অভিযোগে দেরি কেন, প্রশ্ন ইন্টার্নকে
বিচারপতির বিচার কী ভাবে, পথ খুঁজছে কোর্ট

১৫ জানুয়ারি
বসরপ্রাপ্ত বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে মহিলা ইন্টার্ন এত সময় নিলেন কেন, আজ এই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তা সত্ত্বেও তারা ইন্টার্নের অভিযোগটি গ্রহণ করেছে। অভিযোগ বিবেচনা করা হবে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবম বলেন, “আমরা এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইচ্ছুক।” কিন্তু একই সঙ্গে তিনি এটাও মেনে নিয়েছেন, শীর্ষ আদালতের কোনও বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখার পাকাপাকি ব্যবস্থা নেই।
ওই ইন্টার্ন যে সময়ের কথা বলেছেন অভিযোগে, সেটা ২০১১ -এর মে মাস। প্রায় ৩২ মাস পরে কেন তিনি অভিযোগ জানাতে এলেন, সেই প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি সদাশিবম বলেন, “উনি এত দিন অপেক্ষা করলেন কেন? আমাদের আশঙ্কা, এর পরে তো বিচারপতিদের অবসরের ২০ বছর পরেও কেউ এসে অভিযোগ জানাবেন।
স্বতন্ত্র কুমার।
তখন কি ৮৫ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে কোর্টে ডেকে পাঠানো হবে?”
ইন্টার্নের পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে যুক্তি দেন, পাকাপাকি ব্যবস্থা থাকলে ঠিকঠাক সময়েই অভিযোগ আসবে। আদালতও সেটা বেঁধে দিতে পারে। বিচারপতিরা জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তবে এ দিন শীর্ষ আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে, ওই ইন্টার্নের রিট পিটিশনের বক্তব্য নিয়ে তারা এখনই মতামত জানাচ্ছে না।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিচারের প্রসঙ্গটি প্রথম আলোচনায় আসে বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরে। তখন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির কমিটি সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে জানায়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যে অবাঞ্ছিত আচরণ করেছেন, তা প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট। প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত এই কমিটির রিপোর্টের বিরুদ্ধে সরব হন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ারই নেই অভিযোগ খতিয়ে দেখার। একই কথা পরে শীর্ষ আদালতও মেনে নেয়। ৫ ডিসেম্বর তারা সিদ্ধান্ত নেয়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করা হবে না। তাই প্রাক্তন বিচারপতি তথা বর্তমানে জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র কুমারের বিরুদ্ধে ওই ইন্টার্ন সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ জানাতে গেলে তা নেওয়া হয়নি। যুক্তি হিসেবে ৫ ডিসেম্বরের সিদ্ধান্তকেই খাড়া করা হয়েছিল।
তা হলে আজ কেন অভিযোগ গ্রহণ করা হল? আদালত সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সেই সিদ্ধান্তকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ওই ইন্টার্ন। স্বতন্ত্র কুমারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি তিনি সংবিধানের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ তুলেছেন। এই অনুচ্ছেদ বলছে, কোনও নাগরিক নিজের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন। ওই মহিলা ইন্টার্ন সেই সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলে আবেদন করায় নড়ে বসতে হয়েছে শীর্ষ আদালতকে।
ওই ইন্টার্নের আরও আবেদন, তাঁর অভিযোগ শুনে তদন্ত করার জন্য ফোরাম তৈরি করা হোক। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা রুখতে নিজেদের তৈরি ‘বিশাখা নির্দেশিকা’ সুপ্রিম কোর্ট নিজেই মেনে চলুক। একই সঙ্গে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাকাপাকি ব্যবস্থা তৈরিরও আবেদন করেন তিনি।
এ বিষয়ে আজ নোটিস জারি করে প্রাক্তন বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমার, কেন্দ্র ও সুপ্রিম কোর্টেরই সেক্রেটারি জেনারেলকে চার সপ্তাহের মধ্যে অবস্থান জানাতে বলেছে শীর্ষ আদালত। এই বিষয়ে আইনজ্ঞদের সাহায্যও নিতে চাইছে সুপ্রিম কোর্ট। অ্যাটর্নি জেনারেল গুলাম বাহনবতীকে এই মামলায় সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। আইনজীবী ফলি এস নরিম্যান এবং পি পি রাও-কেও সাহায্যের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। আইনজীবীরা মনে করছেন, বিচারপতিদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ক্ষেত্রে মামলাটি মাইলফলক হতে যাচ্ছে। বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমার আগেই অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্র’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মামলার সঙ্গে এই মামলার মিল যেমন আছে, তেমনই আছে অমিলও। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে যিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মতো এই ইন্টার্নও কলকাতার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেসের প্রাক্তন ছাত্রী। পার্থক্য হল, বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমার সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত অবস্থাতেই ওই ইন্টার্নের সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণ করেন বলে অভিযোগ। যার জেরে প্রথম থেকেই ফাঁপরে পড়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।
কী সেই অভিযোগ? ওই ইন্টার্ন জানান, তিন বার বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমার তাঁর সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণ করেন। ২০১১-এর মে’তে যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন তিনি বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের অফিসে কাজ করছেন। অভিযোগ, এক বার বিচারপতি পিছন থেকে ওই মহিলার কোমরের নীচে হাত দেন। একই ভাবে দ্বিতীয় বার তাঁর সঙ্গে শারীরিক ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। এর পর ওই মহিলাকে তাঁর অধীনেই কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে, তিনি তাঁর সঙ্গে ঘুরতে, হোটেলের ঘরে থাকতে স্বচ্ছন্দ কি না, জানতে চান। এর পরই তিনি ইন্টার্নের কাজ ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান।
আজ সুপ্রিম কোর্টে যখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তখন জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনালে নিজের অফিসে কাজ করেছেন বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমার। সোমবার অসুস্থতার কারণে অফিসে না যাওয়ায় তাঁর পদত্যাগ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ অফিস করেন। দিল্লি হাইকোর্টে তিনটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেন। ইন্টার্নের লিখিত অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় তাঁর মানহানি হয়েছে বলে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন প্রাক্তন বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.