বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্মাণে নয়া দিশা দিতে
বাড়ছে ছাইয়ের ব্যবহার

ছাই নেহাতই ছাই নয়! বরং তা গড়ে তুলতে পারে মজবুত বাঁধুনিও!
এত দিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই (ফ্লাই অ্যাশ) দিয়ে ইট তৈরির কথাই শোনা গিয়েছে। কিন্তু এ বার তা কাজে লাগছে সিমেন্ট তৈরিতেও। এমনকী, বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সিমেন্টের পাশাপাশি তাপবিদ্যুৎ ছাইয়ের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আর একটি নতুন পদার্থ। যা দিয়ে উন্নত মানের সিমেন্ট তৈরি তো করা যাবেই, ব্যবহার করা যাবে অগ্নিনিরোধক আস্তরণ কিংবা ঐতিহ্যবাহী ভবন সংস্কারেও। বিজ্ঞানের ভাষায় এই পদার্থের নাম, জিওপলিমার।
কী এই জিওপলিমার?
জিওপলিমার এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের সঙ্গে অন্যান্য রাসায়নিক মিশিয়ে তা তৈরি করা হয়। এই পদার্থটি সিমেন্ট তৈরিতে নতুন দিক আনতে পারে। অগ্নিনিরোধক চাদর কিংবা ঐতিহ্যবাহী বাড়ি সংস্কারেও এটা কাজে লাগতে পারে। তাই এই পদার্থকে নির্মাণ শিল্পের ক্ষেত্রে নয়া দিশা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক শুভজিৎ সরস্বতী বলেন, “এখনও এর ব্যবহার সে ভাবে নেই। তবে ভবিষ্যতে এর ব্যবহার বাড়বে।”
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই দিয়ে জমি ভরাট করা হয়, এটাই ছিল দীর্ঘ দিনের পরিচিত ছবি। পরবর্তী কালে তা দিয়ে ইটও তৈরি করা হয়। কিন্তু সিমেন্ট শিল্পে ব্যবহার বাড়ার ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপন্ন ছাইয়ের অনেকটাই পুনর্ব্যবহার করা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের ব্যবহার নিয়ে এক অনুষ্ঠানে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয় দত্ত জানান, গোটা দেশে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যত ছাই তৈরি হয়, তার ৫০ শতাংশই সিমেন্ট শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে।
ছাইয়ের এমন ব্যবহার পরিবেশবান্ধব বলেও দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছাই মেশানো সিমেন্টে জলও অনেক কম লাগে। নির্মাণও পোক্ত হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক অমিত দত্ত বলেন, “এই জিনিস বর্জ্য হিসেবে ফেলে না দিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে। এটা পরিবেশের পক্ষেও ভাল।”
ছাই মেশানো সিমেন্ট এবং ছাইয়ের ইটের ব্যবহারে মুম্বই ও দিল্লি দেশের মধ্যে এগিয়ে। দিল্লি মেট্রোর নির্মাণেও এগুলির ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ রাজ্যে এখনও তেমন ব্যবহার বাড়েনি। কোল অ্যাশ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছাই ব্যবহারে দিল্লি-মুম্বইয়ের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে রাজ্য।”
বছর আটেক আগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই দিয়ে ইট তৈরির নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য। তারও প্রচলন বাড়েনি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ইট তৈরিতে চাষযোগ্য জমির মাটি যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্যই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।” সেই নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় মাটি দিয়েই বেশির ভাগ ইট তৈরি করা হচ্ছে। ইটভাটাগুলিতে কেন ছাইয়ের ব্যবহার বাড়ানো যাচ্ছে না?.
পর্ষদ সূত্রের ব্যাখ্যা, ছাই দিয়ে ইট তৈরি হবে কি না, তা বাজারের চাহিদা এবং নির্মাতাদের মানসিকতার উপরে নির্ভর করে। তবে সরকারি ক্ষেত্রে যাতে ছাইয়ের ইটের ব্যবহার বাড়ানো হয়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের ব্যবহার বাড়াতে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে বিশেষ প্রকল্পও দেওয়া হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে। “আমরা ইটভাটা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছাইয়ের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছি।” মন্তব্য পর্ষদ চেয়ারম্যানের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.