বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ৪২ দিন জেল খাটা হয়ে গিয়েছে তাঁর। আবার ওই অভিযোগকারিণীরই দায়ের করা নির্যাতনের অন্য মামলায় গ্রেফতার হন যুবকের পরিবারের অন্য কয়েক জন। বৃহস্পতিবার মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টে উঠলে জানা যায়, মহিলা যখন ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন, তার আগেই তাঁদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলে, এটা কি তা হলে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ? সেটা কি সম্ভব? শুনানির পরে অভিযুক্ত স্বামী এবং তাঁর বাড়ির অন্যদের জামিন দেয় আদালত।
দমদম মাছবাজার এলাকার বাসিন্দা পূজাকুমারী হেলা তাঁর স্বামী অভিজিৎ দাসের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্তের আইনজীবী দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় এ দিন হাইকোর্টে বলেন, পূজাকুমারীর দু’দফার অভিযোগ স্পষ্টতই পরস্পরবিরোধী। গত বছর ৭ নভেম্বর দমদম থানায় দায়ের করা অভিযোগে ওই মহিলা বলছেন, অভিজিতের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়েছিল। অভিজিৎ তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পুরী নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়। তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। প্রথম দফার সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিজিৎকে গ্রেফতার করা হয়।
আবার ওই বছরের ৩০ নভেম্বর দমদম থানাতেই বধূ-নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন পূজাকুমারী। সেই অভিযোগের জেরে অভিজিতের পরিবারের অন্য লোকেদেরও গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু ওই অভিযোগেই পূজাকুমারী জানান, অভিজিতের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর।
অভিজিতের আইনজীবী বলেন, পূজাকুমারীর দায়ের করা দ্বিতীয় অভিযোগের বয়ানেই স্পষ্ট, পুরীতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ যখন তিনি করেছেন, তখন তিনি বিবাহিতা। সে-ক্ষেত্রে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ঠিক হতে পারে না।
এই মামলায় অভিযোগকারিণী এবং পুলিশের দিক থেকে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে হাইকোর্টও। তাদের বিস্ময় এবং প্রশ্ন সেই কারণেই। বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় সরকারি আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, কোনও মহিলা একই সঙ্গে বিবাহিতা এবং আবার বিয়ের আশ্বাসে ভরসা করে ধর্ষিতা হতে পারেন কী ভাবে? মহিলার বক্তব্যেই প্রমাণিত, তাঁর ধর্ষণের অভিযোগ বিয়ের পরেই করা হয়েছে। বিবাহিতা অবস্থায় তিনি কী ভাবে ধর্ষিতা হন, সেটাও যথেষ্ট বিতর্কের বিষয়। এই ধরনের মামলায় সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি।
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে উচ্চ আদালত। একই থানার পুলিশ প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে বধূ-নির্যাতনের মামলা করল কী করে, তা বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয় বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। জেল-হাজতে থাকা অভিজিৎ ও তাঁর পরিবারের অন্যদের জামিন মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ। |