|
|
|
|
|
|
|
কেঁদুলিতে নতুন দিশা |
নিঃশব্দ সাধন |
মকরে দক্ষিণে জাগে সাগর আর পশ্চিমে জয়দেব। সাগরে যদি স্নানই মুখ্য, অজয়ের পাড়ে জয়দেব কেঁদুলিতে গান। কিন্তু গানের জাগা এতই প্রবল যে তল্লাটের তো বটেই, লক্ষাধিক তাতে পর্যটকের কান যায়-যায়। মকর মেলার প্রথম তিন দিন প্রায় দুই শতাধিক আখড়ায় চলে বাউল আর কীর্তনের আসর। বড় শ’খানেক আখড়ায় গান করেন হাজার দুই কীর্তন শিল্পী। সকলেরই নিজেকে শোনানোর তাগিদ প্রবল। বছরে যে অন্তত ৫০-৬০টা পালাকীর্তনের বায়না এখান থেকেই জুটে যায় প্রায় প্রত্যেকের। অতএব সম্বল ঢাউস সাউন্ডবক্স আর ঢ্যাঙা চোঙা। গানকে প্রাণে ফেরাতে এ বার উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন মেলার প্রান্তবাসী এক বাউলযুগল। |
|
মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে জয়দেব কেঁদুলির মেলা। কিন্তু সাধনদাস বৈরাগ্য ও তাঁর জাপানি সাধনসঙ্গিনী মাকু কাজুমির আখড়ায় মাইক বাজছে না। ৩৫ বছর ধরে এই মেলায় আসছেন সাধনদাস। বছর বারো আগে গড়েছেন নিজের আখড়া মনের মানুষ। যেখানে শুধু আধ্যাত্মিক বাউলেরাই গাইতে পারেন। পেশাদার বাউল গান গায়কদের ঠাঁই নেই। সাধনদাসের স্থায়ী আখড়া অবশ্য বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরে। গত বিশ বছর সেখানেই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মাকু। তাঁদের টানে দেশ-বিদেশ, বিশেষত জাপান থেকে রসগ্রাহী মানুষ আসেন। এ বার মনের মানুষ-এ চারটি ছোট আখড়া করা হয়েছে। সীমিত দর্শকের সামনে খালি গলায় গাওয়া হচ্ছে গান। সাধনের কথায়, “আমি তো রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে পারব না। শুধু নিজের কাজটুকুই করতে পারি।” শুরুটা দেরিতে হলেও ভাল।
|
কল্যাণীয়াসু |
‘তোমার কবিতার খাতাটি কোথায় রাখিয়াছি কিছুতেই মনে পড়িতেছে না। এ জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জা ও কষ্ট অনুভব করিতেছি। এই রূপ হারাইয়া ফেলা ও ভুলিয়া যাওয়া আমার অভ্যাস। সে জন্য অনেক অসুবিধে ও দুঃখ ভোগ করিতে হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাহার সংশোধন হইল না।’... চিঠির নীচে স্বাক্ষর শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপরে লেখা বোলপুর, নীচে ১৩ শ্রাবণ, ১৯১৭। প্রাপক মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জের ক্ষীরোদকুমারী ঘোষ। এমনই সাতটি অপ্রকাশিত চিঠির সন্ধান মিলেছে প্রয়াত ক্ষীরোদকুমারীর বাড়িতে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঠাকুর পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব রাজনারায়ণ বসুর ভাই অভয়চরণ বসুর কন্যা ছিলেন ক্ষীরোদ। সেই সূত্রেই তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল। আর একটি সূত্র ছিল সাহিত্য। বিভিন্ন সমকালীন সাময়িকপত্রে ক্ষীরোদকুমারীর কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হত বলে পরিবারের দাবি। একটি চিঠির তারিখ ২ বৈশাখ, ১৩১৩। অর্থাত্ দীর্ঘদিন দু’জনের পত্রালাপ ছিল বলে অনুমান করা যায়। কবি লিখেছেন, ‘তোমার পোস্টকার্ড পাইয়াছি। তুমি আমার নববর্ষের আশীর্বাদ গ্রহণ করিবে। যদি আমাকে বিশেষ কোনও কথা বলিবার থাকে অসঙ্কোচে বলিও।’
|
খণ্ডিত প্রান্তর |
|
লাল মাটির বুকে খোলা প্রান্তর। আর আদিগন্ত মাঠে চোরকাঁটার কার্পেট আর ইতিউতি মাথা উঁচু করে শরবন। ‘দিনান্তে সেই দিগন্তে মাথা নিচু করে সুয্যি’, লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই চেনা মাঠঘাট ফিরিয়ে দিতে রাজ্যপালের কাছে হাত পেতেছেন শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকেরা। উপায়ই বা কী? মোহরদি (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়), গোরাদা (গোরা সর্বাধিকারী), সোমেনদাদের (সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়) ঘরের সুমুখেও যে পাঁচিল বসেছে। পূর্বপল্লির মেলার মাঠ পিলারের শাসনে খাটো। তারের বেড়ার ওপারে হারিয়েছে বিনয় ভবনের খোলা প্রান্তর। উত্তরায়ণের পাশের মাঠ এখন ‘জগদীশ কানন’। কোনাকুনি যে মাঠ ভেঙে রতনপল্লি আর কালোর দোকানের পথ ছিল, যেখানে পায়চারি করতেন প্রবীণ আশ্রমিকেরা, সেখানে প্রবেশ নিষেধ। মেয়েদের হস্টেলের সামনের মাঠে রেলিং। ফেন্সের ঘেরাটোপে তিনপাহাড়ির মাঠ। যুক্তি নিরাপত্তার। তবু আশ্রমিক তথা অধ্যাপক সভার সভাপতি কিশোর ভট্টাচার্যের মতো অনেকেরই প্রশ্ন, “গুরুদেব লিখছেন, মোদের তরুমূলের মেলা, মোদের খোলা মাঠের খেলা। এত পাঁচিল শান্তিনিকেতনে মানানসই?”
|
আড়াই প্যাঁচ |
যেমনটি চাইবেন, তেমনটিই পাবেন। ময়দার জিলিপি, বেসনের জিলিপি, তেলে ভাজা জিলিপি, ঘিয়ে ভাজা জিলিপি, পাতলা-ঘন রসের জিলিপি মায় মুচমুচে জিলিপি। একেবারে হাতে গরম। তবে শর্ত একটাই, একটা-দু’টো নয়, কিনতে হবে কেজি দরে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বিনপুরে প্রতি বছর ৭ মাঘ বসে জিলিপি মেলা। কথিত, প্রায় তিনশো বছর আগে ওই দিনে বিনপুরের গরাম দেবতার থানে ধুমধাম করে পুজো হত। বসত মেলা। আদিবাসী নাচ, মোরগ লড়াই জমত। স্থানীয় জমিদার মহেশচন্দ্র ঘোষের খ্যাতি ছিল ভোজনরসিক হিসাবে। এক দিন তাঁর মনে হল, মেলায় মিষ্টি প্রতিযোগিতা করলে কেমন হয়। লোকলস্কর ছুটল দিকে দিকে। এমনকী পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার নানা প্রান্ত থেকেও এলেন তাবড় হালুইকরেরা। জমিদারবাবু কিন্তু মজলেন আড়াই প্যাঁচেই। সেই থেকেই রেওয়াজ। বিকেলে গরাম দেবতার পুজোর পরে শুরু হয় বেচাকেনা। এক-এক জন তিন-চার মণ জিলিপি বিক্রি করেন। জমিদার গিয়েছেন, জমিদারিও। অমোঘ আড়াই প্যাঁচ কিন্তু অবিনশ্বর।
|
অষ্টপ্রহর রাগ |
২৪ ঘণ্টা সুরযজ্ঞের এ বার ২৫-এ পা। সুরের শহর বিষ্ণুপুরে সঙ্গীতাচার্য অমরনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মরণে ২৪ বছর আগে শুরু হয়েছিল অষ্টপ্রহর মার্গসঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘সুরযজ্ঞ’। শনিবার সকালে বিষ্ণুপুর রামশরণ সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুজিত গঙ্গোপাধ্যায় মিয়া-কি-তোড়ি রাগে খেয়াল গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। রবিবার সকাল পর্যন্ত ১৯০ জন শিল্পী খেয়াল ও ধ্রুপদ পরিবেশন করেন। ধানবাদ, আসানসোল, চন্দ্রপুরা, বর্ধমান, আরামবাগ, গড়বেতা, মেদিনীপুর থেকেও শিল্পীরা এসেছিলেন। প্রবীণ শিল্পী অহিদাস চক্রবর্তী, অনিল বায়েনদের পাশাপাশি ছিলেন সৌমাল্য গোস্বামী, ঐশিকী দে-র মতো নবীন শিল্পীরাও। বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রবীণতম সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব পণ্ডিত অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় সংবর্ধিত হন। পুরিয়া ধনেশ্রী রাগে খেয়াল ও যোগ পরিবেশন করেন তিনি।
|
শিশুর অলচিকি |
ব্যস্ত রাস্তায় হাত ধরে হাঁটার সময়ে বড়দের বাঁ দিকে থাকতে হয়। মোটরবাইকে চড়লে পরতে হয় হেলমেট। খেতে বসার আগে হাতমুখ ধুতে হয়। এই সব শিখে বড়দের শেখানো তো আছেই। নিজেদের জীবনযাপন নিয়ে নিজেরাই নাটক লেখে শিশুরা। অভিনয়ও করে। এই নিয়েই সাত বছর ধরে চলছে আজকের বারাকপুর শিশুমেলা।
|
সন-তারিখ |
নতুন ডায়েরি আর নতুন ক্যালেন্ডার, মানেই নতুন বছর। কিন্তু ক্যালেন্ডারে তেমন নতুনত্ব থাকে কি? বেশির ভাগেই তো হয় দেশি-বিদেশি পাহাড়-নদী-ঝরাপাতা, নয়তো শিব-গণেশ। বর্ধমানে কিন্তু ২০০০ সাল থেকে প্রকাশ হয়ে চলেছে অন্য রকম একটি ক্যালেন্ডার। গত বছর শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২টি ছবি এঁকে দিয়েছিলেন। এ বার রয়েছে শিল্পী রবীন মণ্ডলের ১৯৬২-২০১৩ পরিসরে আঁকা ছবি, ডায়েরির পাতা, নানা মন্তব্যের কোলাজ। প্রকাশক দামোদর গ্রুপ। নারীপাচার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জবালা অ্যাকশন রিসার্চ অরগানাইজেশন আবার নানা পোস্টার, স্লোগান, কর্মসূচির খবর আর ছবি দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে সন-তারিখ।
|
ক্ষীরোদপ্রসাদ |
আশি বছর আগে তাঁর লেখা নাটক আলিবাবা ছিল থিয়েটারে সুপারহিট। অভিনয়ে মধু বসু-সাধনা বসু, নাট্যকার ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ। এ বছর তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ পূর্তি। রসায়নের অধ্যাপনার সঙ্গে চালিয়েছেন নাটক লেখা। শিশিরকুমার ভাদুড়ীর ‘আলমগীর’ নাটকও তাঁরই। ১৮৯৪-১৯২৬, তিরিশ বছরে লিখেছেন প্রায় ৬০টি নাটক। জীবনের শেষ পর্বে ছিলেন বাঁকুড়ার বিকনা গ্রামে। ১৯২৭ সালের ৪ জুলাই সেখানেই মৃত্যু। ‘বিক্না ক্ষীরোদপ্রসাদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ’-এর সুবর্ণজয়ন্তী ও ক্ষীরোদপ্রসাদের দেড়শো বছরে ২০ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের উত্সব হচ্ছে স্কুলমাঠে। ছাত্রছাত্রীরা অভিনয় করবে আলিবাবা।
|
খাঁটি মোয়া |
আসল জয়নগর ও বহড়ুর মোয়া কী বস্তু? সেটা জানাতেই ১৮-১৯ জানুয়ারি বহড়ু হাইস্কুল মাঠে বসছে জয়নগর ও বহড়ুর মোয়ার মেলা। প্রায় ৪০টির বেশি স্টলে সাজানো থাকবে নলেন গুড়, কনকচূড় ধানের খই ও ক্ষীরের মিশ্রণে তৈরি মোয়া। সাধারণ খইয়ে নিম্নমানের গুড় মিশিয়ে তৈরি বাজার-চলতি ‘জয়নগরের মোয়া’র সঙ্গে অকৃত্রিম মোয়ার কী ফারাক, বেশির ভাগ খদ্দের তা জানেন না। মেলা কমিটি বলছে, ফারাকটা বোঝাতেই স্টলে-স্টলে কনকচূড় ধানের খই আর আসল খেজুর গুড় রাখা হচ্ছে। এটাই মেলার প্রথম বর্ষ।
|
নাট্যকল্যাণ |
১৯৮২ সালে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার তত্ত্বাবধানে নাট্য প্রশিক্ষণের কর্মশালা দিয়ে শুরু। দেশের নানা বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বের হাত ধরে নাট্যচর্চা। সেই প্রশিক্ষণ কর্মশালাই গঙ্গাপাড়ের প্রাচীন শহর উত্তরপাড়ার বাসুদেব হুইয়ের জীবনের অঙ্ক ঠিক করে দিয়েছিল। গাঁ-গঞ্জে কম অভিনয় করেননি। পরে বাদল সরকারের অধীনে অন্য ধারার থিয়েটার চর্চাও করেন। প্রথমে পেশায় ছিলেন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ, এখন হাওড়ার ফুলেশ্বরে একটি বেসরকারি হাসপাতালের পদস্থ কর্তা। কিন্তু বাকি সময়টা পুরোদস্তুর নিয়েছে নাটক। ২০০০ সালে নিজের গড়া সমতট সাংস্কৃতিক সংস্থায় নাটকের প্রশিক্ষণ এবং কর্মশালা শুরু করেন। সেই সঙ্গে শুরু হয় সমতট নাট্যমেলা। প্রথম থেকেই দর্শকানুকূল্যের অভাব হয়নি। এক সপ্তাহ আগে হয়ে যাওয়া নাট্যমেলাতেও প্রায় কোনও আসন ফাঁকা ছিল না। বাসুদেববাবু কিন্তু শিল্পভাবনাতেই নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেননি শুধু। দুঃস্থ ও অসুস্থ নাট্যকর্মীদের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন। নাট্যমেলায় বিক্রি হওয়া টিকিটের টাকার একটি বড় অংশ বঙ্গনাট্য সংহতি কল্যাণ তহবিলে ফি বছর তুলে দেন। এ বারও তার ব্যত্যয় হয়নি।
|
|
|
|
|
|
|
|
|