|
|
|
|
|
|
শিল্প-সাধনার পথে সাফল্য ও পুরস্কার |
জলপাইগুড়ি নিউ সার্কুলার রো-এ তাঁর বুটিকে গেলে মনেই হবে না, এই শিল্পীর কাছেই হাতে-কলমে শিখে প্রায় ৬০ জন মহিলা স্বনির্ভর হওয়ার রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন। শাড়ি, জরি, পাট, লেদার, নকশিকাঁথায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর শিল্পমানসটি। তিনি, কৃষ্ণা সাহা। শাড়িতে কাঁথা বা গুজরাতি ফোঁড়ে কিংবা এমব্রয়ডারি বা অ্যাপ্লিকে রচনা করেছেন সূর্য, লক্ষ্মী, স্বস্তিকাচিহ্ন। রামায়ণের কাহিনিও সূচিশিল্পের মাধ্যমে তুলে এনেছেন শাড়িতে। যামিনী রায়ের অঙ্কিত চিত্রের প্রতিরূপ বাঁধা পড়েছে শাড়ির জমিতে, পাড়ে। ব্যাগেরও যে কত রকমফের থাকতে পারে, এখানে না এলে বোঝা যাবে না। কোনওটা ক্রিস্টালের বা পার্লের, তো কোনওটা জরির সুতোয় বোনা অথবা মালাইকটের। রয়েছে লোভনীয় পেপার থ্রেটের ব্যাগও। চর্চিত হাতে বানিয়েছেন সাটিন কাপড়ের রংচঙে নকশা তোলা কুশন, পাটের তৈরি দোলনা। |
|
ঘর সাজানোর সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে রকমারি পট, ফুলদানি গায়ে তার ফেব্রিক্সের প্রয়োগপ্রণালী মুগ্ধতা ছড়ায়। কোনওটির গায়ে লতাপাতার সূক্ষ্ম নকশা, কোনওটিতে হরেক রকমের পাখি, কোনওটিতে আবার নানা রকম মোটিফ। পাঞ্জাবি থেকে কুর্তি, ব্লাউজপিসে ছড়িয়ে থাকা গুজরাতি বা পার্সিস্টিচের সূক্ষ্ম কারুকাজে রয়েছে শিল্পীর নিজস্বতার ছোঁয়া। শিল্পসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চামড়ার তৈরি হেয়ার ক্লিপ, চাবির রিং, মোবাইল ফোন কভার ইত্যাদি। শীতপোশাকের সম্ভারে রয়েছে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল। অসাধারণ নিপুণতায় কাথোওয়ারি স্টিচের কাজ তুলে এনেছেন শাল, চাদরের গায়ে। কৃষ্ণাদেবী তাঁর সৃষ্ট সামগ্রী নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন কলকাতা, মুম্বই, গুয়াহাটি, দিল্লি, রাজস্থানে। শিল্পসাধনার পথ ধরেই এসেছে সাফল্য ও পুরস্কার। সম্প্রতি সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজ্যস্তরের সম্মান। নকশিকাঁথায় ঘন বুনোটে হারিয়ে যাওয়া দেশজ শিল্পের জন্য এই পুরস্কার।
|
ভাষা অন্বেষণ |
|
ছবি: সুদীপ দত্ত। |
‘ভাষা অন্বেষণ ১’-এ দীপককুমার রায় হাজং ভাষা অন্বেষণ করেছেন। হাজং জনগোষ্ঠীর বসবাস ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে। অসমিয়া এবং বাংলা ভাষার সংস্কৃতির প্রভাবে হাজং ভাষা পরিবর্তিত হয়েছে। “হাজং ভাষায় ভোট-চিনা উপাদান যেমন আছে, ঠিক তেমনই আছে ভারতীয় আর্য ভাষা পরিবারের অন্তর্গত মাগধী, প্রাকৃতঅপভ্রংশ স্তরের ভাষাগত নৈকট্য। ফলে আর্য-অনার্যের সম্মিলনে হাজং ভাষা একটি স্বতন্ত্র ভাষা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল”। আলোচ্য গ্রন্থে হাজং ভাষা অনুসন্ধান করতে গিয়ে লেখক ‘হাজং সমাজ ও সংস্কৃতি’ অধ্যায়টি সংযোজন করেছেন। এ অধ্যায়ে হাজং জনগোষ্ঠীর বিবাহ, বিবাহের গান, উত্সব, পূজাপার্বণ, পূজার গান প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। মূল বিষয়ে প্রবেশ করার আগে অধ্যায়টি পাঠককে হাজং সমাজ সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। ‘হাজং ভাষার সাহিত্যের নমুনা’ অধ্যায়গুলির সঙ্গে হাজং শব্দ ভাণ্ডারের এক তালিকা তৈরি করেছেন লেখক। হাজং শব্দ থেকে বাংলা, বাংলা থেকে ইংরেজি। এ ভাবে তৈরি এই তালিকাটি বিষয়ভিত্তিক। যেমন, আত্মীয়তাবাচক শব্দ, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, গাছপালা, উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ, ফল, অসুখ-বিসুখ, বিভিন্ন খাবার, কীটপতঙ্গ, যন্ত্রপাতি, মাছের নাম, ইত্যাদি। ভাষা অন্বেষণকারীদের জন্য তালিকাটি যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গ্রন্থের শেষে সংযোজিত হয়েছে গ্রন্থপঞ্জি। গ্রন্থের প্রচ্ছদ, বিষয়, বাক্যবিন্যাস, মুদ্রণ প্রশংসার দাবি রাখে। পাঠক যেমন এক ‘বিপন্ন ভাষা’র শব্দভাণ্ডারে সমৃদ্ধ হবেন, তেমনি প্রায়-অজানা একটি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনের নানা দিক, এমনকী তাদের সাহিত্য চর্চার নমুনাও জানতে পারবেন ‘ভাষা অন্বেষণ ১’-এ।
|
বেণুবাবুর সিঙারা |
কবির ভাষায় বলতে গেলে সূর্য তখন পাটে নামার উপক্রম। গোধুলির আলো ঘিরেছে শালকুমার হাট। সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলবে কিছু পরেই। হঠাত্ই যেন চঞ্চল হয়ে উঠল অবিন্যস্ত ভিড়। হাটের এক কোণায় ভিড় জড়ো হয়েই চলেছে। অনেকটা মধুর খোঁজে মৌ-চোরদের ছুটে যাওয়া। এ হল সিঙারা নিয়ে লড়াই। কে আগে সিঙারা নিতে পারে তার প্রতিযোগিতা। বেণু পালের ভাজা সিঙ্গারার এমনই জনপ্রিয়তা। হাফপ্যান্ট থেকে শুরু করে প্রবীণেরা, সিঙারা-লাইনে কেউই বাদ নেই। মুখে দিতেই যেন মিলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে, খাস্তা এবং মচমচে। সবটাই কারিগরি হাতের ভেলকি। যাঁর সিঙারার এমন চাহিদা, তার সংসারে কিন্তু অভাব নিত্যসঙ্গী। স্ত্রী-সহ দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার। আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের মধ্যে শুধু বেণুবাবুর সিঙ্গারার সুখ্যাতি সীমাবদ্ধ নেই। পর্যটকদের মুখে মুখে সে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে অন্যত্রও। জলদাপাড়ার জঙ্গলে আসা পর্যটকদের অবশ্য-পালনীয় তালিকায় বেণুবাবুর সিঙারার স্থান পাকা। রসিকের কথায়, সিঙারা স্বাদে যেমন উত্কৃষ্ট তেমনিই আকারেও বড়। দামও মাত্র ৩ টাকা। উত্তরবঙ্গের ভেটাগুড়ির জিলিপি, গঙ্গারামপুরের দই কিংবা ফুলবাড়ির লালমোহন, বেলাকোবার চমচম-এর সঙ্গে পাকাপাকি আসনের দাবিদার শালকুমারের বেণু পালের সিঙারাও।
|
রাবণ-বন্দনা |
উত্তরবঙ্গের লোকনাট্য রাবান গান হারিয়ে যাওয়ার মুখে। হাতে গোনা যে ক’জন শিল্পী এই আঙ্গিকটিকে ধরে রেখেছেন তাঁদের অন্যতম ময়নাগুড়ি ব্লকের রেলগেট এলাকার গুণেশ্বর অধিকারী ও সম্প্রদায়। লোকনাট্যের গান রামায়ণ আশ্রিত হলেও এখানে মুখ্য চরিত্র রাম নয়, রাবণ। একমাত্র বাদ্যযন্ত্র করতাল (বাঁশের) বাজিয়ে রাবান গান পরিবেশিত হয়। গানের সংলাপরীতি আঞ্চলিক। রাবণ-বন্দনা গানেই পালার শুরু। রয়েছে বৈচিত্রপূর্ণ নৃত্য আঙ্গিক। অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত এই লোকনাট্যটি পরিবেশন করা হয়। লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ দীনেশ রায় জানিয়েছেন, লোকনাট্যটি বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রচার ও প্রসারের দরকার। শিল্পীর অনুষ্ঠান পরিবেশনের সুযোগও পাওয়া দরকার। |
|
|
|
|
|