চলতি অর্থবর্ষে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্ব অর্থনীতি। এই আশা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাঙ্ক।
আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দের মতে, গত বছরের শেষের দিক থেকেই উন্নত দেশগুলিতে কোনও রকম আর্থিক সাহায্য ছাড়াই ছন্দে ফেরার লক্ষণ দেখা গিয়েছে। চলতি বছরেও তা বজায় থাকবে। তবে ৪% বৃদ্ধির যে আশা করা হয়েছিল, তুলনায় এখনও তা অনেকটাই কম। একই কথা জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কও। বিশ্ব অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে দ্বিবার্ষিক যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তারা, সেখানেই চলতি বছরে ৩.২% এবং ২০১৫ সালে ৩.৪% বৃদ্ধির পূর্বাভাস জানিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ক। গত বছরেও যা ছিল ২.৪%।
বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আশার কথা শোনালেও, আগামী দিনে চহিদা তলানিতে নেমে যাওয়ার জেরে অত্যধিক মূল্যহ্রাসের সম্ভাবনাও রয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লাগার্দে। এর প্রভাবে উৎপাদন, মুনাফা, কর্মসংস্থান, সবই নিম্নমুখী হলে ফের আঘাত হানতে পারে মন্দা। উন্নত দেশগুলিতে মন্দার সঙ্গে যুঝতে সুদ কমানোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলে সেই দেশগুলিতে সুদ শূন্যের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। যে কারণে ভবিষ্যতে মূল্যহ্রাসের সম্ভাবনা রয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই আশঙ্কা সত্ত্বেও, নতুন চাকরি তৈরি সম্ভব হবে বলেই তাঁর আশা। তবে তা হলেও চলতি অর্থবর্ষে কোনও ভাবে বিশ্ব জুড়ে ২০ কোটি চাকরি তৈরি করা সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছেন তিনি।
এ দিন লাগার্দের সুরেই বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা জানিয়েছেন বিশ্বব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। পাঁচ বছর পর আমেরিকা, জাপানের মতো উন্নত দেশগুলি মন্দা কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইউরোপের অর্থনীতি। পাশাপাশি, চিন, ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিও গত বছরের শেষ থেকে কিছুটা হলেও ভাল ফল করছে। ফলে সব মিলিয়ে আগামী দিনে আর্থিক বৃদ্ধির হারও বাড়তে পারে। তবে কোনও ক্ষেত্রেই খুব বেশি ওঠা-পড়া দেখা যাবে না, দুর্বল অর্থনীতিকে টেনে তুলতে এই স্থিরতা সহায়ক হতে পারে বলেই তাঁর মত। সুদের হারও ২০১৬-র মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে ৩.৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলেই রিপোর্টে প্রকাশ।
আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি ফিরবে জানালেও, সার্বিক ভাবে এখনও সন্তুষ্টির কোনও কারণ ঘটেনি বলেই মত আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্কের। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিগুলির উপর এখনও চাপ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যেমন, জাপানের মতো দেশে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে তাদের অভিমত। তেমনই ইউরোপের আর্থিক পরিস্থিতিও বিপদের বাইরে নয়। আমেরিকা ধীরে ধীরে ত্রাণপ্রকল্প সরিয়ে নিলে বিশ্ব অর্থনীতি কী অবস্থায় দাঁড়াবে, সে দিকেই আপাতত তাকিয়ে সকলে। |