শীত উপেক্ষা করেই মকরে পুণ্যস্নানের ঢল
কর সংক্রান্তির সকালে রূপনারায়ণে স্নান আর মেলায় কেনাকাটা করা-তমলুকের বারুণী মেলার এই পরম্পরা দীর্ঘদিনের। সেই ঐতিহ্য মেনে মঙ্গলবার তমলুক শহরের কাছে রূপনারায়ণ নদীতে ও সংলগ্ন কপালমোচন ঘাটে স্নান করতে আসেন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং হাওড়া জেলার লক্ষাধিক পুণ্যার্থী। প্রতিবারের মতো মকরস্নান ঘিরে গঙ্গাপূজারও আয়োজন করা হয়। তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্করআড়ায় নদীর তীরে বসেছিল মেলাও। তমলুকে মকর সংক্রান্তির স্নান ঘিরে আয়োজিত এই মেলা বারুণী মেলা নামে খ্যাত।
প্রতিবছর এই মেলায় দূর-দূরান্তের বহু মানুষ ভিড় জমান। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার মেলায় ভিড় অনেক বেশি হয়েছে। এ দিন সকাল থেকে রোদের দেখা মেলেনি। তা সত্ত্বেও কড়া শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, হলদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা, সবং থেকে বাসে, ট্রেনে চেপে বহু লোক এই মেলায় আসেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে তমলুক শহরের অধিকাংশ রাস্তা চলে যায় পুণ্যার্থীদের দখলে। হলদিয়ার চৈতন্যপুরের গোবিন্দপুর গ্রাম থেকে সপরিবারে রূপনারায়ণে স্নান করতে এসেছেন সুব্রত মান্না। সুব্রতবাবু বলেন, “পৌষ সংক্রান্তিতে তমলুকে রূপনারায়ণ নদীতে স্নান করলে পুণ্য অর্জন হয়। তাই মকর স্নান করতে বাড়ির সবাইকে নিয়ে এখানে এসেছি। স্নান সেরেই বারুণী মেলা দেখতে যাব। তারপর বিকেলে বাড়ি ফিরব।” হলদিয়ার বাসুদেবপুর থেকে আসা বছর পঁয়ত্রিশের সঞ্জয় মান্না বলেন, “তমলুকে মকরস্নান ও বারুণী মেলার কথা লোকমুখে অনেক শুনেছি। তাই পুণ্য অর্জন করতে এবারই প্রথম রূপনারায়ণে স্নান করলাম। খুব ভাল লাগল।”
মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিসের পসরা নিয়ে হাজির গ্রামীণ কুটিরশিল্পীরা। মেলায় মাটির তৈরি মুড়িভাজার খোলা, রুটিভাজার তাওয়া, লক্ষ্মী ভাঁড়ের পসরা নিয়ে বসেছেন তমলুকের বিষ্ণুবাড় গ্রামের অজয় পাল। তাঁর কথায়, “গত পাঁচ বছর ধরে এই মেলায় আসছি। মাটির জিনিসের চাহিদা আগের থেকে অনেকটাই কমেছে। তবে এবার মেলায় ভিড় বেশি হওয়ায় বিক্রি ভালই হচ্ছে।” বারুণী মেলার টানে এ দিন কপালমোচন ঘাটে মকরস্নান করতে এসেছিলেন হাওড়া জেলার শ্যামপুর থানার গড়চুমুক গ্রামের তারক দাস, অনন্ত দাস, কমলপুর গ্রামের ছায়ারানী সামন্ত, রাধানগর গ্রামের সুনীতি মণ্ডলরাও। তারকবাবুরা হাওড়ার দিকে রূপনারায়ণের আমবেড়িয়া খেয়াঘাটে সকাল ৭টার প্রথম খেয়া পেরিয়ে তমলুকে চলে এসেছেন। মকরস্নান সেরে বাড়ি ফেরার আগে বারুনী মেলার দোকান থেকে তাঁরা কিনেছেন বাঁশের ঝুড়ি, কুলো, মুড়ির চালা, লোহার শাবল, খুন্তি-সহ বিভিন্ন গৃহস্থালির সামগ্রী। তারকবাবু বলেন, “আগে প্রতিবছরই এই মেলায় আসতাম। এবার প্রায় দশ বছর পর আবার মেলায় এলাম। সকালে স্নান সেরে গঙ্গামন্দিরে পুজো দিয়েছি। এখন ঘরের জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।” মেলায় গৃহস্থালীর হরেক জিনিসের পসরা দেখে আপ্লুত তারকবাবু বলেন, “মেলায় বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একটু সস্তায় পাওয়া যায়। তাছাড়া অনেক জিনিসের মধ্যে থেকে পছন্দমত জিনিস বেছে নেওয়া যায়।” হাওড়ার শ্যামপুরের কমলপুর গ্রামের প্রৌঢ়া ছায়ারানী সামন্ত স্নান সেরে বাড়ির জন্য ঝুড়ি, কুলো কিনে ফিরছেন। ছায়াদেবী বলেন, “প্রতি বছর মেলায় আসার সুযোগ হয় না। তাই এবছর মেলা থেকে বাড়ির জন্য জিনিসগুলো কিনলাম।” অন্য দিকে, মকরসংক্রান্তি উপলক্ষে এ দিন কাঁথি মহকুমার দিঘা, শঙ্করপুর, শৌলা, জলধা, রসুলপুর, পেটুয়াঘাট, জুনপুট-সহ উপকূলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পুণ্য স্নান করেন। দর্শনার্থীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। শঙ্করপুরে সোমবার সন্ধ্যায় ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের গঙ্গোত্‌সবের উদ্বোধন হয়। উত্‌সবের মণ্ডপটি দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে। উদ্বোধন করেন প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন কারিগরী শিক্ষামন্ত্রী চক্রধর মেইকাপ, সংগঠনের চেয়ারম্যান প্রণবকুমার কর প্রমুখ। অনুষ্ঠানে দুঃস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সাহায্য, হুইল চেয়ার ও বস্ত্র বিতরণ করা হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.