আপ-এ দ্বন্দ্ব তীব্র, অরবিন্দকে ‘স্বৈরাচারী’ বললেন বিন্নি
সংবাদ সংস্থা |
আম আদমি পার্টির ভরা সংসারে অশান্তির আগুন!
বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন আপ-বিধায়ক বিনোদকুমার বিন্নি। সাংবাদিক সম্মেলন করে হাটে হাঁড়ি ভাঙার হুমকি সপ্তাহ তিনেক আগেই দিয়েছিলেন। সে যাত্রায় কোনও মতে তাঁকে ঠেকিয়েছিলেন আপ নেতৃত্ব। কিন্তু বৃহস্পতিবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে ফের নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দিল্লির লক্ষ্মীনগরের এই বিধায়ক। আম আদমি পার্টি নিজের মতাদর্শ থেকে ক্রমশ পিছিয়ে এসে দিল্লির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলে বুধবার বিন্নি অভিযোগ করেছিলেন। এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই সব অভিযোগকেই প্রকাশ্যে আনলেন তিনি।
দলবিরোধী মন্তব্য করায় বিন্নির কি শাস্তি হবে? আপ-এর তরফে যোগেন্দ্র যাদব সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “দলের রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তাঁকে শো-কজ করা হতে পারে।”
বিন্নি জানান, দিল্লিবাসীকে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপ ক্ষমতায় এসেছিল তার কোনওটাই রাখা হয়নি। উল্টে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে তাঁদের বোকা বানানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে বলা হয়েছিল দিল্লির প্রত্যেক নাগরিককে বিনামূল্যে জল সরবরাহ করা হবে। অর্ধেক করে দেওয়া হবে বিদ্যুতের বিলও। কিন্তু কেজরিওয়াল সরকার ক্ষমতায় এসে ৭০০ লিটার জল বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা করেন। তাঁর অভিযোগ, এর বেশি জল ব্যবহার করলে পুরো মূল্য দিতে হবে। এমনকী, ৪০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও গুনতে হবে পুরো মাশুল। |
এ দিন সকালে বিন্নি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের সমস্ত সিদ্ধান্ত বন্ধ দরজার পেছনে নেওয়া হয়। সেখানে কেজরিওয়াল এবং তাঁর চার-পাঁচ জন সহযোগী থাকেন। তাঁর কথায়: “অরবিন্দ এক জন স্বৈরচারীতে পরিণত হয়েছেন। কারও সঙ্গে মতবিরোধ হলে তিনি রেগে যান। যদি কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেন, অরবিন্দ চেঁচিয়ে ওঠেন।” দল প্রতি মুহূর্তেই মতাদর্শের সঙ্গে আপোস করছে। বিন্নি বলেন, “প্রথমে ঠিক ছিল, অন্য কোনও দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা হবে না। শেষে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানো হয়।” এটা দিল্লির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের কিছু নেতা পেছন থেকে আপ-সরকারকে চালাচ্ছেন বলেও এ দিন মন্তব্য করেন বিন্নি।
বিন্নির ক্ষোভের কথা আগাম আঁচ করতে পেরে বুধবার অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, প্রথমে মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে এবং পরে লোকসভার টিকিট পাওয়ার জন্য বিন্নি তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে যাওয়ায় বিন্নি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলে মন্তব্য করেন অরবিন্দ।
এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন বিন্নি সাংবাদিকদের সামনে অরবিন্দকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, অরবিন্দ বিভিন্ন সময়ে নিজের স্বার্থে নানা মানুষকে ব্যবহার করেছেন। অণ্ণা হজারে, কিরণ বেদী-সহ বেশ কিছু ব্যক্তির নাম এই তালিকায় উল্লেখ করেন তিনি। এমনকী, লাল বাতিওয়ালা গাড়ি এবং সরকারি বাংলো নিয়েও অরবিন্দ-সহ দিল্লি মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের কটাক্ষ করেন বিন্নি। জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় নতুন ডুপ্লে ফ্ল্যাটে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হন কেজরিওয়াল। মঙ্গলবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশন চত্বরে এক বিদেশিনিকে ধর্ষণ করা নিয়েও কেজরিওয়ালকে একহাত নিয়েছেন বিন্নি। সরকার গঠনের দু’সপ্তাহের মধ্যে জনলোকপাল বিল আনতেও কেজরিওয়াল সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে আপ-এর বিরুদ্ধে সরব হলেও এখনই দল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন বিন্নি। দলের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি আগামী ২৭ জানুয়ারির মধ্যে পূরণ না হলে অনশন আন্দোলনে বসবেন বলে এ দিন হুমকি দিয়েছেন তিনি।
গত ২৪ ডিসেম্বর দিল্লি মন্ত্রিসভায় জায়গা না পাওয়ায় আপ-এর বৈঠক থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বিন্নি। পরের দিন সাংবাদিক বৈঠকও ডেকেছিলেন। কিন্তু তড়িঘড়ি তাঁকে শান্ত করতে আপ-এর তরফে ওই দিন রাতেই সঞ্জয় সিংহ এবং কুমার বিশ্বাসকে বিন্নির বাড়িতে পাঠানো হয়। গভীর রাত পর্যন্ত কথাবার্তা চলে। ২৫ ডিসেম্বর বিন্নি জানিয়ে দেন, দলের সঙ্গে তাঁর কোনও ফাটল তৈরি হয়নি। মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে তাঁর ক্ষুব্ধ হওয়ার কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। দিল্লির মসনদে বসতে না বসতেই দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধ প্রকাশ্যে এনে সিঁদুরে মেঘ দেখালেন বিনোদকুমার বিন্নি! |