সম্পাদক সমীপেষু...
আশা কি ছিল
সুকান্ত চৌধুরী হতাশা ও দুঃখের সঙ্গে লিখেছেন, ‘আমাদের প্রদত্ত শিক্ষায় সমাজের অতল স্তরে এতটুকু আলো পৌঁছয়নি।’ (‘সমাজের গোপন ইচ্ছেতেই এই পাপাচার’, ৭-১) তিনি কি সত্যিই কোনও দিন আশা করেছেন, তিনি বা তাঁর মতো শিক্ষকরা যেখানে যে ভাবে যে বিষয়ে শিক্ষা বিতরণ করেছেন তা সমাজের নিম্ন স্তরে কখনও পৌঁছতে পারে? এমনকী বিদ্যালয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও যাঁরা শিক্ষাদান করেন সেই সব শিক্ষক নিরন্ন, দুর্বল, হতদরিদ্র, বদমায়েশ, হাঙ্গামাকারী, মিথ্যেবাদী, কুৎসিত ভাষা-ভাষী, চোর, গুন্ডা, দুর্বৃত্ত, যৌনতায় অকালপক্ব ছাত্রছাত্রীদের কথা কি আলাদা করে ভাবেন? এ ধরনের ছেলেমেয়েদের শিক্ষকেরা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। অথচ তাদের ঠিক পথে আনা শিক্ষকের অনেক উদ্দেশ্যের একটা হওয়া উচিত।
মিশনারি স্কুলে মরাল সায়েন্স পড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। আমাদের সব সাধারণ বিদ্যালয়ে মরাল সায়েন্স আলাদা ভাবে পড়ানো হয় কি না, আমার জানা নেই। সমাজের সবচেয়ে নিচুতলার ছেলেমেয়েরা যে সব বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায় তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ছেলেমেয়েকে কোনও না কোনও ভাবে সংসারে কাজ করা ছাড়াও বাইরে কায়িক পরিশ্রম করতে হয়। যেমন, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, বাড়ি পরিষ্কার করা, মোট বওয়া, বাচ্চা দেখভাল করা, তাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি কাজ করে কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করতে হয়। এমনকী কোনও কোনও মেয়েকে অর্থের জন্য দেহ ব্যবসাও করতে হয়। এ ধরনের সব কাজে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নানা রকম যৌন উপদ্রবের মুখোমুখি হতে হয়। এবং শেষ পর্যন্ত কোনও মেয়ে যদি যৌন অত্যাচারের শিকার হয়, কিংবা ইচ্ছা করেই দেহদান করে, তা হলে তাকে সমাজেরই বিশেষ অবস্থার পরিণতি বলে ধরতে হবে। সেখানে পাপাচারের কথা তোলা বোধহয় অবান্তর।
নিচু তলার ছেলেমেয়েদের ঠিক মতো শিক্ষা দেওয়া সবচেয়ে কঠিন। তাদের বাবা মা, পাড়াপড়শি, শিক্ষক শিক্ষিকা, এন জি ও কর্মীদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব কম নয়। কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই সব ছেলেমেয়ে বিদ্যালয়ে বেশি দূর এগোতে পারে না। হয় তারা পড়াশোনায় মন বসাতে পারে না, নয়তো পড়া বুঝতে পারে না। এক সময় পড়াশোনায় আকর্ষণ হারিয়ে তারা অল্পবয়সেই কোনও একটা কাজে লেগে যায়, নয়তো চুরি শুরু করে। সচরাচর তাদের কাছে তখন নীতি বা আদর্শের কোনও দাম থাকে না। নিজের ইচ্ছে পূরণের জন্য সব রকমের পথই তারা বেছে নিতে পারে।
বাস্তব এই যে, ধর্ষণ করা ঠিক হবে কি না মনের মধ্যে এই রকম দ্বিধা জন্মানোর ব্যাপারটা বেশির ভাগ ধর্ষকের মধ্যে দেখা যায় না। তার কারণ, ছাত্রবেলা থেকে এ বিষয়ে তারা কোনও নীতিশিক্ষা পায় না। তাদের অভিভাবকেরা, যেমন বাবা মা কাকা জ্যাঠা, পাড়ার পরিচিত বয়স্করা, এমনকী শিক্ষকরাও এ বিষয়ে তাদের কিছু বলতে ইতস্তত করেন। তাঁরা এখনও বুঝে উঠতে পারেন না বিষয়টা ছেলেমেয়েদের কাছে ঠিক কোথা থেকে কী ভাবে শুরু করতে হবে, কোথায় শেষ করতে হবে। কিন্তু আমার মনে হয়, সব দ্বিধা সরিয়ে এ বিষয়ে ছোটদের সব কিছু ঠিক ভাবে জানানোর সময় এসে গেছে।
ধর্ষণের ব্যাপারে রাজনীতি ও প্রশাসনের লোকেদের দায়ী করা ঠিক নয়, যদি না তাঁরা কোনও ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়ার কারণে ধর্ষণ সংঘটিত হয়। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য অমাত্য ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি করতে বারণ করেছেন। তাঁর সঙ্গে আমি একমত। সুকান্তবাবু যে মেয়েটির কথা লিখেছেন তাকে ধর্ষণ ও তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনীতি শুরু করেছে কিছু বিরোধী রাজনৈতিক দল। তার পর সমস্ত ব্যাপারটা জটিল হয়ে ওঠে। কে কাকে কখন ধর্ষণ করবে সে ব্যাপারে তৎপর থাকা কোনও সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
ধর্ষণ কেন বাড়ছে, কী ভাবে তা কমানো সম্ভব, সে বিষয়ে যদি সামাজিক আন্দোলন হয়, সেমিনার হয়, ওয়ার্কশপ হয়, মানুষকে বোঝানোর কর্মসূচি নেওয়া হয় তা হলে সেটাই সবচেয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ও কার্যকর পদক্ষেপ হবে বলে আমার মনে হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.