে বিজেপির ফাঁদে পা দেওয়া কি ঠিক কাজ হবে?
সনিয়া আজ সে কথাই বলেছেন। গত এক মাস ধরে জয়রাম রমেশ-সহ রাহুল শিবিরের অনেক নেতাও একই যুক্তি দিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য ছিল, রাহুলের নাম ঘোষণা করে কেনই বা মার্কিন মুলুকের মতো ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম’ বা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো ভোট হবে এ দেশে? মনমোহনও বলেছিলেন সে কথা।
এ দিন রাহুলকে প্রচার অভিযানের নেতা ঘোষণার পরে কংগ্রেসের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা আরও বলেন, এটা শুধু বিজেপির ফাঁদে পা দেওয়ার বিষয় নয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে মোদীর সঙ্গে রাহুলের মৌলিক ফারাকটাও তুলে ধরতে চাইলেন সনিয়া। যার মোদ্দা বক্তব্য, রাহুলের কাছে লোকসভা ভোটে জেতার অর্থ শুধু প্রধানমন্ত্রী হওয়া নয়। যে বার্তা ৭২ ঘণ্টা আগে রাহুল নিজেও দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “বিজেপি-র কাছে ক্ষমতায় আসা মানে শুধু এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক ব্যবস্থা। কংগ্রেস সেই দর্শনে বিশ্বাসী নয়।” এমনকী, কতকটা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো একই সুরে রাহুল এ-ও বলেছিলেন, “লোকসভা ভোটে সমস্ত বিতর্ক প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী প্রসঙ্গে এসে থেমে যাচ্ছে। কিন্তু বিতর্ক সেটা নয়। বিতর্ক হল, দেশহিতের জন্য কে কী নীতি ও মতাদর্শের কথা বলছেন। এবং তাতে মানুষের কতটা সুবিধা হবে!”
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদীর সঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনের তফাত আর কোথায় কোথায়, তা কাল কংগ্রেস অধিবেশনের বক্তৃতাতেই স্পষ্ট করবেন রাহুল। লোকসভা ভোটের আগে তা মানুষের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করবে বলেও আশাবাদী দলের নেতারা। তবে তার আগে, আজ তাঁকে প্রচার অভিযানের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে দেওয়ার পরে রাহুল বলেন, “একা আমি নই, আমরা এ বার সর্বশক্তি দিয়ে লড়ব। মনে রাখতে হবে, এ বার কংগ্রেস তথা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের ওপরে আঘাত আসতে চলেছে। ঐক্যবদ্ধ ভাবে তা রুখতে হবে। লোকসভা ভোটে জিতলে আপনারা আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, সেটাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।”
“কোনও দল যদি তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করে, তার মানে এই নয় যে কংগ্রেসকেও তা করতে হবে।” —
“লোকসভা ভোটে জিতলে আপনারা আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন, সেটাই নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।” —
রাহুল যে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন না, সেই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে বৈঠকে কিন্তু বেশ কিছু নাটকীয় মোচড় ছিল। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সংসদের অ্যানেক্স ভবনে মনমোহন সিংহ, রাহুল গাঁধী, আহমেদ পটেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেন সনিয়া। বৈঠকে প্রথম থেকেই রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি উঠতে থাকে। সেই তালিকায় ছিলেন বি কে হরিপ্রসাদ, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা-সহ একাধিক নেতা। কিন্তু বাদ সাধেন সনিয়া। যুক্তি দিয়ে সেই দাবি নাকচ করে দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য শেষ হতেই দাঁড়ান পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আপনার প্রস্তাব আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু কংগ্রেস অধিবেশনের জন্য যে প্রস্তাব তৈরি হয়েছে, সেখানে অন্তত এটা লিখে দেওয়া হোক যে, রাহুল দলের প্রচার অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন। এবং এই অধিবেশন তাতে অনুমোদন দিচ্ছে।” প্রদীপবাবুর সেই প্রস্তাব সমর্থন করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ, কেরল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রমেশ চেন্নিথালা, অজিত জোগী প্রমুখ। তাঁদের সেই দাবিই মেনে নেওয়া হয়।
যদিও অনেকে মনে করছেন, সবই হয়েছে আগাম চিত্রনাট্য মেনে। সনিয়া-রাহুল আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বা দলীয় সভাপতি, এমনকী কার্যকরী সভাপতির মতো কোনও ঘোষণাও হবে না। বরং লোকসভা ভোটের সময় সভাপতি সনিয়া রইলেন কতকটা রাহুলের বর্ম হয়ে। আবার রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে না ধরে এমন ব্যবস্থা করে রাখা হল, যেখানে দল ব্যর্থ হলে তাঁকে বাঁচানো যায়।
তবে এই সব যুক্তি কংগ্রেসের নেতারা মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, রাহুলের নিজেকে বাঁচিয়ে চলার কোনও প্রশ্ন নেই। ব্যর্থতার দায় মাথায় নিতে তিনি কখনও পিছ-পা হননি। আসলে লড়াইটা রাহুল বনাম মোদীই হবে। ফারাকটা শুধু রইল মোড়কে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.